ঘুরে আসুন নিকলী হাওর

বাংলাদেশে অসংখ্য পর্যটন এলাকা রয়েছে, যার মধ্যে কিশোরগঞ্জের হাওরগুলো প্রকৃতির এক অসাধারণ রহস্য। কিশোরগঞ্জের বড় হাওরগুলো ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায়। হাওরবেষ্টিত এ জনপদে থইথই পানি থাকে প্রায় ছয় মাস।

সারা বছর হাওরের সৌন্দর্য অটুট থাকলেও মূলত বর্ষাকালই ভ্রমণপিপাসুদের মূল আকর্ষণ। হাওরে দেশের প্রকৃতিপ্রেমিকদের ভিড় হয় বর্ষায়। বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রাম। যেন একেকটা ছোট ছোট দ্বীপ। হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি বা পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন কিংবা হাওরের মাঝ দিয়ে নৌকার ছুটে চলা মুহূর্তেই আপনার মন ভালো করে দেবে।

কিশোরগঞ্জ হাওর সত্যিই অপরুপ। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা অটোয় যেতে হয় চামড়া বন্দর। চামড়া বন্দর থেকে নৌকায় বা স্পিডবোটে ইটনা, মিঠামইন কিংবা অষ্টগ্রাম যাওয়া যায়।

ভ্রমণের জন্য কিশোরগঞ্জের বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানে দর্শনার্থীদের ভিড় হয়। এর মধ্যে নিকলী বেড়িবাঁধ, ছাতিরচরের অর্ধডুবন্ত করচের বন, করিমগঞ্জের বালিখলা, মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়ি, ইটনা, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক। এ ছাড়া ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবিজড়িত মন্দির, দিল্লির আখড়া, ঈসা খাঁর দুর্গসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা।

ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের কাছে নিকলীর কিছু তথ্য যা না জানলেই নয়:-

হাতের কাছে নতুন আরেক রাতারগুল

হাওরে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। সারিবদ্ধভাবে সাজানো সুবজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা নতুন আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ ঘণ্টা ঘুরলে মোটামুটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।

নৌকা ভাড়া

সাধারণত এক ঘণ্টার জন্য ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা নেয়। আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য নিতে পারেন প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টাকার মতো করে। অবশ্যই ভাড়া দামাদামি করে নিবেন। এতে আরও কমতে পারে। নৌকাগুলো বেশ বড়সড়ও হয়। ১৫-২০ জন অনায়াসে নাচানাচি করে ঘুরে আসতে পারবেন। নৌকার সাইজ অনুযায়ী ভাড়া খুব একটা কমবেশি হয় না বললেই চলে।

নিকলীতে খাবারের ব্যবস্থা

নিকলীতে ভালো মানের খুব বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই তবে আস্তে আস্তে গড়ে উঠা শুরু করেছে ভালো মানের হোটেল। বাজারে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে দর্শনার্থীর। দুপুরে হাওরের মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা। দাম তুলনামূলক সস্তা। এখানকার খাবারের হোটেলগুলো মাঝারি মানের। ২০০-২৫০ টাকায় খাওয়া যায় জনপ্রতি।

হাওরের নিকলী কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চার ঘণ্টার দূরত্বে নয়নাভিরাম সব দৃশ্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে কিশোরগঞ্জে। মহাখালী থেকে অনন্যা, সায়েদাবাদ থেকে অনন্যা সুপার বাসে করে কিশোরগঞ্জ আসা যাবে। শুধু নিকলী হাওর ভ্রমণের জন্য নামতে হবে কটিয়াদী অথবা পুলেরঘাট বাজার। সেখান থেকে অতি সহজে বাইকে বা ইজিবাইকে নিকলী ভ্রমণ করা যাবে।

ট্রেনে আসতে চাইলে এগারসিন্দুর প্রভাতী বা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস করে আসতে হবে। নিকলী ভ্রমণের জন্য ট্রেনে কিশোরগঞ্জ স্টেশনের পূর্বে গচিহাটা নেমে ইজিবাইকে যাওয়া যাবে নিকলী। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের জন্য আসতে হবে কিশোরগঞ্জ। সেখান থেকে চামড়া বন্দর হয়ে যাওয়া যাবে নিদিষ্ট গন্তব্যে। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য স্থান থেকে আগত পর্যটকেরাও কিশোরগঞ্জ হয়ে উল্লেখিত উপায়ে হাওরে ভ্রমণ করতে পারবেন।

হাওরগুলোয় থাকার জন্য ভালো হোটেল রেস্টুরেন্ট না থাকলেও মোটামুটি মানের খাবার পাওয়া যায়। রাতে থাকার জন্য হাওরের তুলনায় কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের হোটেল পাওয়া যাবে। হাওরের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দু-তিন দিন সময় নিয়ে বের হওয়াই উত্তম এবং যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে মাথায় রাখতে হবে বাড়তি সতর্কতা।

নিকলীর বেড়িবাঁধে পর্যটকদের কেন্দ্র করে ছোট-বড় দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ছোট ছোট নৌকার পাশাপাশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আছে। এগুলো ভাড়া নিয়ে হাওরে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো যায়। ছোট নৌকা ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা। বড় নৌকার ক্ষেত্রে গুনতে হবে ১২০০-৩০০০ টাকা।

নৌকা ভাড়া নিয়ে দূরের উপজেলা বিশেষ করে অষ্টগ্রাম বা মিঠামইন যাওয়া যায়। এছাড়া নিকলী বেড়িবাঁধে রয়েছে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। এসব বাহন ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া করে আশেপাশে ঘোরা যায়।

Leave a Reply

Translate »