শিমুল বাগান দেখতে হলে যা জানতে হবে

১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে গড়ে ওঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান। নদীর অন্যপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ, আর হরেক রকমের পাখির কলকাকলি। বসন্ত এলে দুহাজার শিমুল গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফোটে বাগানের শিমুল ফুলগুলো।

চোখের তৃষ্ণা মেটাতে টাঙ্গুয়ার হাওর, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ও রূপের নদী যাদুকাটার মধ্যস্থলের বিশাল শিমুল বাগানে ফুটে ওঠা টুকটুকে লাল শিমুল ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন শত শত পর্যটক। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপাড়ে শিমুল বন। সব মিলে মিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য। অনেক সময় দুই দিনের জন্য সময় বের করা হয়ে ওঠে না, সেক্ষেত্রে চাইলে একদিনের জন্যও ঘুরে আসতে পারেন সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান থেকে।

ইতিহাস-


২০০২ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামের যাদুকাটা নদী সংলগ্ন লাউয়ের গড়ে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে শৌখিনতার বসে শিমুল গাছ রোপণের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। বাগানের সঙ্গে লেবুর বাগানও গড়ে উঠেছে।

শিমুল বাগানে যাবেন যখন-


শিমুল বাগানে যাওয়ার সময় দুটি। লাল টকটকে শিমুল ফুল দেখতে হলে ফাল্গুনে যেতে হবে। শিমুল ফুল গাছে থাকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন। তাই ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে গেলেই সেখানকার বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

আর বর্ষার সময় গেলে ঘন সবুজ শিমুল বাগান পাবেন। তবে ফুল থাকবে না। তখন টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তাই শিমুল বাগানে গেলে টাঙ্গুয়ার হাওরও ঘুরে আসতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃথানচিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

যেভাবে যাবেন-


ঢাকা থেকে প্রথমে যে কোনো বাসে চড়ে পৌঁছাতে হবে সুনামগঞ্জ। যেতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা। সুনামগঞ্জ নেমে আব্দুর জহুর ব্রিজে মোটরসাইকেল, সিএনজি, লেগুনা দাঁড়িয়ে থাকে। এক বাইকে চালকসহ ৩ জন ওঠা যাবে। যাদুকাটা নদীর সামনে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে নৌকা পার হয়ে ওপারে গেলেই বারেক টিলা। বারেক টিলা থেকে কিছু দূর গেলেই পাবেন শিমুল বাগান যাওয়ার পথ।

বিকেল পর্যন্ত বাগানে সময় কাটিয়ে যাদুকাটা নদী পার হয়ে ফিরে আসতে হবে বারেক টিলায়। সেখান থেকে সিএনজি বা মোটর সাইকেলে সুনামগঞ্জে ফিরে আসতে হবে।

অন্যান্য স্পট ঘুরতে চাইলে বাগানে সকালে গিয়ে দুপুরের মধ্যে ঘুরে আসুন। তাহলে ফেরার পথে ট্যাকেরঘাট, নীলাদ্রি লেক ও টাঙ্গুয়ার হাওরও ঘুরে আসতে পারবেন। তবে হাতে দুদিন থাকলে মোটামুটি সবগুলো স্থানেই ঘুরে দেখতে পারবেন।

থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা-


শিমুল বাগানের আশপাশে তেমন কোনো থাকার ব্যবস্থা নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুটি হোটেল আছে। তবে সুনামগঞ্জ শহরে থাকাই ভালো। বারেক টিলায় খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন।

এ ছাড়াও ট্যাকেরঘাট, বড়ছড়া, তাহিরপুর বাজারেও পাবেন খাবারের হোটেল। তবে ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে চাইলে সুনামগঞ্জে যেতে হবে।

Leave a Reply

Translate »