ভারতে ১৮ শতাংশ পুরুষ ধর্ষিত হয়, নারীরা তাদের যৌন হেনস্তাও করে। কিন্তু পুরুষ সে কথা বাইরে বলতে পারে না। দেশের আইন প্রায় পুরোটাই মেয়েদের পক্ষে। পুরুষ তাই নিরুপায়। এ সমাজ আর সেভাবে আজ পুরুষতান্ত্রিক নয়, বরং মেয়েদের হাতেই চলে যাচ্ছে অনেক ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাই পচন ধরাচ্ছে, ভুগছেন পুরুষরা।
তাই দেশের আইনে প্রকৃত লিঙ্গসাম্য চাই। পুরুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে গণআন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। এমনটাই মনে করেন নারী হয়েও পুরুষাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে বাংলার প্রথম সারির মুখ নন্দিনী ভট্টাচার্য। তাদের লড়াই-সংগ্রামের কথা নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা’র মুখোমুখি অকপট নন্দিনী।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একটা মিথ। আমাদের ভুল ধারণা যে আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। এক সময় এটা ছিল, খুব বেশিভাবেই ছিল। মেয়েরা তখন অত্যন্ত নির্যাতিতা হতেন, এখনো হন না, একথা আমি বলছি না। তবে এখন আর খুব বেশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নেই। এই ধারনাটা বহু দিন ধরে চলে আসছে। আমাদের বোধ হয় এবার এটা বদলানোর সময় এসেছে।
দেখবেন, অনেক বাড়িতে ঠাকুমা অথবা মা কিংবা স্ত্রীর বাড়ির নানা নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি ঢুকে পড়েছে। আমি কিন্তু, অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বলছি না। বরং বলছি, সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে। লক্ষ্য করবেন, ছেলে মেয়ে কোন স্কুলে বা টিউশনে পড়বে, মা না শাশুড়ি কাকে বেশি দামি শাড়ি দেওয়া হবে- এসব সিদ্ধান্ত মোটামুটি এখন পরিবারের নারীরাই নিয়ে থাকেন।
আর, পুরুষরা ঠিক করেন ফারাক্কাকে কত কিউসেক পানি দেওয়া হবে বা আনবিক বোমা ফাটানোর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, এগুলো। এর থেকেই বোঝা যায়, পরিবার এবং বৃহত্তর পরিবার অর্থাৎ সমাজের দরকারি সিদ্ধান্তগুলো নারীরাই নিয়ে থাকেন।
যে দেশে ঘণ্টার হিসাবে পুরুষের হাতে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি-যৌন হেনস্থা ঘটে সেখানে দাঁড়িয়ে পুরুষাধিকার নিয়ে কথা বলাটা কি ন্যায্য? কী বলতে চান, পুরুষই শুধু ধর্ষণ-যৌন হেনস্তা করে? এ দেশে ১৮ শতাংশ পুরুষও নারীদের হাতে যৌন হেনস্থা-ধর্ষণের শিকার। কিছুদিন আগে পার্লামেন্টকে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে ধর্ষণের আইনটাকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ করা হয়। কিন্তু আমাদের মহান সংসদ তা অস্বীকার করেছে।
ধর্ষিত বা যৌন লাঞ্ছিত পুরুষ আপনাদের কাছে আসে? এ ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলি কেমন হয়? আমাদের কাছে এমন পুরুষরা আসেন। বহু ক্ষেত্রেই সেগুলি পুরুষদের বিরুদ্ধে ভুয়ো ধর্ষণ মামলা। আসলে ঘটনা অন্য রকম হয়।
মানে? এইসব পুরুষদের সাধারণত কে ধর্ষণ করে থাকে? পরিবারের মধ্যেই কখনো হয়। এ ধরনের ঘটনার একটা বড় অংশের শিকার হয় বয়ঃসন্ধির ছেলেরা। তারা যখন বাড়িতে এসে মা-বাবাকে বলে, তারা বলেন, এসব বলতে নেই। উনি তোমাকে ভালোবাসেন। মেয়েরা এমন অভিযোগ করলে এখন তাও বাবা-মায়েরা গুরুত্ব দিয়ে সে কথা শুনে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আজও ছেলেরা এসব বললে কেউ গুরুত্ব দেয় না লোকলজ্জার ভয়ে।
সেই সব পুরুষরা কেন সরব হন না? আপনাদের কেস স্টাডি কী বলছে এ ক্ষেত্রে? কৈশোরে ভয় পায়। আর বড় হয়েও ভয়-লজ্জা পায়। কারণ, বড় হয়ে যাওয়ার পর সে যে পুরুষ, তার মুখে এসব কথা মানায় না, এ বোধটা জন্মে যায়। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস