চ্যাটজিপিটি আসার পর আয় কমছে অনেকেরই

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ চ্যাটজিপিটি কীভাবে মানুষের কাজ নিয়ে নিতে পারে, তার এক নজির পাওয়া গেছে। ২২ বছর বয়সী কলকাতার এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তি চ্যাটজিপিটি আসার পর কীভাবে তাঁর আয়-রোজগার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

কলকাতার সেই ছাত্রীর নাম স্বর্ণা ভট্টাচার্য। তাঁর আয় কমে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে নিউইয়র্ক পোস্ট। সেই সূত্রে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদে বলা হয়েছে, স্বর্ণা ভট্টাচার্য একসময় কপিরাইটার ও ঘোস্ট রাইটার (আরেকজনের হয়ে লিখে দেওয়া) হিসেবে কাজ করতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করতেন তিনি। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের জন্য নিবন্ধ লিখে তিনি মাসে ২৪০ ডলারের বেশি বা ২০ হাজার রুপি আয় করতেন। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে চ্যাটজিপিটি আসার পর চিত্রপট পাল্টে যেতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন স্বর্ণা।

নিউইয়র্ক পোস্টকে স্বর্ণা জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে তাঁর কাজ একেবারে কমে মাসে একটি বা দুটি নিবন্ধে নেমে আসে। কোম্পানি এর কোনো কারণও জানায়নি। তাঁর দাবি, যে ফার্ম তাঁকে কাজ দিত, তারা এআইয়ের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই স্বর্ণার ঘোরতর সন্দেহ, চ্যাটজিপিটির আগমনের কারণে তাঁর কাজ কমে গেছে।

আরো পড়ুনঃহোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও বার্তা পাঠানোর প্রক্রিয়া

চ্যাটজিপিটি আসার পর স্বর্ণার আয়–রোজগার প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে। এতে শুধু তিনি নন, পরিবারও বিপদে পড়ে গেছে।

স্বর্ণার ৪৫ বছর বয়সী মা কলকাতায় শাড়ি বিক্রি করেন। ফলে মাসে ২৪০ ডলারের সমপরিমাণ আয় তাঁর ও পরিবারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আয় কমে গেলে যা করতে হয়, এখন স্বর্ণাকে ঠিক তাই তাই করতে হচ্ছে, অর্থাৎ খরচ কমাতে হচ্ছে। খুবই রূঢ় বাস্তবতার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের।

স্বর্ণা বলেন, ‘এখন প্রতিদিন আমরা কী খাচ্ছি তার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। যা যা করতে ভালোবাসতাম সেগুলো আর করি না, যেমন বাইরে খেতে যাওয়া; এখন কয়েক মাস অন্তর একবার যেতে পারি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় ব্যয় করতে পারব কি না, এখন কেবল সেই খেয়াল রাখি, যেমন খাদ্য ও পরিষেবা মাশুল। অর্থাৎ খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা।’

স্বর্ণা জানান, এখন তিনি বেকারত্বের দ্বারপ্রান্তে, ফলে জীবন ‘অত্যন্ত অনিশ্চিত’। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর আয়–রোজগারের পথ ছিল ফ্রিল্যান্স নিবন্ধ লেখা। ফলে কাজ কমে যাওয়ার কারণে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ‘আমি উদ্বিগ্ন, মনে হচ্ছে সব হারিয়ে ফেলেছি, আতঙ্ক গ্রাস করছে; গত কয়েকটা মাস আমার একেবারেই ভালো যায়নি’, বলেন তিনি।

নিজের জীবনের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি স্বর্ণা এআই ও মানুষের কাজের ধরন এবং পার্থক্য নিয়েও কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্য, মানুষের কাজ ও এআই দ্বারা তৈরি কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা ভেবে দেখতে কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

স্বর্ণা আরও বলেন, ‘ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ভালোমানের কপিরাইটার চ্যাটজিপিটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আশা করি, মানুষ নিজের কাজের মধ্যে এআইকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। তখন তারা একত্রে কাজ করবে, কাজের মানও উন্নত হবে’।

চ্যাটজিপিটি বা এআইভিত্তিক চ্যাটবটের কারণে কপিরাইটারসহ আরও বিভিন্ন খাতের পেশাজীবীরা হুমকির মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সেই খাতগুলো হলো—প্রযুক্তিনির্ভর চাকরি, গণমাধ্যম-বিজ্ঞাপন, নিবন্ধ, সাংবাদিকতা, কনটেন্ট তৈরি, আইন পেশা, বাজার গবেষণা বিশ্লেষণ, শিক্ষকতা, আর্থিক খাতের চাকরি, পুঁজিবাজারের কাজ, গ্রাফিক ডিজাইন, হিসাবরক্ষণ, গ্রাহকসেবা ইত্যাদি।

তবে এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। এখন এআই প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলছেন, এর ব্যবহার সীমিত করতে হবে, তা নাহলে মানবসভ্যতার অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তে পারে।

Leave a Reply

Translate »