টিকটক-স্ন্যাকভিডিও : ইসলামের নির্দেশনা

বর্তমান সময়ে সমাজের  ভেতরে টিকটক, স্ন্যাকভিডিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটি বন্ধু থেকে শুরু করে ছোটবড় অনেকেই টিকটক, স্ন্যাকভিডিও অ্যাপ ডাউনলোড ও অন্যজনকে রেফার করার মাধ্যমে, কয়েক হাজার টাকা ইনকাম করে নিচ্ছে। এরেই সুবাদে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কিভাবে মার্কেটিং করতে হয়। তা বড় ভাই থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, ছোটবড় বেশ ভালো শিখেছে। তাদের সকলের একটি চাওয়া, অ্যাপ ডাউনলোড করা। ছোটবড় সবাই এতে অ্যাকাউন্ট খেলায় আগ্রহী। এ থেকে রেফার করলে ঘরে বসেই কয়েক হাজার টাকা ইনকাম। অ্যাকাউন্ট খুলার জন্য, শুধু সাধারণ পাবলিক ই নয় অনেক হাফেজ, আলেম, শিক্ষিত সমাজ, যুবসমাজ ও এই কাজে লিপ্ত হয়েছে।

শিক্ষিত সমাজ ভালোভাবেই জানে টিকটক, স্ন্যাকভিডিও-এর অশ্লীলতা-বেহায়াপনা সম্পর্কে। আর এটা রেফার বা খোলার মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছে সকলের হাতে হাতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। বাইরের দেশগুলো গোপনে আমাদের হাজার বছরের প্রচলিত সংস্কৃতি ধ্বংস করতেই। এই প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার  করছে। যা সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে এক অন্ধকার রাজ্যে, যে রাজ্যে প্রবেশ করলে তা থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। লোভ-লালসা মানুষকে আলো পথ থেকে অন্ধকার পথে নিমজ্জিত করে। তখন সে কোন পথে পা বাড়াচ্ছে, তা সে উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে একের পর এক অপকর্ম, মাদকাসক্ত, নারীপাচার, বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। টিভির চ্যানেল পত্রপত্রিকা দেখা যায়, গবেষক, চিন্তাবিদ, নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিরোধিতা করে আসছেন।

হাদিসে মোবারকায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একটি যুগ আসবে যখন মানুষ উপার্জন করতে একথা চিন্তা করবে না যে, আমি হালাল পন্থায় উপার্জন করছি,নাকি হারাম পন্থায়! (সহিহ বুখারি,হাদিস নং-১৯৪১) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্তক করে সুরা আন-নূরে  বলেন, ‘যারা চায় মুমিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।’ (আয়াত নং-১৯)

পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আয়াতের প্রত্যক্ষ অর্থ হচ্ছে, যারা এ ধরনের অপবাদ তৈরি করে ও তা প্রচার করে মুসলিম সমাজে চরিত্রহীনতার প্রসার ঘটাবার এবং উম্মতে মুসলিমার চরিত্র হননের চেষ্টা করছে তারা শাস্তিলাভের যোগ্য। কার্যত ব্যভিচারে আড্ডা কায়েম করার ওপরও এগুলো প্রযুক্ত হয়। আবার চরিত্রহীনতাকে উৎসাহিত করা এবং সেজন্য আবেগ-অনুভূতিকে উদ্দীপিত ও উত্তেজিতকারী কিস্সা-কাহিনী, ওপরও প্রযুক্ত হয়। তাছাড়া এমন ধরনের ক্লাব, হোটেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় এসে যায় যেখানে নারী-পুরুষের মিলিত নৃত্য ও মিলিত আমোদ ফূর্তির ব্যবস্থা করা হয়। কোরআন পরিষ্কার বলছে, এরা সবাই অপরাধী। কেবল আখেরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও এদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কাজেই অশ্লীলতার এসব উপায়-উপকরণের পথ রোধ করা একটি ইসলামী রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কোরআন এখানে যে সমস্ত কাজকে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ গণ্য করছে এবং যেগুলো সম্পাদনকারীকে শাস্তিলাভের যোগ্য বলে ফায়সালা দিচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের দণ্ডবিধি আইনে সে সমস্ত কাজ শাস্তিযোগ্য ও পুলিশের হস্তক্ষেপ লাভের উপযোগী হতে হবে।

তোমরা জানো না এ ধরনের এক একটি কাজের প্রভাব সমাজে কোথায় কোথায় পৌঁছে যায়, কত লোক এগুলোতে প্রভাবিত হয় এবং সামষ্টিকভাবে এর কি পরিমাণ ক্ষতি সমাজ জীবনকে বরদাশত করতে হয়। এ বিষয়টি আল্লাহই খুব ভালোভাবে জানেন। কাজেই আল্লাহর ওপর নির্ভর করো ও দাবিয়ে দেবার চেষ্টা করো। এগুলো ছোট ছোট বিষয় নয় যে, এগুলোর প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে হবে। আসলে এগুলো অনেক বড় বিষয়। কাজেই যারা এসব কাজ করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক। আমিন।

Leave a Reply

Translate »