শাফিন আহমেদ বলেন, ‘৪০ বছর ধরেই মাইলস সক্রিয়ভাবে গান করছে। আমরা দুই ভাই খুব অল্প বয়সে এ দলে যোগ দিয়েছি। এত বছর এমন নয় যে নাম নিয়ে বসে আছি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত নতুন গান করছি, কনসার্টে বাজাচ্ছি। স্টেজে আমাদের উপস্থিতি এখনো ভক্ত-শ্রোতারা উপভোগ করে। এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। এই সময়ে আমরা সবার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।’
সংগীতশিল্পী ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু করে মাইলস। তারপর পাড়ি দিয়েছে চার দশকের পথ। এবার ৪০ বছরে পা দিয়েছে মাইলস। এ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে ছয় মাসব্যাপী কনসার্ট করবে এই ব্যান্ড। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন ব্যান্ডের সদস্যরা। এখানে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় কনসার্ট করবে ব্যান্ডটি। আজ সোমবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য ও ইকবাল আসিফ জুয়েল। আরও ছিলেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান উইন্ডমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির রহমান তানিম।
মাইলসের প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রকাশ হয় ১৯৯১ সালে। তার আগে প্রকাশিত হয় দুটি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘এ স্টেপ ফাদার’। মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘নীলা’, ‘কী জাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘পিয়াসি মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’, ‘প্রিয়তমা মেঘ’ ইত্যাদি।
শুধু গান নয়, ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরও বেশ কিছু আয়োজন করেছে। মাইলসের ব্যবহার করা বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনী, মাইলসের বিভিন্ন সময়ের ছবি প্রদর্শন, মাইলসের বিভিন্ন অর্জন প্রদর্শন, গানের কথা এবং তার পেছনের কাহিনিসহ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবে তারা। ইতিমধ্যে মাইলসের সদস্যদের মধ্যে হ্যাপি আখান্দ, মিল্টন আকবরসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। বিশেষ আয়োজনে তাঁদেরও স্মরণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শাফিন আহমেদ জানান, মাইলসের এ পর্যন্ত ১১টি অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে। পাশাপাশি ৪টি বেস্ট অব অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ভারত থেকে দুটি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি বেরিয়েছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শো করে মাইলস। সেখানে মাইলস একক আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭৯ সালে মাইলস যাত্রা শুরু করলেও মাইলসের জন্য ১৯৮২ সাল বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। কারণ তখন সাধারণ শ্রোতাদের সামনে হাজির হয় মাইলস। এর আগে শুধু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাজাত মাইলস, যেখানে সাধারণ শ্রোতার আনাগোনা কম ছিল।
হামিন আহমেদ বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য আনন্দের একটি বছর। সারা বছরই আমরা কাটিয়ে দেব আমাদের শ্রোতা, দর্শক এবং ভক্তদের নিয়ে।’
হামিন আহমেদ জানান, মাইলসের ৪০ বছর পূর্তি উদ্যাপন শুরু হবে যুক্তরাষ্ট্র সফর দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ১২টি শহরে একক শোতে অংশ নেবে মাইলস। এরপর সেপ্টেম্বরে কানাডায় যাবে। সেখানেও ছয়টি শো হবে। দেশে ফিরেই আবার অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় ৫-৬টি শোতে অংশ নেবে মাইলস। তারপর দেশে।
উইন্ডমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির রহমান বলেন, দেশের বাইরে ব্যান্ডগুলো অনেক জনপ্রিয়, তার অন্যতম কারণ তাদের উপস্থাপন। বিভিন্ন দেশে স্পনসরের মাধ্যমে বড় আয়োজন করে থাকে বিদেশি ব্যান্ডগুলো। এ দেশেও তা শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতা এবারের মাইলসের কনসার্ট। তবে আমরা একটু আলাদাভাবে এই আয়োজন করছি। শুধু একটি ইভেন্টের মাধ্যমে ৪০ বছর পূর্তিকে শেষ করবে না। এটা অনেক শ্রোতা বা দর্শকের অংশগ্রহণে হবে। এই জার্নিকে বলছি ‘ম্যাজিক অব মাইলস’।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় কনসার্টের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজন হবে গ্র্যান্ড গালা কনসার্ট। স্থানীয় এই আয়োজনে সহযোগিতায় থাকছে উইন্ডমিল অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড। এই আয়োজনে মাইলসের জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি দলের সদস্যদের পছন্দের অনেক গান করবে। এ ছাড়া দেশের অন্য শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড নগরবাউল, ফিডব্যাক, ওয়ারফেজ, দলছুট ব্যান্ড মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলো ঢাকার কনসার্টে পরিবেশন করবে।