আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। মুমিন বান্দার সবচেয়ে প্রিয় সময়ের নামাজ হচ্ছে সকালের ফজর নামাজ। ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের পর ফরজ নামাজ পড়তে হয়। এ নামাজ সংখ্যায় যেমন অল্প তেমনি তা আদায়ে স্বস্থি ও প্রশান্তি লাভের পাশাপাশি উপকারিতাও অনেক বেশি।
মুমিন বান্দা ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে লাভ করে আল্লাহর নিরাপত্তা। অথচ অধিকাংশ মানুষই ঘুমের ঘোরে তা পরিত্যাগ করে। ফজরের নামাজের উপকারিতা বর্ণনায় রয়েছে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদিস।
প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তারা জানতো যে, ইশা ও ফজরের নামাজে কি ফজিলত রয়েছে, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও (ফজর ও ইশার) জামাতে এসে শামিল হতো।’ (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় প্রিয় নবি করিম (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে সে সারাদিন আল্লাহ তাআলার জিম্মায় (নিরাপত্তায়) থাকে।’ সুবহানাল্লাহ!
হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, এক মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নিরাপত্তার চেয়ে উত্তম নিরাপত্তা আর কী হতে পারে।
উল্লেখ্য, ফজরের সময় শুরু হওয়া থেকে ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ রোজার সময়ও শুরু হয়।
ফজরের নামাজ আদায়ে বিশেষ ৮টি উপকারী দিক যা হাদিস শরিফে এসেছে-
(১) ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। ‘যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো।’ (মুসলিম শরিফ)
(২) ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।’ (মুসলিম)
(৩) ফজরের নামায কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দিবে-
‘যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও।’ (আবু দাউদ)
(৪) সরাসরি জান্নাত প্রাপ্তি-
‘যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে, জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হলো ফজর ও আসর।’ (বুখারী)
(৫) রিজিকে বরকত আসবে-
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, সকালবেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাঁধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বন্টন করা হয়।
(৬) ফজরের নামাজ পড়লে, দুনিয়া আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে-
‘ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (তিরিমিযি)
(৭) সরাসরি মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে-
‘তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফিরিশতাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদেরকে নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাজরত ছিল।’ (বুখারি)
(৮) ফজরের নামাজ দিয়ে দিনটা শুরু করলে, পুরো দিনের কার্যক্রমের একটা বরকতম সূচনা হবে।
প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন-
‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্যে, তার সকাল বেলায় বরকত দান করুন।’ (তিরমিযী)
ফজরের নামাজ এমন এক উপকারি নামাজ, যে নামাজ মানুষের ইবাদত বন্দেগিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সে বর্ণনা সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন। কেউ যদি ফজরের নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করে তবে সারারাত জেগে ইবাদত করার সাওয়াব পায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতে ইশার নামাজ আদায় করে, সে অর্ধ রাত ইবাদতের সাওয়াব পায়। আর যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করে সে সারারাত ইবাদত করার সাওয়াব পায়।’ সুবহানাল্লাহ!
ফজরের মাত্র দু’রাকাআত নামাজ জামাআতে আদায় করার ফলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সারারাত ইবাদতের সাওয়াবের পাশাপাশি সারাদিনের নিরাপত্তা গ্রহণ করেন। একজন মুমিন বান্দার জন্য এরচেয়ে সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে?
হাদিসের আলোকে ফজরের নামাজ আদায়কারীর সুসংবাদগুলো হলো-
(১) আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করা যায়।
(২) ঘুমিয়ে থেকেও সারারাত ইবাদতের সাওয়াব লাভ করা যায়।
(৩) কেয়ামতের দিন পুরিপূর্ণ আলোর সুসংবাদও দিয়েছেন প্রিয় নবি।