আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে হার্ট বা হৃদপিণ্ড একটি জরুরী অঙ্গ। হার্টের কর্মক্ষমতার ওপর বেঁচে থাকা, শক্তি, শারীরিক কর্মক্ষমতা, আবেগ অনুভূতি বলতে গেলে জীবনের সবকিছুই নির্ভরশীল। হার্টের দ্বারা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি এবং শক্তি সঞ্চালিত হয়, অক্সিজেন সরবরাহ হয় এবং কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন হয়।
তাই এ অঙ্গের যত্ন না নিলেই সর্বনাশ। একটু সচেতন থাকলেই কিন্তু হৃৎপিণ্ড সুস্থ-সবল রাখা যায়।
হৃদরোগের কারণ
পারিবারিক হৃদরোগ ইতিহাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা এবং অলস জীবনযাত্রা, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, অতিরিক্ত মদ্যপান।
হৃদরোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য আছে বেশ সহজ কিছু উপায়:
পরিমিত খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ না নেওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ আর ধূমপান না করা—দৈনন্দিন জীবনে এ কয়টি অভ্যাস আপনার হৃৎপিণ্ডকে রাখবে সুস্থ-সবল।
ব্যায়াম:
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সপ্তাহে ন্যূনতম পাঁচ দিন করে রোজ ৩০ মিনিট ব্যায়ামের প্রয়োজন বড়দের। একটু হাঁটা কিংবা সাংসারিক কাজের মধ্য দিয়ে ব্যায়ামের রুটিন সেরে নিতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাস পাল্টানো:
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ (ক্ষতিসাধক স্নেহ পদার্থ) যেমন ‘রেড মিট’ কিংবা পূর্ণমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার ছাড়তে হবে। শাকসবজি খান প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কাপ, সঙ্গে থাকুক ফলমূল। শস্যদানা বা ‘গ্রেইন’যুক্ত খাবার খেতে পারেন, যেমন বাদামি চাল, বার্লি, পপকর্ন, ওটমিল, গমের রুটি, গমের প্যানকেক ইত্যাদি।
বিশ্রাম নিন:
দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে পরিমিত বিশ্রাম নিন। পূর্ণমাত্রায় বিশ্রাম হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। যুক্তরাষ্ট্রের ‘একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াবেটিস’-এর চিকিৎসক বলেন, হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মানসিক চাপ ‘খলনায়ক’-এর ভূমিকা পালন করে। গোটা স্বাস্থ্যের ওপরই এটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
ধূমপান ছাড়ার চ্যালেঞ্জ জিতুন:
ধূমপানের অপকারিতা সমন্ধে আমরা সবাই জানি। এ বদভ্যাসটি ছাড়ার নির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। যে যার মতো করে চেষ্টা করে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ, পরিবারের সাহায্য কিংবা এ দুটি ব্যাপার মিলিয়ে চেষ্টা করলে সুফল পেতে পারেন। ধূমপানের অপকারী দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। এটা ছাড়ার উপকারী দিকগুলোতে মনোযোগী হতে পারেন। ধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করাই শ্রেয়। মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। এটা ধূমপানে আপনাকে আরো আকৃষ্ট করবে। শরীরচর্চার মধ্যে থাকলে ধূমপানের ইচ্ছা কমে যেতে পারে। কর্মচাঞ্চল্যের মধ্যে থাকলেও সুফল পেতে পারেন।
ইতিবাচক মনোভাব ও চাপ কমান:
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে মানসিক প্রশান্তির বিকল্প নেই। কিন্তু কর্মক্ষেত্র, সমাজ কিংবা পরিবার থেকে মানুষ নানাভাবে চাপে থাকে। এসব চাপ যেমন মোকাবিলা করতে হবে, তেমনি বুদ্ধি করে কমাতেও হবে। প্রতিদিনের কাজের চাপ শেষে নিজের জন্য আলাদা করে একটু সময় বের করুন। পছন্দের গান শুনতে পারেন কিংবা বই পড়তে পারেন। কোনো কারণে মনে কষ্ট পেলে তা বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নিন। মনে কষ্ট পুষে রাখবেন না। এ ধরনের অভ্যাস হৃদ্রোগ ডেকে আনে। সবচেয়ে ভালো হয় পরিবার কিংবা কর্মক্ষেত্রে চমৎকার সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ একাকিত্ব বোধ করেন এখনকার মানুষ। অর্থাৎ ১৯৮০ সালে এ হার ছিল ২০ শতাংশ, এখন ৪০ শতাংশ। একাকিত্ব শুধু মানসিক ক্ষতি করে না, শারীরিক ক্ষতিও করে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, কেউ যখন কারও সঙ্গে কথা বলে, তখন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। এতে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম দারুণ সচল হয়ে ওঠে। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে মানসিক চাপ কমানো এবং চারপাশের মানুষের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তোলাও জরুরি।
সুন্দর জীবনের জন্য সুস্থতা প্রয়োজন। সুস্থতার জন্য সুস্থ হার্টের বিকল্প নেই। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে কঠিন অসুখ হৃদরোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পেতে পারি।