কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবার মাঠে নামা। আর্জেন্টিনার শুরুটা হলো লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নদের মতোই। গোল উৎসব করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এবারের রাউন্ড শুরু করলো তারা। ১০ জনের ভেনেজুলেয়ার বিপক্ষে পূর্ণ সুবিধা আদায় করে আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৩-১ গোলের জয়। লাউতারো মার্তিনেস নিজে একবার লক্ষ্যভেদ করেছেন, বাকি দুটিতেও রেখেছেন অবদান। দুই কোরেয়া- হোয়াকিন ও আনহেলের বেঞ্চ থেকে উঠে এসে পাওয়া গোলে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট পেয়েছে আলবিসেলেস্তেরা।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আজ (শুক্রবার) ভোরের ম্যাচে ভেনেজুয়েলার মাঠে আতিথ্য নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সফরকারী হলেও আলবিসেলেস্তেদের খেলায় সেই ছাপ ছিল না। বরং গোটা ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। বিপরীতে গোল ঠেকাতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ভেনেজুয়েলাকে। ৩২ মিনিট থেকে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ায় তাদের চ্যালেঞ্জ ছিল আরও বেশি। যদিও পারেনি। শেষে এক গোল শোধ দিলেও হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ভেনেজুয়েলাকে।
কোপা আমেরিকার জেতা পর আধঘণ্টারও কম সময় ম্যাচ খেলেছেন লিওনেল মেসি। অবকাশযাপন, বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়া, নতুন ক্লাব প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ে যোগ দেওয়া- মাঝে পেরিয়ে গেছে দুই মাস। দিনকয়েক আগে নতুন ক্লাব প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ে অভিষেক হয়েছে তার। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে যেটুকু সময় খেলেছেন, ওই ম্যাচ ফিটনেস নিয়েই লাতিন আমেরিকায় উড়ে এসে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে একাদশে থেকে মাঠে নামলেন। তিনি গোল পাননি, তবে বরাবরের মতো বলের জোগান দিয়ে ও সুযোগ তৈরি করে অবদান রেখেছেন।
কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন ‘ট্যাগ’ বসিয়ে প্রথমবার মাঠে নামা। গত জুলাইয়ে ব্রাজিলকে হারিয়ে লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব জেতার পর ভেনেজুয়েলা ম্যাচ দিয়েই মাঠে ফেরা আর্জেন্টিনার। গোছানো একটা দল হলেও মাঝে বেশ খানিকটা সময় ক্লাব ফুটবলের দায়িত্ব পালনে একটা সমন্বয়ের ঘাটতি ঠিকই তৈরি হয়েছে মেসিদের মধ্যে। সেটা ফুটে উঠেছে ম্যাচ শুরুর বাঁশি থেকে। তাছাড়া অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই হারানোর হতাশায় পুড়তে হচ্ছিল বারবার।
ভেনেজুয়েলার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে ছিল আর্জেন্টিনার দাপট। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিল না। মেসি, আনহেল দি মারিয়া, লাউতারো মার্তিনেস, জিওভানি লো সেলসোদের সুযোগ নষ্টে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না আলবিসেলেস্তেদের। এমনকি ৩২ মিনিটে আদ্রিয়ান মার্তিনেসের লাল কার্ডে ভেনেজুয়েলা ১০ জনের দলে পরিণত হলেও সুবিধা করতে পারছিল না আর্জেন্টিনা।
আদ্রিয়ানের কার্ড পাওয়ারও অন্য ঘটনা আছে। মেসিকে বাজেভাবে ফাউল করায় সরাসরি লাল কার্ড পেয়েছেন তিনি। তবে শুরুতে রেফারির চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল গুরুতর ঘটনাটা। নিজেদের বক্সের সামনে আদ্রিয়ান পা চালিয়ে দিয়েছিলেন। রেফারি ‘অ্যাডভান্টেজ’ দিলে রোদ্রিগো দি পলের কাছ থেকে বল পেয়ে লো সেলসো শট করেন গোলমুখে। স্বাগতিক গোলকিপার বল ঠেকালেও তালুতে জমাতে পারেননি। ছুটে আসা বল ছোট বক্সের ভেতর থেকে জালে জড়াতে পারেননি লাউতারো। এরপরই রেফারি ভিএআরের সাহায্য নিয়ে মেসিকে ফাউলের চিত্রটা দেখেন এবং হলুদ কার্ডের পরিবর্তে লাল কার্ড দেখান আদ্রিয়ানকে।
লাউতারো সেবার ব্যর্থ হলেও বিরতিতে যাওয়ার আগে এগিয়ে নেন আর্জেন্টিনাকে। এবারও বল বানানোর ভূমিকায় লো সেলসো এবং সেখানেও আছে ‘অ্যাডভান্টেজ’। দি মারিয়াকে ভেনেজুয়েলার এক খেলোয়াড় ফাউল করলেও রেফারি বাঁশি বাজাননি। এরপর লো সেলসোর চমৎকার পাস ধরে ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড।
বিরতি থেকে ঘুরে এসে ৫৮ মিনিটে দি মারিয়ার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মেসি। কিন্তু গোলমুখে শট নেওয়ার সুযোগ পাননি। ভেনেজুয়েলা ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন। দি মারিয়ার নেওয়া সেই কর্নার থেকে দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন লাউতারো। কিন্তু হেড করলেও গোলমুখে রাখতে পারেননি।
৭১ মিনিটে এই লাউতারোই আবার অ্যাসিস্টের ভূমিকায়। আর আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় গোল পায় হোয়াকিন কোরেয়ার লক্ষ্যভেদে। ২৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড মেসিকে পাস দিয়ে জায়গা তৈরি করেছিলেন। মেসির কাছ থেকে বল পান লাউতারো। এরপর তার বুদ্ধিদীপ্ত পাস খুঁজে নেয় জায়গা তৈরি করা হোয়াকিনকে। বক্সের ঠিক ভেতর থেকে ডান পায়ে নেওয়া তার শট ঠেকানোর কোনও সুযোগই পাননি ভেনেজুয়েলা গোলকিপার।
আর্জেন্টিনার দাপট তখনও থামেনি। মিনিট তিনেক পর আবারও গোল উদযাপন। এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন আনহেল কোরেয়া। লাউতারোর গোলমুখে নেওয়া জোরালো শট স্বাগতিক গোলকিপার ঠেকালেও নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন। ফিরে আসা বল আনহেল কোরেয়া জালে জড়াতে ভুল করেননি।
হার যখন নিশ্চিত, তখনই এক গোল শোধ দেয় ভেনেজুয়েলা। পেনাল্টি থেকে তাদের হারের ব্যবধান কমান ইয়েফারসন সোতেলদো।
জিতলেও লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দ্বিতীয় স্থানেই থাকতে হলো আর্জেন্টিনাকে। ৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৫। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে ভেনেজুয়েলা। শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল।