সময়ের সব থেকে চাহিদা সম্পূর্ণ চাকুরীর তালিকা

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ আসছে নতুন বছর ২০২৪ সাল সমাগত। এই সময়ে নতুন রূপ পাবে আমাদের ক্যারিয়ার। আমরা সবাই চাইব, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেতন বাড়ুক। পুরনো বছরের তুলনায় যেন বেতন বৃদ্ধি পায় সেই ইচ্ছাই থাকবে সবার, যাতে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকা যায়। তাছাড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন পাওয়াটাই সবার কাম্য। সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।আগামী বছরে যে ১০ পেশাজীবির চাকরি থেকে তুলনামূলক বেশি আয় হবে।

সময়ের সব থেকে চাহিদা সম্পূর্ণ চাকুরীর তালিকা :

স্বাস্থ্যসেবা

তালিকার প্রথমেই রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাত। এই খাতের চিকিৎসক, সার্জন, নার্স, অ্যানেসথেটিস্ট, ফার্মাসিস্ট পেশার কর্মীরা বরাবরের মতো ২০২৪ সালেও বেতনের শীর্ষ দশে থাকছেন। এই খাতে নিয়োগ দেওয়ার হারও বেড়েছে। বাড়ছে জনবল। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোয় পেশাজীবিদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে আগামী বছর, এমনকি পরের বছরগুলোয়ও তারা চাহিদার শীর্ষে থাকছেন, যে কারণে বৃদ্ধি পাবে তাদের বেতন।

তথ্যপ্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব যেমন বাড়ছে, বেতনও। সাইবার সিকিউরিটি, সফটও্যয়ার ডেভেলপমেন্ট, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডেটা প্রকৌশলী, ডেটা সায়েন্টিস্ট, তথ্য নিরাপত্তা প্রকৌশলী, ফুল-স্ট্যাক প্রকৌশলী, মেশিন লার্নিং প্রকৌশলী, ব্যাকএন্ড প্রকৌশলী, সেলসফোর্স প্রকৌশলী, অটোমেশন প্রকৌশলী, জাভা ডেভেলপার ইত্যাদি পেশার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকছে প্রতিযোগিতামূলক উচ্চ বেতন। তাই অনেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছেন। দেশে বিদেশে তাদের বেশ চাহিদা রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে আকর্ষনীয় বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

আর্থিক খাত

আর্থিক খাতের পেশাগুলোয় বেতন সবসময়ই শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে বিনিয়োগ ব্যাংক, বীমা, বিনিয়োগ, আর্থিক বিশ্লেষন এবং হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপনায় যারা চাকরি করেন তাদের জন্য সুখবর—আগামী বছর তাদের বেতন বাড়ছে। এই খাত সংশ্লিষ্ট পেশার মধ্যে রয়েছে—আর্থিক পরিকল্পনা, হিসাবরক্ষণ, আর্থিক পরামর্শ, বিনিয়োগ বিশ্লেষণ ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক খাতের পেশাগুলো ভীষণ সম্ভাবনাময়। পেশা বা আয়ের বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, আর্থিক খাতটি আকর্ষনীয়। এই খাতটি নতুন সুযোগের উন্মোচনকারী এবং স্বচ্ছল জীবনের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।

প্রসঙ্গত উন্নত বিশ্বে ‘হেজ ফান্ড’ খুবই জনপ্রিয়। সেসব দেশে সুদের হার কম হওয়ায় ব্যাংকে টাকা রেখে মানুষের টাকা বাড়ে না বললে চলে। সে জন্য অনেকে ব্যাংকে পুরো টাকা না রেখে, তার একটি অংশ হেজ ফান্ডে বিনিয়োগ করেন। এই ধরনের ফান্ড হচ্ছে এক ধরনের বিকল্প বিনিয়োগ পদ্ধতি, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাহকদের বিনিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ মুনাফা এনে দেওয়া। গ্রাহকদের বিনিয়োগকৃত মোট অর্থকে এমনভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করা হয়, যাতে স্বল্পতম সময়ে দ্রুত মুনাফা অর্জন করা যায়।

প্রকৌশল

প্রকৌশল খাতের সব পেশাই আকর্ষনীয় এবং সম্মানের। সেফটিপিন থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি, যান্ত্রিক পরিসেবা, অবকাঠামো, শিল্প ইত্যাদি প্রকৌশলীদেরই সৃষ্টি। তারা মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলার মহৎ কাজগুলো করে থাকে। তবে এই খাতের বিশেষ কিছু পেশা যেমন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং—প্রায় প্রতি বছরই বেতনের শীর্ষে থাকে। আগামী বছরেও এই ধারা বহাল থাকছে। একটি দেশের উন্নতিতে তাদের বিশেষ অবদান রয়েছে।

আইন

আইন একটি সম্মানজনক, বুদ্ধিদীপ্ত পেশা। একই সঙ্গে এলিট ও রয়্যালও বটে। আইনজীবিদের মধ্যে যারা করপোরেট আইন কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইন পেশায় জড়িত কর্মীরা সবসময়ই মোটা অঙ্কের বেতন পেয়ে থাকেন। অন্যরাও কম যান না। এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে পারলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রাকটিস চালিয়ে যেতে পারবেন, ভালো আয় করার সুযোগও পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, যত আত্মনির্ভরকেন্দ্রিক পেশা রয়েছে, তার মধ্যে আইন একটি।

ম্যানেজমেন্ট

শীর্ষ নির্বাহীরা যাদের মধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অন্যতম। তারা নি:সন্দেহে অন্যদের তুলনায় বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। তাদের অন্যান্য ভাতাদিও অতুলনীয়। চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট লেনসা ২০২১ সালে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সিইওরা তাঁদের অধস্তনদের তুলনায় বছরে গড়ে ১২ লাখ ৮০ ডলার বেশি বেতন পান। দেশটির থিংকট্যাংক (চিন্তন প্রতিষ্ঠান) ইকোনমিক পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআই) জানিয়েছিল, ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সিইওদের বেতন বেড়েছে ১ হাজার ৩২২ শতাংশ, অথচ কর্মীদের বেলায় যা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। অন্যান্য দেশের অবস্থা কমবেশি একই। সিইওরাই প্রকৃত বস, যাদের নির্দেশনাতেই চলে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

ডেটা সায়েন্স ও অ্যানালিটিকস

ডেটা বিজ্ঞানী, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, এআই বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি পেশাজীবিরা আয়ের দিকে ওপরের দিকেই থাকবেন। কেননা ডেটাকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিচ্ছে সংস্থাগুলো। এসব পেশা বিশেষায়িত। এই খাতের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মাইনেও আহামরি টাইপের।

জ্বালানি

জ্বালানি খাতের চাকরি, যেমন পেট্রোলিয়াম জিওলজিস্ট (ভূ-তত্ত্ববিদ), প্রকৌশলী, জ্বালানি পরামর্শকদের বেতন থাকছে নজরকাড়া। জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কর্মীদেরও। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ২০২১ সালেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিশ্বে ১০ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০ কোটি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ জ্বালানি খাতে অনেক কাজের চাহিদা শেষ হয়ে যাবে, আবার নতুন কাজের ক্ষেত্র গড়ে উঠবে। চলতি বছরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানায়, আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক পাওয়ার প্লান্টে ২০৩০ সাল নাগাদ ১৩ হাজার ৭৭৮টি কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক পাওয়ার প্লান্টে ১৬ হাজার ৬৬৩ কর্মসংস্থান হবে। শক্তি রূপান্তরের ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ ৮ হাজার ৯১৯ কর্মসংস্থান হবে। এ খাতসংশ্লিষ্টরা সঙ্গত কারণে চাহিদামতো বেতন-ভাতাদিও পাবেন।

অ্যাভিয়েশন

পাইলট, এয়ার ক্রু, এয়ার হোস্টেস, টিকেটিং, প্যাসেঞ্জার সার্ভিস, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, এয়ারক্রাফট সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি, কাস্টমার রিলেশন, গ্রুমিং, এয়ারলাইন্স কার্গো ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ও সেলস, এয়ারপোর্ট অপারেশন, এয়ারক্রাফট লিজিং, বোর্ডিং কন্ট্রোল ইত্যাদি পেশার কর্মীরা অ্যাভিয়েশন খাতের সঙ্গে জড়িত। তারা বরাবরই আকর্ষনীয় বেতন পেয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে যারা, বৃহৎ এয়ারলাইন্সে চাকরি করেন, তারা ২০২৪ সালে যথেষ্ট বেতনভাতা পাবেন। তাদের পেশা বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বে আভ্যন্তরীন উড়োজাহাজ পরিসেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই খাতের কর্মীদের দুরবস্থা চললেও ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা।

ফার্মাসিউটিক্যালস

ফার্মাসিউটিক্যালের গবেষক এবং উন্নয়ন পেশাজীবিরাও আকর্ষনীয় বেতনের অধিকারী। বলা যায়, সেরা বেতনের চাকরিগুলোর একটি এই খাত। নতুন বছরেও তাদের বেতন শীর্ষের দিকে থাকবে। উজ্জ্বল পেশা এটি। আগ্রহ ও মেধা থাকলে সহজে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায়।

এখানে যে চাকরিগুলোর কথা বলা হয়েছে, তার চাহিদা শুধু ২০২৪ সালে নয়, দীর্ঘদিন শীর্ষেই থাকবে। তবে এই তালিকার চাকরিগুলোই শুধু নয়, আরও অনেক চাকরির বেতনও বাড়বে।

Leave a Reply

Translate »