কেন আমরা স্বপ্ন দেখি?

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ স্বপ্নে মানুষ অনেক কিছুই দেখে। তাই এটা নিয়ে একটা রহস্য থেকেই যায়। মনোবিদদের মতে, আশ্চর্য এক মনস্তাত্ত্বিক কারণে আমরা স্বপ্ন দেখি! আমাদের অবচেতনের ভাবনা-চিন্তা, ভয় বা ইচ্ছার প্রতিফলন হলো স্বপ্ন। তবে এই স্বপ্ন সম্পর্কে অন্যান্য বিশ্বাসও রয়েছে।

মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সব স্বপ্ন মনে রাখতে পারে না। স্বপ্নের অর্থ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করেছেন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় স্বপ্ন সম্পর্কে যে প্রাচীন রেকর্ডগুলো পাওয়া যায়, তা মূলত কাঁদামাটি দিয়ে তৈরি পাত্রতে নথিভুক্ত ছিল। গ্রিক এবং রোমান যুগে মানুষরা স্বপ্নকে এক বা একাধিক দেবতার কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বার্তা অথবা মৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসা বার্তা যা প্রধানত ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে গণ্য করতো।

ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার কারণ নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী অনুসন্ধান করেছেন। এই বিষয়ে সব চেয়ে বড় কাজ করেছেন পৃথিবীখ্যাত স্নায়ুরোগ বিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড। তার মতে, আমাদের অনেক ইচ্ছে থাকে অবদমিত। এর ছোঁয়া আমরা স্বাভাবিক সময়ে টের পাই না। তবে মানুষ যখন স্বপ্ন দেখেন, তখন তা সামনে আসে। এছাড়া আরও একদল বিজ্ঞানী ভাবেন যে ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্কে কিছু সংকেত পৌঁছে যায়। এবার তার থেকেই তৈরি হয় স্বপ্ন।

যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ ভারতীয়, দক্ষিণ কোরিয়ানদের ৬৫ শতাংশ এবং ৫৬ শতাংশ মার্কিনি তাদের স্বপ্নের বিষয়বস্তুকে অবচেতন মনের বিশ্বাস এবং অপূরণ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ক্যালভিন এস হল পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি স্বপ্ন সম্পর্কে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে পেশ করেন। ১৯৬৬ সালে হল এবং ভ্যান দ্য ক্যাসল, দ্য কন্টেন্ট এনালাইসিস অফ ড্রিমস নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

এতে তারা কোডিং পদ্ধতির মাধ্যমে এক হাজার কলেজছাত্রের স্বপ্নের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। সেখানে তারা দেখিয়েছেন, সারা বিশ্বের মানুষ সাধারণত একই ধরনের বিষয় নিয়ে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে মানুষ অধিকাংশ সময়ই গতদিন বা গত সপ্তাহের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কিত কিছু দেখে। প্রতিটি স্বপ্নেরই আলাদা আলাদা মানে রয়েছে। যার মধ্যে হয়তো বেশ কিছুর মানে বেশ পরিচিত। কিন্তু এমন অনেক স্বপ্ন মানুষ দেখে থাকেন, যার মানে খুঁজে পান না।

সাইকিয়াট্রিস্টরা বলছেন, মানুষের ঘুমের মাঝে রয়েছে ৩টি পর্যায়। প্রথম পর্যায় হলো স্লিপ অনসেট, দ্বিতীয় পর্যায় পড়ে লাইট স্লিপ, তারপর তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায় নিয়ে হয় ডিপ স্লিপ বা র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট স্টেজ। এই পর্যায়েই মূলত দুঃস্বপ্নগুলো দেখা হয়।

এ বিষয়ে ক্যারল ওয়াশারম্যান নামের এক গবেষক জানান, যে রাতে তিনি চিংড়ি দিয়ে খাবার খেতেন, সেসব রাতেই তিনি ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে বিশ্রামহীন রাত পার করতেন। পরবর্তীকালে তিনি চিংড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং সে সব দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটান। শুধু দুশ্চিন্তা থেকেই নয়, অসচেতনতা থেকেও দুঃস্বপ্নের উৎপত্তি ঘটে।

সূত্র: এশিয়ানেট নিউজ

Leave a Reply

Translate »