হালাল উপার্জন ও হালাল খাওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃমানুষ আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়মে মানুষকে জীবন পরিচালনা করতে হয়। যে পথে নবী-রসুল, পীর-আউলিয়ারা জীবন অতিবাহিত করেছেন। মানুষ হালাল তথা বৈধ উপার্জনের ওপর নির্ভর করবে, হারাম তথা অবৈধ উপার্জন বর্জন করবে। হালাল উপার্জন করা মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদতের ওপরই নির্ভর করে ইবাদত কবুল হওয়া না হওয়ার বিষয়। 

আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, হে রসুলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবহিত। সুরা মুমিনুন, আয়াত-৫১। 

তাহলে বোঝা যায় পবিত্র বস্তু থেকে আহার করা সৎকর্ম করার পূর্বশর্ত। শূকরের মাংস, মদ, প্রবাহিত রক্ত, মৃত জীবের মাংস হারাম তথা অবৈধ। সুদ, জুয়া, ঘুষ, ডাকাতি, জুলুম, যৌতুক, অবৈধ মজুদদারি, অবৈধ ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ওজনে কম দেওয়া, খাদ্যে ভেজাল, প্রতারণা, মিথ্যার মাধ্যমে কেনাবেচা করা ইসলামী শরিয়তে হারাম। 

আল্লাহ বলেছেন, হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কোরো না, তবে তোমাদের পরস্পর রাজি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ। সুরা নিসা, আয়াত-২৯। 

জুলুম করে কারও ধনসম্পদ আত্মসাৎ করা ইসলামে হারাম। রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে বা জুলুম করে এক বিঘত পরিমাণ জমি গ্রহণ করবে কিয়ামতের দিন তাকে সপ্ত পৃথিবীসহ সেই জমিন তার গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি ১১৬৮)।

রসুল (সা.) আরও বলেছেন, যদি কেউ কোনো মুসলিম নাগরিক বা প্রবাসীকে জুলুম করে, তাকে অপমান করে, তাকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব প্রদান করে বা তার ইচ্ছা ও আগ্রহ ছাড়া তার কাছ থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হব। (আবু দাউদ)। 

আরও পড়ুন ঃহজ্বের প্রথম ঘোষানা ও সুচনা কিভাবে শুরু হয়?

বর্তমানে বাজারে ওজনে কম দেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। সুরা মুতাফফিফিনের প্রথম আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ওআইল জাহান্নামের ভয়াবহ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে-পরিমাপে কম দেয়। 

নবীজি (সা.) বলেছেন, যখন কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ মাপে-ওজনে বা পরিমাপে কম বা ভেজাল দিতে থাকে তখন তারা দুর্ভিক্ষ, জীবনযাত্রার কাঠিন্য ও প্রশাসনের অত্যাচারের শিকার হয়। (ইবনু মাজাহ ১৩৩২)। সুদ খাওয়া ব্যক্তি জাহান্নামি। ঘুষদাতা ও গ্রহীতার পরিণতি ও জাহান্নাম। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। 

অনেকে মনে করেন অবৈধ পথে ইনকাম করে হজ করলে আর দানসদকা করলে আল্লাহতায়ালা সবই ক্ষমা করে দেবেন, বিষয়টা এত সহজ নয়। 

রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর তা দান করবে, সে এ দানের জন্য কোনো সওয়াব পাবে না এবং তার পাপের শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে। (ইবনু হিব্বান ১৫৩)। 

ইবনে আব্বাস (রা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, এক ব্যক্তি একটি প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিল, তখন সে জুলুম করে ও অবৈধ ধনসম্পদ উপার্জন করে। পরে সে তওবা করে এবং সেই সম্পদ দিয়ে হজ করে দান করে এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করে। 

তখন ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হারাম বা পাপ কখনো পাপ মোচন করে না। বরং হালাল টাকা থেকে ব্যয় করলে পাপ মোচন হয়। জামিউল উলুম ১২৭। 

আমরা জানি, আমাদের যাপিত জীবনে হালাল পথে চলাটা অনেক কষ্টের। আখেরাতের সুখের আশায় দুনিয়ার সব হারাম বর্জন ও হারাম আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করাই তো মুমিনের মিশন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে হালাল পথে জীবন পরিচালনা, হারাম বর্জন ও আল্লাহর ভয় তাকওয়া অর্জন করে দুনিয়ার শান্তি পরকালে জান্নাতুল ফেরদৌস লাভের তৌফিক দান করুন।

Leave a Reply

Translate »