আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সবাই আতঙ্কে থাকলেও অনেকেই জানেন না, এ জ্বরে ভুগলে ঠিক কখন কোন কোন টেস্ট করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। টেস্টের সময় সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায় পরিবারের প্রিয় সদস্যটিকে যেন অকালেই মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যেতে না হয় তাই ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনে নেয়া উচিত।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যেটা এডিস মশার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ৪-১০ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরে জটিলতাবেশি হয়ে থাকে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের-ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক। তবে বেশি তীব্র হলে সেটাকে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ বলে। সাধারণত ডেঙ্গু হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়:
• ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত প্রচণ্ড জ্বর এবং সেই সাথে হাড় ও শরীর ব্যথা থাকে।
• তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। সেই সাথে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দিয়ে আবার জ্বর আসতে পারে।
• মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
• জ্বর হওয়ার ৪-৫ দিন পর শরীরে লালচে র্যাশ দেখা যায়।
• বার বার গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং অত্যাধিক পানি পিপাসা।
• খাবারে অরুচি এবং এর সাথে বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, মাঝে মাঝে খিচুনিও হতে পারে।
• অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ এর মাঝে মাঝে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
• পানি আসার কারণে অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে অনেক রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, বুকে পেটে পানি আসে, যকৃত আক্রান্ত হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
জ্বর হওয়ার কতদিনের মধ্যে কোন টেস্ট করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে?
স্বাভাবিক জ্বর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের পার্থক্য টানতে চিকিৎসকরা শুধু শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠা লক্ষণগুলোতেই নজর দেন না। কারণ অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে লক্ষণ স্পষ্ট হয় না। তাই ডেঙ্গু নির্ণয়ে কিছু টেস্ট করাতে দেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হলো এনএসওয়ান। এই টেস্ট জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই করলে টেস্টের রেজাল্ট ভুল আসে। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, টেস্টের রিপোর্ট যাতে শতভাগ নির্ভুলের জন্য জ্বরের ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে এ টেস্ট করতে হবে।
আবার ৪দিন ডেঙ্গু জ্বর পেরিয়ে গেলে এ পরিস্থিতিতে রোগীর এনএসওয়ান টেস্ট করা যাবে না। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বরের ৪ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এনএসওয়ান টেস্ট ভুল আসে।
আরও পড়ুন:শরীরের ব্যথা কমাবে আদা
তাই রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে করতে হবে আইজিজি ও আইজিএম। এ দুই টেস্টের মধ্যে রোগী আইজিজি টেস্ট না করলেও চলবে। তবে আইজিএম টেস্ট অবশ্যই করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইজিএম টেস্টেই ধরা পড়ে রোগীর ডেঙ্গু জ্বর।
আরও পড়ুন: জানেন এই গরমে সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম কী?
টেস্টে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে উদ্বিগ্ন না হয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল খাবার ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল অথবা নাপা খেতে দিন। ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে গেলে তা ভয়ের কারণ নয়। খেয়াল রাখুন, রক্তের প্লাটিলেট ১০,০০০ এর নিচে নেমে গেলে এবং সেই সঙ্গে রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর সেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।