আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ফের বাড়ল ডলারের দাম। রোববার থেকে কার্যকর হচ্ছে বাড়তি দাম। ফলে আমদানিতে আগের চেয়ে আরও ৫০ পয়সা বেশি দামে কিনতে হবে ডলার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দিতে হবে আরও বেশি।
কেননা ব্যাংক সীমার চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। যার ফলে আমদানি খরচ বেড়ে পণ্যের দামও বাড়বে। এছাড়া যে কোনো ধরনের কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করলে আগের চেয়ে এক টাকা বেশি পরিশোধ করতে হবে।
নগদ, ড্রাফট বা টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে দেনা পরিশোধ করলেও বাড়তি টাকা গুনতে হবে। এতে ভোক্তার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে।
বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় টাকার মান কমে যাবে। টাকার মান কমে যাওয়ায় ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতাও কমবে। সব মিলে দুর্ভোগ বাড়বে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের। মধ্যবিত্তের জীবন যাপনে আরও নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।
আরো পড়ুনঃবজ্রপাতে অন্তত ১০ নিহত
বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে ডলারের দাম আরও এক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ পাবেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে পেতেন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রপ্তানিকারকরা বাড়তি পাবেন এক টাকা।
প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের ডলারের পাবেন সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে পেতেন ১০৯ টাকা। তারা প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বেশি পাবেন।
বেশি দামে ডলার কেনার কারণে ব্যাংকগুলোও বেশি দামে বিক্রি করবে। ফলে আমদানিতে ডলারের দামও ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
আগে বিক্রি হতো ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এখন তা বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। কার্ডে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হবে ১১২ টাকা। এটা আগে ছিল ১১১ টাকা।
এ বিষয়ে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) বাফেদা থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাফেদার মাধ্যমে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই ডলারের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেণ যুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাবে ডলারের দামও বাড়তে থাকে। মূলত গত বছরের মার্চ থেকেই ডলারের সংকট শুরু হয়। এখন সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
২০২১ সালের আগে ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা, গত বছর আগস্টে তা বেড়ে হয় ৯৫ টাকা। ওই এক বছরে দাম বেড়েছে ১১ টাকা। বর্তমানে প্রতি ডলার দাম বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ টাকা। আর দুই বছরে দাম বেড়েছে ২৬ টাকা। আ এই সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ টাকার মান একই হারে কমেছে।
একদিকে পণ্যমূল্য বেড়েছে, অন্যদিকে টাকার মান কমছে বেড়েছে। ফলে মানুষ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারছে না। এর প্রভাবে নিম্মমূখি হচ্ছে জীবনযাত্রার মান। খাদ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় কমিয়ে দিতে হচ্ছে। অপুষ্টিজনিত রোগ বাড়ছে, কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এছাড়া শিক্ষা, বিনোদন ব্যয়ও কাটছাঁট করতে হচ্ছে। ভোগান্তি বেড়েছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের।
এদিকে সর্বশেষ ডলারের দাম নতুন করে বাড়ানোর ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়বে। কারণ বাড়তি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হবে। ফলে নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম আরো বাড়বে।
আর টাকায় মান কমে যাওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। যে কারণে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি হয়েছে অর্থাৎ ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এর মধ্যে শহরের চেয়ে গ্রামে আবার মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করেছে। জুলাইয়ে গ্রামে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। গ্রামে এ হার এখন ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। যা বর্তমান সময়ে মূল্যস্ফীতির হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য উৎপাদন হয় ও সরবরাহ বেশি সেখানেই খাদ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ছে।