আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ যষ্টিমধু এক প্রকার গাছের শেকড়। এ শেকড় থেকে মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়। গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা বা বাংলায় যষ্টিমধু গাছের শেকড়কে যষ্টিমধু বলা হয়।
বহু বছর ধরে হারবাল বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। যষ্টিমধুর আছে অনেক ঔষধি গুণ, যা বিভিন্ন রোগ উপশমে ও শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
যষ্টিমধু খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় এবং কীভাবে এটি খাবেন সে সম্পর্কে বেসরকারি গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।
শরীফা আক্তার শাম্মী বলেন, বিভিন্ন পদ্ধতিতে যষ্টিমধু খাওয়া যায়-
- ফুটন্ত পানিতে পরিমাণমতো যষ্টিমধু ভিজিয়ে ঠান্ডা করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- দুধের সঙ্গে পান করা যায়।
- পরিমাণমত শুধু গুঁড়াও খাওয়া যেতে পারে।
- চায়ে দিয়ে পান করা যায়।
- শেকড় চিবিয়ে রস খাওয়া যায়।
যষ্টিমধুর উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: যষ্টিমধু প্রতিরক্ষা নার্ভকে উন্নত করে এবং মাইক্রোবিয়াল আক্রমণ প্রতিরোধক লিম্ফোসাইট এবং ম্যাক্রোফেজ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ইমিউন সম্পর্কিত অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া এবং অটোইমিউন জটিলতা হ্রাস করে।
আলসার বা ক্ষত নিরাময় করে: যষ্টিমধুর গ্লাইসিরাইজিন ও গ্লাইসিরাটিক অ্যাসিড আলসার সৃষ্টিকারী প্রোস্টাগ্লান্ডিন রিডাকটেজ এনজাইমের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করে। পাকস্থলীতে আলসার বা ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে: দুধের সঙ্গে যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
লিভার ভালো রাখে: এটি শরীরে পিত্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া হিসেবে কাজ করে: যষ্টিমধুর মধ্যে গ্লিসারিন উপস্থিত থাকার কারণে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হজমে সহায়তা করে: যষ্টিমধু পেটের সমস্যা, হজমের সমস্যা দূর করে। অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধ করে।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে: যষ্টিমধুর ফাইটোস্ট্রোজেনিক নারীদের হরমোনজনিত সমস্যা দূর করে।
কাশি ভালো করে: এটি তরল আকারে কফ বের করে দেয় এবং খুসখুসে কাশির তাৎক্ষণিক উপশম করতে পারে। এ ছাড়া ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের সমস্যা ও কণ্ঠনালীর প্রদাহ দূর করে। শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন প্রশমিত করে।
ত্বক ভালো রাখে: যষ্টিমধু ত্বকের অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, প্রদাহ, সানবার্নের সমস্যা নিরাময় করে। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
দাঁত ভালো রাখে: যষ্টিমধুর দুটি কার্যকর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঠেকাতে পারে।
টিউমার প্রতিরোধক: গ্লাইসিরাইটিনিক অ্যাসিড টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের কার্যকারিতা নষ্ট করে।
অ্যালার্জি প্রতিরোধক: এটির গ্লাইসিরাইসিক অ্যাসিড মাস্টকোষ থেকে হিস্টামিন নিঃসরণ কমিয়ে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
সতর্কতা
অনেক উপকারিতা থাকলেও যষ্টিমধু একটানা খাওয়া উচিত নয়। কিছুদিন বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। কারণ অতিরিক্ত খাওয়া হলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে-
- দীর্ঘ সময় ধরে যষ্টিমধু খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- অত্যধিক খাওয়ার ফলে পেশি দুর্বলতা, মাথাব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
- পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
- উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, কিডনি, হাইপোথাইরয়েটিজমে আক্রান্ত রোগীদের এটি খাওয়া উচিত নয়।