হযরত হুদ আঃ এর জীবনি

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ হূদ (আঃ) ছিলেন আদ জাতির বংশধর। আদ জাতি সম্পর্কে সম্পূর্ন একটি সূরা নাযিল হয়েছে যা সূরা হুদ নামে কুর’আনে আছে।। আরেকটি সূরা যা সূরা আহকাফ সেখানেও আদ জাতির কথা উল্লেখ এসেছে।

‘আদ ও ছামূদ ছিল নূহ (আঃ)-এর পুত্র সামের বংশধর এবং নূহ আ এর পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। ইরামপুত্র ‘আদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ঊলা’ বা প্রথম ‘আদ এবং অপর পুত্রের সন্তান ছামূদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ছানী বা দ্বিতীয় ‘আদ বলে খ্যাত। ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা। সেকারণ ‘ইরাম’ কথাটি ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এজন্য কুরআনে কোথাও ‘আদ ঊলা’ (নাজম ৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম যাতিল ‘ইমাদ’ (ফজর ৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

وَأَنَّهُ أَهْلَكَ عَادًا الْأُولَىٰ

আর একথাও যে, তিনিই প্রথম আদকে  ধ্বংস করেছেন । সূরা নাজমঃ৫০

إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ

তোমার রব সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী আদে – ইরামের সাথে কি আচরণ করেছেন। সূরা ফযরঃ৭

প্রাচীন আদ জাতিকে ” আদে ইরাম ” বলার কারণ হচ্ছে এই যে , তারা সিরিয় বংশজাত আদদের সেই বংশধারার সাথে সম্পর্কিত যাদের উদ্ভব হয়েছিল নূহ আলাইহিস সালামের নাতি ও সামের ছেলে ইরাম থেকে ৷

ইতিহাসে আদদের এই শাখার আরো কয়েকটি উপশাখা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে৷ সামূদ এদের অন্যতম৷ কুরআনে এই জাতিটির উল্লেখ করা হয়েছে৷ দ্বিতীয়টি হচ্ছে আরমিয়ান ( Arameana) জাতি ৷ এরা প্রথমে সিরিয়ার উত্তর এলাকায় বসবাস করতো৷ এদের ভাষা আরামী (Aramic)৷ সিরিয়ার ভাষাগুলোর মধ্যে এই ভাষাটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে৷

আদের জন্য ‘ যাতুল ইমাদ ‘ ( সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷ কারণ তারা বড় বড় উঁচু উঁচু ইমারত তৈরি করতো৷

হযরত হূদ (আঃ) দুর্ধর্ষ ও শক্তিশালী ‘আদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে কওমে নূহ-এর পরে কওমে ‘আদ ছিল দ্বিতীয় জাতি। হজরত ইবন আব্বাস রা: ও মুকাতিল র: থেকে একটি (ইসরাইলি) বর্ণনায় রয়েছে, তাদের উচ্চতা ছিল ১৮ ফুট (১২ হাত)।

“আদ’ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি৷ আরবের সাধারণ মানুষের মখে মুখে এদের কাহিনী প্রচলিত ছিল৷ ছোট ছোট শিশুরাও তাদের নাম জানতো৷ তাদের অতীত কালের প্রতাপ-প্রতিপত্তিও গৌরব গাঁথা প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছিল৷ তারপর দুনিয়ার বুক থেকে তাদের নাম -নিশানা মুছে যাওয়াটাও প্রবাদের রূপ নিয়েছিল৷

 

YouTube player

 

আদ জাতির এ বিপুল পরিচিতির কারণেই আরবী ভাষায় প্রত্যেকটি প্রাচীন ও পুরাতন জিনিসের জন্যে ‘আদি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়৷ প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে আদিয়াত , বলা হয়৷ যে জমির মালিক বেঁচে নেই এবং চাষাবাদকারী না থাকার কারণে যে জমি অনাবাদ পড়ে থাকে তাকে ‘আদি-উল-আরদ’ বলা হয়৷ প্রাচীন আরবী কবিতায় আমরা এ জাতির নামের ব্যবহার দেখি প্রচুর পরিমাণে৷ আরবের বংশধারা বিশেষজ্ঞগণও নিজেদের দেশের বিলুপ্ত জাতিদের মধ্যে সর্বপ্রথম এ জাতিটির নামোচ্চারণ করে থাকেন৷

হাদীসে বলা হয়েছে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বনু যহল ইবনে শাইবান গোত্রের এক ব্যক্তি আসেন৷ তিনি আদ জাতির এলাকার অধিবাসী ছিলেন৷ তিনি প্রাচীনকাল থেকে তাদের এলাকার লোকদের মধ্যে আদ জাতি সম্পর্কে যেসব কিংবদন্তী চলে আসছে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনান৷

কুরআনের বর্ণনা মতে এ জাতিটির আবাসস্থল ছিল ‘আহকাফ’ এলাকা৷ এ এলাকাটি হিজায, ইয়ামন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী ‘রাবয়ুল খালী’র দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত৷ এখান থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়ামনের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাজরা মাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল৷

ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ জাতিটির নিদর্শনাবলী দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷ কিন্তু দক্ষিণ আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংস স্তুপ দেখা যায়৷ সেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়ে থাকে৷ হাজরা মাউতে এক জায়গায় হযরত হূদ আলাহিস সালামের নামে একটি কবরও পরিচিত লাভ করেছে৷ ১৮৩৭খৃস্টাব্দে James R.wellested নামক একজন ইংরেজ নৌ-সেনাপতি ‘হিসনে গুরাবে’ একটি পুরাতন ফলকের সন্ধান লাভ করেন এতে হযরত হূদ আলাইহিস সালামের উল্লেখ রয়েছে৷এ ফলকে উৎকীর্ণ লিপি থেকে পরিষ্কার জানা যায়, এটি হযরত হূদের শরীয়াতের অনুসারীদের লেখা ফলক”৷

ইবনে ইসহাকে বর্ণনা অনুসারে আদ কওমের আবাস ভুমি ওমান থেকে ইয়ামান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল৷ আর কুরআন মজীদ আমাদের বলছে, তাদের আদি বাসস্থান ছিল আল-আহক্বাফ৷ এখান থেকে বেরিয়ে তারা আশেপাশের দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং দুর্বল জাতিসমূহকে গ্রাস করে ফেলেছিলো৷ বর্তমান কাল পর্যন্তও দক্ষিণ আরবের অধিবাসীদের মধ্যে একথা ছড়িয়ে আছে যে, এ এলাকাই ছিল আদ জাতির আবাস ভূমি৷

বর্তমানে “মুকাল্লা” শহর থেকে উত্তর দিকে ১২৫ মাইল দূরত্বে হাদ্রামাউতের একটি স্থানে লোকেরা হযরত হুদের (আ) মাযার তৈরী করে রেখেছে৷ সেটি হূদের কবর নামেই বিখ্যাত৷ প্রতি বছর ১৫ই শা’বান সেখানে ‘উরস’ হয়৷ আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার লোক সেখানে সমবেত হয়৷ যদিও ঐতিহাসিকভাবে এ কবরটি হূদের কবর হিসেবে প্রমানিত নয়৷ কিন্তু সেখানে তা নির্মান করা এবং দক্ষিণ আরবের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কম করে হলেও এতটুকু অবশ্যই প্রমাণ করে যে, আঞ্চলিক ঐতিহ্য এই এলাকাকেই আদ জাতির এলাকা বলে চিহ্নিত করে৷ এছাড়া হাদ্রামাউতে এমন কতিপয় ধ্বংসাবশেষ আছে যেগুলোকে আজ পর্যন্ত স্থানীয় অধিবাসিরা আবাসভূমি বলে আখ্যায়িত করে থাকে৷

আহক্বাফ অঞ্চলের বর্তমান অবস্থা দেখে কেউ কল্পনা করতে পারে না যে, এক সময় এখানে জাঁকালো সভ্যতার অধিকারী একটি শক্তিশালী জাতি বাস করতো৷ সম্ভবত হাজার হাজার বছর পূর্বে এটা এক উর্বর অঞ্চল ছিল৷ পরে আবহাওয়ার পরিবর্তন একে মরুভুমিতে পরিণত করেছে৷ বর্তমানে এই এলাকার একটি বিশাল মরুভূমি, যার আভ্যন্তরীণ এলাকায় যাওয়ার সাহসও কারো নেই৷

দিন ও আখিরাত সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে যুক্ত হোন আমাদের ইসলামিক গ্রুপে: https://www.facebook.com/groups/455043089025257

এবং FOLLOW করুন আমাদের ইসলামিক ফেসবুক পেজ :

https://www.facebook.com/Dhaka-news-24-100804915516889/

YOUTUBE ইসলামিক ভিডিও দেখতে এখনই আমাদের ইসলামিক চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন:

https://www.youtube.com/channel/UCMmlkvR4Y4g5SVZncoo1gjA

Leave a Reply

Translate »