আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ দেশে প্রতিনিয়ত মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্য দিনের বাজার সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী।
বৈদেশিক ঋণ ও সুদ বাবদ অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে হচ্ছে। তাই কমছে রিজার্ভ, বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার। ফলে কমে যাচ্ছে টাকার মান, বাড়ছে ডলারের দাম। যার দরুন মূল্যস্ফীতির চাপে চ্যাপ্টা মধ্যবিত্ত।
সবকিছুর দাম এতটাই বেড়েছে যে সীমিত আয়ের মানুষ দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে হিমসিম খাচ্ছে। ভবিষ্যত নিরাপত্তায় সঞ্চয়তো দুরের কথা মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না তারা মূল্যস্ফীতির কারণে।
মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন আলতাফ হোসেন। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর মিরপুরে।
তিনি বলেন, মাসের শুরুতে ঘরভাড়া আর বাজার করতেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়।
মাসের বাকি দিনগুলো খুব কষ্ট করে চলতে হয়। ধার দেনা করে কোনমতে চলি। আলতাফ সাহেবের মত অবস্থা অধিকাংশ স্বল্প আয়ের মানুষের। সকলেরই একই অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায় মূল্যস্ফীতির কারণে।
শুধু স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষই নন। কঠিন চাপের মুখে রয়েছে সরকার। দিনদিন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় মিটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের একটি অংশ আগে রিজার্ভে যোগ হতো। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার দায় মিটিয়ে অতিরিক্ত ডলার ব্যাংকের কাছে থাকছে না। রিজার্ভে ডলার যোগ হচ্ছে না। করোনা মহামারির পর দীর্ঘ সময় ধরে এমন মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি চলমান থাকায় রিজার্ভের উপর চাপ বেড়েই চলছে।
আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়াত। সেই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হতো। ফলে বাড়তি ডলার ব্যাংক বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতো। কেননা ব্যাংক নির্ধারিত কোটার বেশি ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে না।
আরো পড়ুনঃসহজে পেওনিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন
তখন দেশে আমদানি ব্যয়ের ৬০ শতাংশ রপ্তানি আয় দিয়ে ও বাকি ৪০ শতাংশ রেমিট্যান্স থেকে মেটানো হত। এরপরও ২০ শতাংশ রেমিট্যান্স রিজার্ভে যোগ হতো।
কিন্তু গত বছর থেকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো যাচ্ছিল না। ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া শুরু হয়। তবে এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ডলার দিয়ে আমদানি মেটানো হচ্ছে। কিন্তু আমদানির বকেয়া দেনা ও বৈদেশিক ঋণ শোধ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনতে পারছে না। ফলে রিজার্ভে ডলার যোগও হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির কারণে.
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। জুলাই মাসে বিক্রি করেছে ১১৪ কোটি ডলার। চলতি আগস্টেও ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৪৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনে রিজার্ভে যোগ করেছে। ২০১৬ সালে ৩৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছে, কিন্তু এর বিপরীতে বিক্রি করেছে ৮০ লাখ ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমায় ও আমদানি খরচ বাড়ায় ২০১৭ সালে ১২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করেছে।এর বিপরীতে কিনেছে মাত্র ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
২০১৮ সালেও একই কারণে বাজার থেকে কোনো ডলার ক্রয় করতে পারেনি। ওই বছরে রিজার্ভ থেকে ২২৯ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। ২০১৯ সালে বিক্রি করেছে ১৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার। বিপরীতে কোনো ডলার ক্রয় করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২০ সালে করোনার কারণে আমদানি একেবারে কমে যায়। এর বিপরীতে রেকর্ড পরিমাণে রেমিট্যান্স আসে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে রেকর্ড পরিমাণে ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছর সর্বোচ্চ ৬৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছিল। এর বিপরীতে বিক্রি করেছে মাত্র ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
২০২১ সালে ২৬৫ কোটি ডলার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছে ২৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২২ সালে ডলার সংকট প্রকট হলে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ১ হাজার ২৯৪ কোটি ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করে। কোনো ডলার কেনেনি। ফলে গড় দেড় বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার আয় থেকে কোনো ডলার রিজার্ভে যোগ হচ্ছে না।
তবে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ থেকে পাওয়া অর্থ রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণ ছাড় কমেছে ১৪৪ কোটি ডলার।
এদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডলার ছিল ৮২ টাকা ৯০ পয়সা। আগস্টে তা ঠেকেছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। ওই সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে ২৬ টাকা ৬০ পয়সা।
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডলারের দাম স্থিতিশীল ছিল। ২০২০ সালে ডলারের দাম ১০ পয়সা কমেছে। বাকি বছরগুলোতে ১ টাকা করে বেড়েছে।
২০২২ সালে এসে অস্থির হয়ে যায়। ওই বছরের শুরুতে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। এখন দেড় বছরের মাথায় এখন তা ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।