আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ নেক কাজে প্রতিযোগিতা করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। ভালো কাজে যে যত বেশি প্রতিযোগিতা করবে আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা হবে ততবেশি। হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই ৪ কাজে প্রতিযোগিতার কথা বলেছেন। আমর-ইবাদত হিসেবে যার মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আজান ও প্রথম কাতারের (নামাজ পড়ার) মর্যাদা যদি মানুষ জানত আর কুর‘আ নিক্ষেপ (সমঅধিকারী একাধিক প্রার্থী থাকলে, সেখান থেকে একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তৎকালে প্রচলিত একধরনের লটারি) ব্যতীত সে সুযোগ তারা না পেত, তাহলে কুর‘আ নিক্ষেপ করত। তেমনি প্রথম ওয়াক্তে (নামাজের) জামাআতে শরিক হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানত, তাহলে তারা সেদিকে ছুটে যেত। তেমনি এশা ও ফজরের জামাআতে হাজির হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানত তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে হাজির হতো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসে ৪টি আমল-ইবাদতের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। বাস্তবেই যার গুরুত্ব অনেক বেশি। আমল-ইবাদত ৪টির ফজিলত ও বিবরণ তুলে ধরা হলো-
১. আজান দেওয়ার ফজিলত ও মর্যাদা
আজান দেওয়ার মাধ্যমে মুয়াজ্জিন মানুষকে আল্লাহর ঘরের দিকে (নামাজের জামাআতে আসতে) আহ্বান করে। এটি অত্যন্ত সৌভাগ্যের কাজ। কারণ কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনগণ লোকদের মাঝে সুদীর্ঘ ঘাড়বিশিষ্ট হবে।’ (ইবনে মাজাহ)
কেয়ামতের দিন তারা মর্যাদায় উচ্চ হবে। শুধু তাই নয়, কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাআলা বহু মাখলুক তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবদুর রহমান বিন আবু সাসাআহ বর্ণনা করেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বলেছেন, যখন তুমি গ্রামে বা বন-জঙ্গলে থাকবে, তখন উচ্চৈঃস্বরে আজান দেবে। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, জিন, মানুষ, বৃক্ষলতা ও পাথর যে-ই এই আজান শুনবে, সে তাঁর জন্য (আখেরাতে) সাক্ষ্য দেবে।
২. প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ফজিলত ও মর্যাদা
জামাআতের সঙ্গে নামাজ পড়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাওয়াবের হলো, প্রথম কাতারে নামাজ পড়া। কারণ প্রথম কাতারে নামাজ পড়লে আল্লাহর রহমত, ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত বারা ইবনে আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন।
৩. প্রথম ওয়াক্তে জামাআতে শরিক হওয়া
আগেভাগে মসজিদে যাওয়া, নামাজের জন্য অপেক্ষা করাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করে যতক্ষণ মুসাল্লায় বসে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য নিম্নরূপ দোয়া করতে থাকেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ
অর্থ : হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দিন, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন), যতক্ষণ না তার অজু ভঙ্গ হয়।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, সে যেন নামাজের মধ্যে থাকে।
৪. ইশা ও ফজরের নামাজ জামাআতে পড়া
সাধারণত মানুষ ইশা ও ফজরের নামাজের ব্যাারে বেশি অলসতা করে। অথচ এই দুটি ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করলে সারা রাত নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবু আমরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, একদিন মাগরিবের নামাজের পর হজরত উসমান ইবনু আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে একাকি এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন, ভাতিজা, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ইশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ ৪টি নেক আমল ও ভালো কাজ যথাসময়ে নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।