মাঠের ভিতরে ঢুকতেই পারলো না ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট!

আইকোনিক ফোকাস ডেস্ক: এই সপ্তাহ থেকেই ব্রাজিলে ক্লাবগুলো স্টেডিয়ামে সমর্থকদের ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু করোনার এই সময়ে কোনো নিয়মের বালাই ছাড়া দর্শকদের ঢুকতে দেওয়া মানে তো দায়িত্বহীনতা। সেই যে গত বছরের মার্চে সব বন্ধ হলো, এরপর ফুটবল মাঠে ফিরলেও দর্শক এত দিন ফেরেনি ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো নিয়ম না মানায় তাঁকে মাঠে ঢোকার অনুমতি দেয়নি পেলে-নেইমারদের সাবেক ক্লাবটি। বলসোনারোর অপরাধ, তিনি টিকা নেননি!

জইর বলসোনারো অবশ্য করোনার শুরু থেকেই উল্টোপাল্টা আচরণের জন্য সমালোচিত ছিলেন। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মানা থেকে শুরু করে করোনা সংক্রমণ রোধে বিশ্বজুড়ে পালিত সব নিয়মকে প্রকাশ্যে উপেক্ষা করেছেন।

অথচ ব্রাজিলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ার পেছনে তাঁর বেপরোয়া মানসিকতাকে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখা হয়। এ নিয়ে বলসোনারোর সমালোচনাও হয়েছে বেশ।

ব্রাজিল

সেই বলসোনারো এবার করোনা–সংক্রান্ত নিয়ম উপেক্ষা করে লজ্জার মুখে পড়লেন। গতকাল রোববার ব্রাজিলিয়ান লিগে সান্তোসের মাঠে সান্তোস-গ্রেমিওর ম্যাচ ছিল। এ ম্যাচ দিয়েই করোনাকালে প্রথমবার দর্শকদের মাঠে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে ম্যাচটা নিয়ে বাড়তি রোমাঞ্চ ছিলই দুই ক্লাবের সমর্থকদের। কিন্তু উত্তেজনার বশে যাতে ম্যাচটা করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্র না হয়ে যায়, সেটি নিশ্চিত করতে কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল স্বাগতিক সান্তোস ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম বলতে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি নজরে আসা কথাটাই বারবার বলে দিয়েছে সান্তোস। সেটি হলো যাঁরা এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন, শুধু তাঁরাই ম্যাচটা দেখতে স্টেডিয়ামে ঢোকার অনুমতি পাবেন। আর এই নিয়মেই আটকা পড়ে গেছেন বলসোনারো। তাঁর সঙ্গে টিকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ ছিল না।

 

 

 

কিন্তু টিকা নেওয়ার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও স্টেডিয়ামে ঢুকতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। ব্রাজিলিয়ান ওয়েবসাইট মেত্রোপোলসে টিকার সনদের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন আমাকে কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে, টিকার পাসপোর্ট রাখতে হবে?’

টিকা নেওয়া মানুষের চেয়েও তাঁর শরীরে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি বেশি আছে দাবি করে বলসোনারো এরপর বলেন, ‘আমি শুধু সান্তোসের একটা ম্যাচই দেখতে চেয়েছি, সে জন্য বলা হলো আমাকে টিকা নিতে হবে। কেন? যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের চেয়েও আমার শরীরে অ্যান্টিবডি বেশি আছে!’

করোনার সময় জইর বলসোনারোকে ঘিরে চলা একের পর এক সমালোচনা বাড়তি মাত্রা পেল আরকি!

এর আগে মাস্ক না পরার দায়ে জরিমানা গুনেছিলেন বলসোনারো। তাঁর টিকাবিরোধী, সামাজিক দূরত্ববিরোধী অনেক বক্তব্য তো বিভিন্ন সময় সমালোচনা কুড়িয়েছে, প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তাঁর দায়িত্ববোধ নিয়ে। নিজে তো টিকা নেনইনি, অন্যদেরও তাঁকে অনুসরণ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন বলসোনারো!

গত জুনে ব্রাজিলে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও কোপা আমেরিকা আয়োজন করে আরও বেশি সমালোচনা কুড়িয়েছেন বলসোনারো। টুর্নামেন্টটা অবশ্য দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই হয়েছে।

এর মধ্যে নতুন এই কাণ্ড বলসোনারো এমন এক সময় করলেন, যখন পরশুই খবর এসেছে, এ নিয়ে ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে!

সান্তোসের মুখপাত্র অবশ্য সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের দিক থেকে কেউই ক্লাবের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি। পাশাপাশি সব সমর্থককে করোনা–সংক্রান্ত নিয়মকানুন ঠিকভাবে মেনে চলার কথাও আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে সান্তোস।

Leave a Reply

Translate »