নিত্যপণ্যের বাজারদর হু হু করে বাড়ছে

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ লাগামছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারদর প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে । চড়া মূল্যের এ বাজারে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা। চলতি সপ্তাহে বেড়েছে সবজির দাম। সবচেয়ে কম দামে যে সবজি বিক্রি হচ্ছে সেটিও ৪০ টাকায়। সংসার কি করে চলবে, সে ভাবনাও ভাবতে হচ্ছে তাদের।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের বর্তমান বাজারদর সম্পর্কে জানা গেছে। কথা হয়েছে বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বেশিভাগ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইজাম ও বিআর-২৮ চাল এখন মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে ছিল।

কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনদিন আগে বিআর-২৮ চাল কিনেছেন প্রতি কেজি ৫২ টাকা দরে। এখন ৫৫ টাকা। স্বর্ণা চালের সরবরাহ না থাকায় প্রভাব পড়েছে অন্যান্য মোটা চালের দামে। বেড়েছে পাইজামের দামও। সরু চালের বাজারদর বাড়েনি। এখন মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও এক-ই ছিল।

আরো পড়ুনঃলিটন কি তাহলে ফিরছেন?

অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই ডালের কেজি এখন ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় উঠেছে। আর ভালো মানের, অর্থাৎ সরু দানার মসুর ডালের কেজি পড়ছে এখন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে এই ডালের খুচরা দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি।

মুদি দোকানি আরমান বলেন, মসুর ডালের বাজারদর এখন কিছুটা বাড়তি। প্রতি বছর বর্ষায় ডালের চাহিদা বাড়ে। সে তুলনায় যোগান কম থাকায় দাম বাড়ছে।

মাছের বাজারে দেখা যায়, গরিবের মাছ পাঙাস (বড় সাইজের) বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। ছোট আকারের পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এছাড়া ইলিশ মাছ কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৫০ টাকা, ট্যাংরা মাছ ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে আগের মতোই আছে মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ৩৮০ টাকায়, সোনালী মুরগি ৩৫০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৮০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে সবজির। এসব বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে। লম্বা বেগুন ১১০; গোল বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করল্লা ১০০; গাজর ১৫০-১৮০; টমেটো ১২০; বরবটি ১০০; কচুরমুখী ১০০; কাঁচা মরিচ ২০০; ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কেজি প্রতি ৬০ টাকার উপরে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে শসা ৬০-৭০; পটল ৬০-৮০; কাঁকরোল ৮০; মূলা ৬০; ধুন্দল ৮০; ঢেঁড়স ৮০; চিচিঙ্গা ৬০ টাকা। লাউ ৮০; চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

সবচেয়ে কম দামে যে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে সেটি পেঁপে-৪০ টাকা। মিষ্টি কুমড়াও বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে সবজির বাজারদর বাড়ছে। উৎপাদন কমে যাওয়া, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি সবজির দাম বাড়ার কারণ।

শান্তিনগরে বাজার করতে আসা ইসরাত জাহান বলেন, সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের বাজেট নষ্ট হচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে টিকে থাকাটাই মুশকিল হবে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলা এই সবজির বাজারের লাগাম টানবে কে? সরকারের উচিত সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। আগে এক থেকে দেড়শ টাকার সবজি কিনলে কমপক্ষে দুদিন রান্না করা যেত। আর এখন এই টাকায় ভালো করে দুইবেলা খাওয়ার জন্য সবজি পাওয়া যায় না।

বাজারদর কেন বাড়ছে জানই চাইলে খিলগাঁও রেলগেট বাজারের সবজি বিক্রেতা বেলাল বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। আড়ৎ থেকে দাম বাড়ায়। আমরা যে দামে কিনি, অল্প কিছু লাভে বিক্রি করি। আমরা তো আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করি না। সবকিছুর দাম তো বাড়ছে, তাও তো মানুষ কিনছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বাজারদরেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও, দেশে আমদানি নির্ভরতার কারণেও সবজির দাম বাড়ছে।

Leave a Reply

Translate »