বাংলা সিনেমার নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। চার দশকের বেশি সময়ের অভিনয়জীবন তার। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত অসংখ্য হিতে সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত, যা আজওবাংলা সিনেমাপ্রেমীদের মনে দাগ কেটে আছে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে গড়ে তোলেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলন।
এ ছাড়া দুই বছর আগে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তবে এবার আর নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা। বলা যায়, অনেকটা কষ্ট নিয়েই নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। শুধু তাই নয়, রীতিমতো শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কিছু বিস্ফোরক মন্তব্যও করেছেন এই অভিনেতা।
কিছুদিন আগেই আয়োজিত হয়েছিল শিল্পী সমিতির বনভোজন। সেখানে অন্য তারকাদের সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনও হাজির হয়েছিলেন। তবে বনভোজনে উপস্থিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এই অভিনেত । সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় অভিনেতা জানান, দুঃখ নিয়েই সংগঠন থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জায়েদ খানে শিল্পী সমিতি থেকে সদস্যপদ বাতিল!
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সত্যি বলতে, আমি তো আসলে শিল্পী সমিতির নির্বাচন করতেই চাইনি। অনেক অনুরোধের পর আমি সিদ্ধান্ত নিই। সাধারণত আমি যে দায়িত্ব নিই, সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের চেষ্টা করি। এর আগে শিল্পী সমিতির সেক্রেটারি ছিলাম আমি।
অভিনেতা বলেন, সবসময়ই ভেবেছি যারা শিল্পী সমিতির সদস্য, তারা যেন অবশ্যই পেশাদার ও প্রকৃত শিল্পী হন। কিন্তু এবার শিল্পী সমিতি চালাতে গিয়ে দেখলাম, এখানে মোটেও সেটা নেই। জুনিয়র শিল্পী, নাচের শিল্পী, কেউ আবার ফাইটারদেরও নিজস্ব সংগঠন আছে। এদের সবারই শিল্পী পরিচয়টা রয়েছে দ্বিতীয়তে। অথচ তারা সবাই শিল্পী সমিতির পূর্ণ সদস্য হয়ে বসে আছেন। অথচ এই শিল্পী সমিতিতে আমাদের সময়ে নিয়ম, ১০ গুরুত্বপূর্ণ ছবির চরিত্রে অভিনয় করলেই সদস্যপদ পাওয়া যাবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব নিয়ম পুরোপুরি পাল্টে গেছে। নিয়ম না মেনেই অনেকে সদস্য হয়েছেন। শুধু ভোটের কারণে এমনটা ঘটেছে। তাই এসব নিয়ে সব সময় জটিলতা লেগেই থাকত।
তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে ছয় শতাধিক শিল্পী! এটা ভাবা যায়! তা-ও প্রকৃত শিল্পী! সক্রিয় শিল্পী। যাদের নিজস্ব সংগঠন আছে তারা আমাদের সমিতিতে সহযোগী হিসেবে থাকতে পারেন। কিন্তু ভোটাধিকার পাবেন না। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে এমন অনিয়ম চলছে। প্রকৃত শিল্পী কম থাকায় শিল্পী সমিতিতে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন নাচ ও ফাইটার সমিতির লোকজন। প্রকৃত শিল্পীর চেয়ে ওদের সংখ্যাটাই বেশি। এবার নির্বাচন করলাম, এর আগে নির্বাচন কমিশনার ছিল। তখনো আমার কানে এসেছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হয়। এই নির্বাচনেও টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে, আমি তো নিজের চোখে দেখলাম। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল যে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কেন টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হবে। আসলে এটা সমিতির পদ-পদবি ভিন্ন উপায়ে আয়-রোজগার করার সিস্টেম। তাই নির্বাচনে জিততে প্রকৃত শিল্পীদের বাইরে সবাই মরিয়া হয়ে ওঠেন।