সুফি কবি মাওলানা রুমির গল্প

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ফার্সি সাহিত্যের একটি প্রবাদ আছে– ‘সাতজন কবির সাহিত্যকর্ম রেখে যদি বাকি সাহিত্য দুনিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়, তবু ফার্সি সাহিত্য টিকে থাকবে। সাতজন কবির তালিকায় যেমন আছেন ফেরদৌসী, হাফিজ, নিজামী, রুদাকী, সাদী জামী তেমনি আছেন সুফি কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি।

 

আফগানিস্তানের বলখ শহরে ইংরেজি ১২০৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মহাকবি। তার পিতার নাম মাওলানা বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ। তিনি ছিলেন একাধারে বিদ্বান, কবি, বক্তা এবং একজন সুফি দরবেশও। তিনি রুমিএর অনুসারীদের কাছে সুলতান আলউলামা নামে পরিচিত।

 

পিতার কাছ থেকেই, মাওলানা রুমি তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। রুমির পিতা ছাড়াও রুমির ওপর যারা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন তারা হলেন ফার্সি কবি আত্তার, সৈয়দ বুরহান উদ্দিন, শামস তাবরিজি, স্বর্ণকার সালাহ উদ্দিন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী প্রিয় ছাত্র হুসাম চালাবি।

 

কবি ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রহ.)-এর সঙ্গে রুমির সাক্ষাৎ ঘটে ইরানের নিশাপুরে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। বালক জালাল উদ্দিনকে দেখা মাত্র তিনি বলেছিলেন, বালক একজন মহাপুরুষ হবে রুমির প্রতি স্নেহাশিস হয়ে সুফি আত্তার তার বিখ্যাত আসরারনামা উপহার দিয়েছিলেন।

 

রুমি তার গুণগ্রাহিতা করে বলেন, আত্তার হচ্ছে আত্মা আরেকটি কবিতাতে স্মৃতিচারণ করেছেন, আত্তার ভালোবাসার সাতটি নগরই ভ্রমণ করেছেন আর আমি এখনো একটি গলির প্রান্তে অবস্থান করছি ১২৪৪ সালে দরবেশ শামস তাবরিজিএর সঙ্গে রুমির সাক্ষাৎ হয়। তাবরিজের সান্নিধ্য সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয় রুমির জীবন।

 

গুরুর নির্দেশ মতো সূচনা করেন জীবনের নতুন এক অধ্যায়। ফলে একজন শিক্ষক থেকে রুমি পরিণত হন একজন মহান সুফি দরবেশ সাধকে। রুমির প্রিয় ছাত্র হুসাম চালাবি রুমির সঙ্গীর ভূমিকা পালন করেন। একদিন হুসাম রুমিকে বললেন, যদি আপনি একটি বই লিখেন যেমন সানাইএর এলাহিনামা বা আত্তারএর মাতিক উততাইর এরমত, যেটি অনেকের সঙ্গ দেবে। তারপর রুমি তার বিখ্যাত মসনভী লিখেছেন। মসনভীএর ছয়টি খণ্ড লিখতে বারো বছর লেগেছিল।

 

১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে রুমি ইন্তেকাল করেন। তাকে তার বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। তার সমাধিফলকে লেখা আছেযখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও। মাওলানা রুমির মৃত্যুর পর শুধু মুসলমানরাই নয়, ইহুদিখ্রিষ্টানরাও তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলেন।

 

একজন খ্রিষ্টানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তোমরা কেন এত দুঃখচিত্তে তার কবরের পাশে কান্না করছ? উত্তরে খ্রিষ্টান বলেছিলেন, উনি আমাদের যুগের মসিহ। আমরা তাকে যুগের মুসা এবং দাউদ বলে শ্রদ্ধা করি। আমরা সবাই তার ভক্ত।

Leave a Reply

Translate »