ভারতের লাদাখে একটি অদ্ভুত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে পড়তে হলে একজন ছাত্রকে ম্যাট্রিকে ফেল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ইউনিভার্সিটি অফ ফেইলারস বা অকৃতকার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো করতে দাঁতে দাঁত চেপে দিন-রাত পড়াশোনা করে যাচ্ছে, সেখানে ফেল করলেই প্রতিষ্ঠান পড়াশোনার সুযোগ দিচ্ছে।
স্রোতের বিপরীতে চলা এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে এর প্রতিষ্ঠাতা সোনাম ওয়াংচুকের কথা। ১৯৬৬ সালে ভারতের লেহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সোনাম ওয়াংচুক। পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান শ্রীনগরে। চারপাশের চকচকে দৃশ্য, গৎবাঁধা নিয়ম তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি সবসময় বিবর্ণ বাস্তবতার কথা ভাবতেন।
সোনাম নিজ এলাকার ফেল করা ছাত্রদের নিয়ে ভাবতেন। সেখানে বেশিরভাগ ছাত্রই দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতো। দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তি তো দূরের কথা, তারা পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হতো। তিনি মনে করেন যে, পরীক্ষায় খারাপ ফলের পেছনে কেবল শিক্ষার্থীরাই দায়ী নয়। বরং এর জন্য দায়ী অসামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা।
১৯৮৮ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করেই নিজের মনের মতো করে একটি আধুনিক ও পরিবর্তিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন সোনাম। যার নাম দেন স্টুডেন্ট এডুকেশনাল এন্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ, যাকে সংক্ষেপে সেকমল অর্থাৎ এসইসিএমওএল বলা হয়। লাদাখের ফেহ নামক গ্রামে ২০ একর জমিতে গড়ে ওঠে সেকমল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বইখাতার চেয়ে হাতে কলমে পড়াশোনা বেশি হয় এবং ছাত্ররা সফলও হয়ে থাকে বহুলাংশে।
একজন ছাত্র কেবল বইয়ের শিক্ষা নয়, বরং বইয়ের শিক্ষাকে যাতে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে- এটাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবকাঠামোর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হয় সৌরশক্তি দিয়ে। এতে আর্থিক খরচ অনেক কম লাগে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তাদের খাবার বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। গ্রীন হাউসের মাধ্যমে ফল ও সবজি উৎপাদন করে তারা। গরু ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুও পালন করে তারা।
তাদের থাকার ভবনগুলো মাটি এবং ছোট ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি। এতে করে শীতকালে ঘরের ভেতরে বেশি তাপমাত্রা এবং গরমকালে কম তাপমাত্রা থাকে। নিজেদের প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিজেরাই গ্রুপ করে বানায় এবং নিজেরা বাজারের মতো বসিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে। সেকমলের নিজস্ব একটি ট্রাভেল এজেন্সিও রয়েছে, যার নাম অ্যারাউন্ড স্টুডেন্ট উইথ লাদাখ।
এই হাতেকলমে শিক্ষাগুলোই মূলত একজন শিক্ষার্থীকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। যার কারণে তারা যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এখানে পড়েছেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যেকেই বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। কেউ করছেন বড় ব্যবসা, কেউ সাংবাদিক কিংবা কেউ খুলে বসে আছেন বড় বড় কোম্পানি। চলচ্চিত্র নির্মাতাও আছেন অনেকেই।
এদের সবাই চার থেকে পাঁচবার মেট্রিক ফেল করে এখানে এসেছিল। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে এই সাফল্য অর্জন গোটা বিশ্বের কাছে নিঃসন্দেহে একটি অনন্য উদাহরণ। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিয়ে ঐতিহাসিক ‘থ্রি ইডিয়েট’ সিনেমা বানানো হয়েছিল। যেটি বেশ ব্যবসা সফল হওয়ার পাশাপাশি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্রে ছিলেন আমির খান এবং কারিনা কাপুর।