আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃপবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লি ইয়াবুদুন’ অর্থাৎ ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)। এ জন্য ইসলাম সব ধর্মীয় কর্তব্যের মধ্যে নামাজের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। অথচ আজ আমরা সামান্য কারণে বা বিভিন্ন অজুহাতে যথাসময়ে নামাজ আদায় থেকে দূরে থাকি।
নামাজ পড়া জরুরি বা ফরজ, এ কথা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কুরআনে বারবার নামাজ প্রতিষ্ঠার কথাই বলা হয়েছে। আমাদের প্রাণপ্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে বেশি নামাজের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। মহানবি (সা.)-এর আনুগত্য করা একজন মুসলমানের জন্য ফরজ। মহানবি (সা.)কে ভালোবেসে তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করা ফরজ করা হয়েছে। যদি কেউ বলতে চায় আমি মুসলমান, আমি নবি করিম (সা.)কে মান্য করি, তাহলে তাকে প্রথম নামাজি হতে হবে।
আরও পড়ুন ঃমানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
মানুষের বিভিন্ন শ্রেণিবিন্যাসের মাঝে আল্লাহ পাকের সবচেয়ে প্রিয় হলো মুমিনরা। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন বলা হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীগণ পরস্পর বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে। এরাই এমন লোক, যাদের ওপর আল্লাহ অবশ্যই দয়া করবেন।
নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আততাওবা, আয়াত : ৭০)। এ আয়াতে মুমিনের যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপ : প্রথমত মুমিন পুরুষ ও নারীগণকে পরস্পর বন্ধু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত বন্ধু যেমন সুখে-দুঃখে আপদে-বিপদে, কষ্টে-শান্তিতে পাশে এসে দাঁড়ায়, প্রকৃত এক মোমিনও অবশ্যই অপর একজনের পাশে দাঁড়াবে আর সে পুরুষ হোক বা নারী।
একজন মুমিন অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সব নির্দেশাবলীর ওপর পরিপূর্ণ আমলকারী হবে এবং সে সর্বদা সৎ আদেশ দিতে থাকবে। নিজে সৎ কাজে প্রতিষ্ঠিত থেকে অন্যকে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকবে। সৎ কাজের প্রসারতাদানে যথাসাধ্য সময় ও সম্পদ ব্যয় করে যাবে। উদ্দেশ্য থাকবে যেন মানুষ সৎ কাজ করে প্রকৃত মোমিন হতে পারে। অসৎ কাজ থেকে নিজে বাঁচতে এবং অপরকে বাঁচাতে একজন মোমিন আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে, যাতে সমাজে তা সংঘটিত না হয়।
যে মোমিন ব্যক্তি সে অবশ্যই নামাজ কায়েমকারী হবে। কোনো ওয়াক্তের নামাজকে ছেড়ে দেবে, এটা তার পক্ষে হতেই পারে না। নামাজ হলো একজন মুমিনের আত্মার খোরাক। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনি নামাজ ছাড়া একজন মুমিন বাঁচতে পারে না। তাই নিজ পরিবারকে সে অত্যন্ত ধৈর্যসহ নামাজের তাগিদ দিতে থাকবে। একজন মোমিন খোদার রাস্তায় জাকাত প্রদানকারী হবে। রিজিক হিসাবে আল্লাহ তাকে যা কিছু প্রদান করেছেন, তা থেকে সে জাকাত প্রদান করতে থাকবে আর এই দান আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার জন্য করে থাকেন।
মহাপরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞার অধিকারী আল্লাহপাক তার ন্যায়বিচারের মানদণ্ডে একজন মুমিন-মুত্তাকিকে পুরস্কার দেবেন। স্বয়ং আল্লাহই একজন মুমিনের অভিভাবক হয়ে থাকেন। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হলো, ‘আল্লাহ হচ্ছেন ওই সব লোকের অভিভাবক, যারা ইমান এনেছে। তিনি তাদের অন্ধকাররাশি থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৫৭)।
এখানে একজন মুমিনকে আল্লাহর বন্ধু হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহপাক তার বন্ধুকে আলোর পথে পরিচালিত করেন, ফলে তার পথচলা হয় সহজ, সরল। আল্লাহ তাঁর বিপদাপদের সাথি হন এবং সাহায্য করেন।
মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ বলেন, যে আমার বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরজ করেছি, সে এর চেয়ে বেশি কিছু নিয়ে আমার নিকটবর্তী হতে পারে না আর আমার বান্দারা সর্বদা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হয়। অবশেষে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালোবেসে ফেলি, তখন সে যে কানে শ্রবণ করে, আমি তার সেই কান হয়ে যাই, যে সে চোখে দেখে, আমি তার সেই চোখ হয়ে যাই, যে হাতে সে ধরে, আমি তার সেই হাত হয়ে যাই এবং যে পায়ে সে হাঁটে, আমিই তার সেই পা হয়ে যাই। সে যখন আমার কাছে কিছু চায়, আমি তাকে তা প্রদান করি, আর সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে আমি তাকে আশ্রয় প্রদান করি’ (বোখারি)।
উল্লিখিত হাদিস থেকে এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মুমিন যেহেতু আল্লাহপাকের নির্দেশাবলীর ওপর জীবন পরিচালনা করে তাই তার সাহায্যকারী স্বয়ং আল্লাহতায়ালা হয়ে থাকেন। মুমিন হতে কারও বাধা নেই। আমলের মাধ্যমে যে কেউ আল্লাহর প্রিয় মুমিন বান্দা হতে পারে। আর একজন মুমিনের প্রথম যে বৈশিষ্ট্য তা হলো সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আদায় করে। সে রাতের শেষভাবে একান্তভাবে আল্লাহপাকের স্মরণে সময় অতিবাহিত করে, আর নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ আদায় করে। কেননা রাতের শেষভাগে দোয়া কবুল হওয়ার উপযোগী ও সর্বোত্তম সময়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, আমাদের প্রভু-প্রতিপালক প্রত্যেক রাতে নিকটবর্তী আকাশে নেমে আসেন। যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, কে আছে যে আমাকে ডাকছে যেন আমি তার ডাকে সাড়া দেই। কে আছে যে আমার কাছে যাচনা করছে যাতে আমি দান করি। কে আছে যে, আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে যাতে আমি তাকে ক্ষমা করে দেই (তিরমিজি)।