আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস হলো একটি বিপাকীয় প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট রোগ। যার কারণে দেহ যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে বা ইনসুলিন প্রত্যাখ্যান করে। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। কিন্তু আক্রান্তের ৫৭ শতাংশই জানে না তাদের ডায়াবেটিস আছে। বিশেষ করে মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে (এশিয়া, আফ্রিকা) এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন চলছে।
জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল যেখানে ১০৮ (১০ কোটি ৮০ লাখ) মিলিয়ন সেখানে তা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২২ (৪২ কোটি ২০ লাখ)। এ থেকেই বুঝা যায় সামনে দিনে পরিস্থিতি আরো কত ভয়াবহ হতে চলেছে।
রক্তে সুগারের মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে ক্লান্তি, ঘন ঘন প্রস্রাব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।
ডায়াবেটিসের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি হলো এই রোগ কখনো পুরোপুরি ভালো হয় না। তবে এর লক্ষণগুলো দূর করা যায় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডায়াবেটিস হল একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ খান, ইনসুলিন নেন। তবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রা ও খাওয়ার ওপর প্রায় ৮০ শতাংশ নির্ভর করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। তার সঙ্গে মেডিটেশন, ব্যায়াম করলে আরো উপকারিতা পাওয়া যায়।
এমনকি রান্নাঘরের কিছু মসলাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
দারুচিনি : দারুচিনিতে একাধিক থেরাপিউটিক উপাদান থাকায় এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩-৬ গ্রাম দারুচিনি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। দারুচিনি ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
হলুদ : হলুদের হাজার গুণাগুণ রয়েছে। কাটা, ক্ষত ভালো করার পাশাপাশি হলুদ অ্যান্টি ডায়াবেটিস হিসেবে কাজ করে। এটি ডায়াবেটিস বাড়তে দেয় না।
মেথি : ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। মেথি শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩ বছর ধরে টানা মেথি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়।
লাল মরিচ : লাল মরিচে থাকা ক্যাপসাইকিন উপাদান অ্যান্টি-ডায়াবেটিক হিসেবে কাজ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যাপসাইকিন ইনসুলিনের উৎপাদন এবং বিপাকে সাহায্য করতে পারে। এই ইনসুলিন একটি হরমোন যা শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে।
তেজপাতা : টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তেজপাতা। প্রতিদিন ১-৩ গ্রাম তেজপাতা খেলে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন- হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়তা করে।
এলাচ : এলাচে থাকে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হাইপোলিপিডেমিক উপাদান, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। এটি এনার্জি, কোষের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং ইনসুলিনকে যথাযথভাবে মুক্তি দিতে পারে।
লবঙ্গ : অতিরিক্ত গ্লুকোজ সংরক্ষণ করে গ্লুকোজ স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে লবঙ্গ। গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গে গ্যালিক অ্যাসিড, কেটেকিন এবং কোরেসেটিনের মতো পলিফেনল থাকে যেগুলি লিভারের কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং লিভারের গ্লাইকোজেনকে গ্লুকোজে রূপান্তর করতে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে।
জিরা : ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড গ্লুকোজ, বডি ফ্যাট, লেপটিনের মাত্রা কম করে জিরা। এগুলো কমে গেলে ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা হ্রাস হয়।