মোশাররফ সব সময় নিজেকে ভেঙে এগিয়েছে

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ সময়টা ১৯৯০ সাল। আমাদের দল ‘নাট্যকেন্দ্র’ সবে শুরু করেছি। সেই সময় মঞ্চের জন্য কিছু লোক চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিই। তখন ইন্টারভিউ দিতে আসে মোশাররফ করিম। আমাদের ক্রাইটেরিয়া ছিল, ইন্টারমিডিয়েট পাস হতে হবে। কিন্তু মোশাররফ তখন এসএসসি পাস। তারপরও তার সঙ্গে কথা বলে কীভাবে যেন আমরা কনভিন্স হয়ে যাই। আমাদের দলে কাজ করার সুযোগ পায় মোশাররফ করিম।

 

নিয়মিত সে কাজ করতে থাকে। আমাদের নিয়মিত ওয়ার্কশপ হতো। মোশাররফকে দেখতাম অভিনয়ের নানা কিছু খুবই মনোযোগ দিয়ে আয়ত্ত করছে। কিন্তু প্রথম দিকে আমাদের নাটকে তার কোনো চরিত্র ছিল না। কখনো গ্রুপ খুলে দেওয়ার দায়িত্বে থাকত, চা আনত, প্রদর্শনীর সময় লোকজনকে সিটে বসানো, কখনো ঝাড়ু দিয়ে সবকিছু পরিষ্কার করত। কিন্তু সব সময়ই তার মধ্যে অভিনয়ে নিজেকে গ্রো করার চেষ্টা থাকত। রিহার্সালে প্রতিটি চরিত্রেই সে নিজেকে ভাবত। একসময় তার ভাবে–ভঙ্গিতে প্রকাশ পেতে থাকল, আমি কি সুযোগ পাব না।

 

ছয় মাস পরে সুযোগ পেল মোশাররফ করিম। আমাদের একটি নাটকের চরিত্র ছিল কাল্লু মিয়া। এ চরিত্রের নিয়মিত অভিনেতা হঠাৎ চরিত্রটি করতে পারছিল না। মোশাররফকে চরিত্র করতে বলি। ডিউরেশন কম হলেও চরিত্রটি অনেক মজার ছিল। মোশাররফ যখন চরিত্রটি করতে থাকল, তখন চরিত্রটির মাত্রাই পাল্টে গেল। তার শারীরিক অভিব্যক্তি, সংলাপ, এক্সপ্রেশন দেওয়ার ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। পরে আমি চরিত্রটি নতুন করে ইম্প্রোভাইজেশন করে একটা জায়গায় দাঁড় করাই। কলকাতায় নাটকটি মঞ্চায়ন হলে অনেক দর্শক ও থিয়েটারের গুণী ব্যক্তিরা আলাদা করে মোশাররফের অভিনয়ের প্রশংসা করেন। জিজ্ঞাসা করেন, উনি কে? দারুণ অভিনয় করেছেন।

 

মোশাররফের মধ্যে কমেডি অভিনয়টা ভালোভাবে আছে। তারপরও সব রকম কমেডি না করতে তাকে নিষেধ করব। আমাদের ট্রেনিং ছিল, পিওর কমেডির মধ্যে নিয়ে যাওয়া। সেই সময় দেখতাম তার পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা ভালো। অভিনয়টা ধরতে পারত। আমরা তো প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ধারণা করি সে ভালো করবে, সেভাবেই শেখানো হয়। কিন্তু অনেকেই টিকতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে মোশাররফ নিজেকে পরিবর্তন করেছে। তার বড় একটা গুণ বাংলা সাহিত্য পড়া। তার সংগীতবোধও ভালো। আমাদের নাটকের জন্যও সে গান লিখেছে। বিশেষ করে বলতে গেলে সে খুব ভালো ঢোল বাজায়। সব সময় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

 

মোশাররফের উচ্চতা কম। আমাদের টিপিক্যাল হিরোর ধারণা থেকেও সে ব্যতিক্রম। সেখান থেকে চ্যালেঞ্জ করে এত দূরে আসাটাই অনেক সাহসের কাজ। রোমান্টিক, কমেডিসহ সব ধরনের চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু আমাদের দুঃখ, টিকে থাকার জন্য সব রকম কাজ করতে হয়। সেই জায়গায় মোশাররফ সব সময় নিজেকে ভেঙে এগিয়েছে।

Leave a Reply

Translate »