আর লকডাউন দিতে চায় না সরকার

মহামারি করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দেশজুড়ে দফায় দফায় কঠোর বিধিনিষেধ ও  লকডাউন দেয় সরকার। চার মাসের বেশি সময়ের এই অচলাবস্থার শেষ হয় গত ১১ আগস্ট। এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে না গেলে সরকার এখন আর কঠোর লকডাউনের পথে হাঁটতে চায় না। জীবন-জীবিকার তাগিদে বিধিনিষেধ শিথিল করে টিকা ওপর জোর দিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, বিধিনিষেধের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।  তাদের বিষয় মাথায় রেখে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে। গত ৯ দিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুইশর নিচে। ইতোমধ্যে দুই কোটিরও বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের টিকা দেওয়া সম্ভব হলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে। তখন বিধিনিষেধ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আপাতত এক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। সংক্রমণ বা মৃত্যু মারাত্মক পর্যায়ে না গেলে লকডাউন দেওয়া হবে না। তবে টিকা কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, দেশে এখন পর্যন্ত করোনার টিকা এসেছে তিন কোটি নয় লাখ ৪৩ হাজার ৭২০ ডোজ। এর মধ্যে দুই কোটি ২৪ লাখ ১৩ হাজার ৭৯ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা নেওয়াদের মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন এক কোটি ৬১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৭৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৬২ লাখ ৫৪ হাজার ৪০২ জন। এছাড়া কোভ্যাক্সসহ বিভিন্ন উৎস থেকে করোনার ২১ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে।

নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলতে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়া মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকার সবসময় সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। সামনের দিনগুলোতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে পর্যালোচনা করেই নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১৪৩ জন।  এ সময়ে ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ জন।

গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এরপর থেকে প্রায় এক মাস প্রতিদিন ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২শর নিচে নামা শুরু করে। গত নয় দিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুইশর নিচে।

শনিবার (২১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত একদিনে করোনায় মারা গেছেন ১২০ জন। এ সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৯১ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৬ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ৪০ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৭, রাজশাহীতে ৯, খুলনায় ১৫, বরিশালে ৩, সিলেটে ১৩, রংপুরে ৭ এবং ময়মনসিংহে ৬ জন মারা গেছেন।

নারী ও পুরুষের হিসাবে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ এবং ৫১ জন নারী। এদের মধ্যে বাসায় মারা গেছেন ১ জন। বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৬ হাজার ৪৬৫ জন এবং নারী ৮ হাজার ৬৭৮ জন।

Leave a Reply

Translate »