১৩২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় দীর্ঘ ১৮ মাস পর ১৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রস্ততি শেষের পথে। সরকার ঘোষিত তারিখেই আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এক যোগে এ সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খোলা হবে। উপজেলার প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠবে শিক্ষাঙ্গন।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি ইফতেদায়ী মাদ্রাসা ও ৩টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে স্কুল বন্ধের পূর্বের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৫ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কক্ষগুলোর মেঝে ও দেয়াল স্যাঁতসেঁতে ও নোনা লেগে পলেস্তার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের চত্তরে ময়লা ও আবর্জনা জমে গিয়েছিল। তবে প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ ঘোষণার পর এগুলো ঠিক করা হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববাবধানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে শিক্ষা অফিস নিশ্চিত করেছেন। উপজেলার ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬টি দাখিল মদ্রাসা, ২টি আলিম আলিয়া মাদ্রাসা, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা ও ৬টি কলেজে ১৭ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদারভাবে চলছে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার নন্দী বলেন, ইতোমধ্যে স্কুলের আঙিনা, মেঝে, শ্রেণিকক্ষ, টয়লেট, বেসিন ইত্যাদি পরিস্কার করা হয়েছে। যে সকল স্কুলে বেসিন সুবিধা নেই সেখানে ড্রামে ট্যাপ লাগিয়ে সাবান পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লখপুর ইউনিয়নের কাহার ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা নারগিস বলেন, আমার স্কুলে ৪১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫৫ জন শিক্ষার্থী স্কুলে আসবে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বর্তমানে স্কুলে না আসার জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির নিয়মিত ক্লাস হবে এবং অন্য শ্রেণিগুলো পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে একদিন পাঠদান হবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২টি করে কাপড়ের তৈরী মাস্ক দেওয়া হবে। এছাড়াও থার্মাল মেশিনে তাপমাত্রা মেপে ক্লাসে এক বেঞ্চে দু’জন করে বসানো হবে।

আট্টাকা কে আলী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার মজুমদার বলেন, আমার বিদ্যালয় পরিস্কার করার পর জীবানুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। আবার ১১ সেপ্টেম্বর জীবানুনাশক স্প্রে করা হবে। স্কুল খোলার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

ভবনা ইসলামিয়া দালিখ মাদ্রাসার সুপার মো. আজিজুর রহমান বলেন, সরকারী নির্দেশনা মতো আমরা মাদ্রাসা পরিচ্ছন্ন করেছি। কাজি আজহার আলি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুরজাহান ইসলাম ঋতু বলেন, গত বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিন পরেই কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। খুব ভালো লাগছে কলেজ খুলবে শুনে। ফকিরহাট মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিহার সাথে কথা হলে সে জানায়, সে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলা করবে। আগের ড্রেস ছোট হয়ে যাওয়ায় স্কুলে যাওয়ার জন্য নতুন স্কুল ড্রেস পবে বলে খুশিতে আত্মহারা সে। হাজি আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দিনমজুর বাবা বলেন, ‘স্কুল খুলবে শুনে খুব ভালো লাগছে। আমার সন্তান আবার স্কুলে যাবে। কিন্তু সাথে সাথে পাহাড় সমান ভয় মাথায় চেপে বসেছে। ঠিক মতো সংসার চালাতে পারি না। কিন্তু স্কুল থেকে ইতোমধ্যে পিছনের এক বছরের সকল পাওনা পরিশোধ করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে। যদি কিছুটা টিউশন ফি মওকুফ না করে তাহলে আর সন্তানের লেখাপড়া করা হবে না ভেবে শঙ্কায় আছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার বিশ্বাস বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ১৯ দফা নির্দেশনা পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে বাস্তবায়ন করার জন্য দিয়েছি। তারা পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছে।

Leave a Reply

Translate »