আল্লাহ পাক কুরআনে মানুষ বোঝাতে দুধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ আল্লাহপাক কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর রং-ই প্রকৃত রং, আর কার রং তার রঙের চেয়ে উত্তম?’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৩৭)। আল্লাহর রাসূল (সা.)ও একই কথা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও’।

 

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা, কিন্তু মানুষকে ‘মানুষ’ হতে প্রয়োজন কিছু নিয়মাবলির অনুসরণ। আল্লাহ পাক কুরআনে মানুষ বোঝাতে দুধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন, (এক) বাশার (দুই) ইনসান। কুরআনে যেখানে ‘বাশার’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে, সেখানে মানুষকে কেবল একটি দু’পেয়ে প্রাণীর প্রজাতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

কিন্তু যেখানে ‘ইনসান’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে কেবল প্রাণীর একটি প্রকার নয় বরং সামাজিক ও নিয়মকেন্দ্রিক একদল সভ্য প্রাণী বুঝিয়েছেন, যাদের মধ্যে এমন কিছু গুণ যা তাদের অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে ফেলেছে।

 

আর সেই গুণ আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ গুণ, যা তারই গুণের ছায়া। এই মহাজগতে আল্লাহপাক যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, শুধু ‘কুন’ (হও) বলে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষের বেলায় বলেন, ‘আমি তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি,’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত ৭৫)। তারপর বলেন, ‘তিনি আদমকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন এবং তার মধ্যে নিজের রুহ ফুঁকে দিয়েছেন, আর তোমাদের শোনার কান, দেখার চোখ ও চিন্তা করার মন দিয়েছেন,’ (সূরা সাজদাহ, আয়াত ৯)।

 

সুতরাং মানুষকে মনুষ্য প্রজাতি থেকে মানুষে উন্নীত হতে প্রয়োজন আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতকে যথাযথ ব্যবহার করা, আল্লাহর গুণকে নিজের বানানো। এ কথার প্রচার-প্রসারই পয়গম্বরদের পৃথিবীতে প্রেরণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, যেমন ইরশাদ আছে, ‘সে তো কেবল এ কথাই বলবে, তোমরা আল্লাহর সাধক হয়ে যাও, (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯)।

 

কুরআনে আল্লাহপাক পৃথিবীর বুকে মানুষকে প্রতিনিধি বানিয়ে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। ‘আর সেই সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে মানুষকে আমার খলিফা (প্রতিনিধি) বানাতে চাই।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ৩০) তো প্রতিনিধি হিসাবে মানুষকে তিনি তিনটি জিম্মাদারি দিয়েছেন-

 

এক. কেবল আল্লাহতাআলার সঙ্গে মানুষের ইবাদত, সম্মানবোধ ও কৃতজ্ঞতার সম্পর্ক রেখেছেন। আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে মাথা নত করা যাবে না। আর এটাই মানুষকে সৃষ্টির প্রধান কারণ। যেমন কুরআনে আছে, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি,’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬)।

 

দুই. ‘হাসানাহ ফিদ্দুনিয়া’ বাস্তবায়ন করা, অর্থাৎ আল্লাহ পৃথিবীতে যেই নাজ-নেয়ামত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন, তার সঠিক ব্যবহার করে ইহজাগতিক উন্নতি করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মহান আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন,’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৯)। এ ছাড়া পরজগতের মতো ইহজগতেও সমৃদ্ধি অর্জনের দোয়া করতে বলেছেন।

 

তিন. আল্লাহর নির্দেশিত হুকুম-আহকাম অনুযায়ী মানুষের জীবন ইনসাফ ও ইহসানের সঙ্গে পরিচালনা করা। যেমন ইরশাদ আছে, ‘আমি আমার রাসূলদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে পাঠিয়েছি, তাদের ওপর নাজিল করেছি কিতাব ও ন্যায়বিচারের বাণী, যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে,’ (সূরা হাদিদ, আয়াত ২৫)।

 

নিজের এলেম ও হেকমত, মাল ও দৌলত-সবকিছুই সৃষ্টির উপকারে উৎসর্গ করে দিতে তারা মরিয়া থাকে। তারা মনে করে এ সবের জন্যই আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা এমন মানুষ হিসাবে বসবাস করেন যারা দেখেন আল্লাহপাক সব সময় তাদের ওপর রহমত ও বরকত নাজিল করছেন। তারা বোঝেন, আল্লাহ যাকে দুনিয়াতে নাজাত দান করেছেন, আখেরাতেও তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করবেন।

Leave a Reply

Translate »