মহানবী (সা.)-এর জীবনে মহররম মাসের তাৎপর্য

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ইসলামের ইতিহাসে মহররম একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাস। বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এ মাসের মর্যাদা ও আমল প্রমাণিত। আবার এ মাসকে ঘিরে আমাদের সমাজে অনেক কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। তবে ইতিহাস বা সিরাত গ্রন্থের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাসুল (সা.)-এর নবুয়তি জীবনে মহররম মাসে বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়। নিম্মে তা তুলো ধরা হলো-

 

শিয়াবে আবি তালেবে সংকট : রাসুল (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। মুসলামানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। মক্কার মুশরিকরা রাসুল (সা.)-কে তাঁর দাওয়াতি কাজ থেকে বাধা দিয়েও ব্যর্থ হয়। তারা আরো দেখল, বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিবের মুসলিম-কাফির সবাই সম্মিলিতভাবে রাসুল (সা.)-কে সাহায্য করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তখন মক্কার মুশরিকরা মুহাসসাব নামক উপত্যকায় খাইফে বনি কিনানার ভেতর একত্র হয়ে বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবের সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও বিয়ে-শাদি সব কিছু বন্ধ থাকবে। এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল নবুয়তের সপ্তম বছরের মহররম মাসের শুরুতে।

 

বয়কট প্রত্যাখ্যান : বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব শিয়াবে আবি তালিবে তিন বছর কাটানোর পর নবুয়তের দশম বছর মহররম মাসে লিখিত অঙ্গীকারনামা প্রত্যাখ্যান করে ছিঁড়ে ফেলা হয়। ফলে অত্যাচার ও নিপীড়নের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং বয়কটের অবসান ঘটে। এই অঙ্গীকারনামা প্রত্যাখ্যানের পেছনে হিশাম ইবনে আমর নামক এক ব্যক্তির জোরালো ভূমিকা ছিল।

 

জু-আমর যুদ্ধ : তৃতীয় হিজরির মহররম মাসে সংঘটিত হয় জু-আমর যুদ্ধ। বদর ও উহুদ যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বাধীনে এটি সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। রাসুল (সা.)-এর কাছে খবর আসে যে বনু সালাবাহ ও বনু মুহারিব মদিনায় হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন রাসুল (সা.) মুসলমানদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। তিনি উসমান (রা.)-কে মদিনায় স্থলাভিষিক্ত করে চার শ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়েন।

 

আবদুল্লাহ ইবনে উনাইসের অভিযান : চতুর্থ হিজরির ৫ মহররম নবীজি (সা.)-এর কাছে খবর আসে যে খালিদ বিন সুফিয়ান আল হুজালি মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করতে সৈন্য সংগ্রহ করছে। রাসুল (সা.) তাকে প্রতিহত করতে আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি অভিযান প্রেরণ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস (রা.) তাকে হত্যা করে তার মাথা নিয়ে রাসুল (সা.)-এর দরবারে হাজির হন।

 

আবু সালামার অভিযান : উহুদ যুদ্ধের পর বনু আসাদ বিন খুজায়মা মুসলমানদের বিরুদ্ধচারণ করে এবং তারা রাসুল (সা.)-এর ওপর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেয়। এ খবর শুনে রাসুল (সা.) আবু সালামা (রা.)-এর নেতৃত্বে দেড় শ সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। মুসলমানদের আক্রমণের সামনে বনু আসাদ বিন খুজায়মা টিকে থাকতে পারেনি। ফলে তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পলায়ন করে। মুসলমানরা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ নিয়ে মদিনায় ফিরে আসে। এ অভিযান সংঘটিত হয়েছিল চতুর্থ হিজরির মহররম মাসের চাঁদ ওঠার পর।

 

মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার অভিযান : নজদের আশপাশে কিছু গোত্র বসবাস করত। এই গোত্রগুলো ছিল কিছুটা ধূর্ত ও শক্তিশালী। তারা ছিল কুরাইশের মিত্রপক্ষ। তাদের অনেকে খন্দক যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের সঙ্গে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রাসুল (সা.) খন্দক যুদ্ধ ও বনু কুরাইজা সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার পর নজদের কারতা অঞ্চলে একটি অভিযান প্রেরণ করেন। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রা.)। মুসলিমরা সেখানকার বনু বকরের ওপর হামলা করলে তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং পলায়ন করে। ফলে খুব সহজেই মুসলমানরা জয় লাভ করে। ষষ্ঠ হিজরির ১০ মহররম এই অভিযানটি পরিচালিত হয়।

 

জাকাত আদায়কারী প্রেরণ : নবম হিজরির মহররম মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর পরই রাসুল (সা.) বিভিন্ন গোত্রের মুসলমানদের কাছ থেকে সদকা ও জাকাত আদায় করতে কর্মচারী প্রেরণ শুরু করেছিলেন। জাকাত আদায়কারী লোকদের ইসলামের পরিভাষায় ‘আমিল’ বলা হয়।

Leave a Reply

Translate »