আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ গ্রীষ্মের তাপদাহে নাজেহাল অবস্থা সকলেরই। অতিরিক্ত গরম থেকে রেহাই পেতে আমরা সাধারণত ফ্যান কিংবা এসির উপরেই নির্ভরশিল। এতে বাড়ে বিদ্যুৎ বিল। আর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল মানেই উর্ধগতির এই বাজারে পকেটের উপরে এক্সট্রা প্রেসার। তাই অতিরিক্ত খরচ এবং গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্যে সাশ্রয়ী মূল্যে এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে ঘর ঠান্ডা রাখার একমাত্র টোটকা হচ্ছে গাছ। হ্যা বিভিন্ন আধুনিক গবেষনা এখন তা-ই বলছে। এসব গাছ যে শুধু প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখে তা-ই নয়, ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করতেও সহায়তা করে।
চলুন তাহলে জেনে আসা যাক সেই ইনডোর গাছগুলোকে নিয়ে।
রাবার প্ল্যান্টঃ এই গাছের পাতাগুলো বড় বড় তাই ঘর ঠান্ডা রাখার ক্ষমতাও এদের বেশি। রাবার গাছ পরিবেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড দীর্ঘক্ষণ তাপ ধরে রাখে। আর ঘরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে ঘর দ্রুত গরম হয়ে যায়। এছাড়া উপকারী এই গাছটি বাতাসে উপস্থিত ফরমালডিহাইডকে শোষণ করে পরিবেশকে বিশুদ্ধ রাখতেও সাহায্য করে। ঘরের অক্সিজেন এবং উষ্ণতার মাত্রা বজায় রাখতে রাবার গাছ দারুন কার্যকর। গাছটির খুব বেশি যত্ন দরকার হয় না, মাঝে মাঝেই একটু পানি ছিটিয়ে দিলেই গাছটি দিব্যি বেঁচে থাকে।
বস্টন ফার্নঃ শুধু ঘরের তাপমাত্রা কমানোই নয়, এটি একই সঙ্গে হিউমিডিফায়ার এবং পিউরিফায়ার হিসেবে কাজ করে গাছটি। বায়ুতে উপস্থিত নানা রকম উদ্বায়ী জৈব যৌগসমূহকে দূর করে। তবে ফার্ন যেহেতু শীতল পরিবেশের গাছ, তাই এটি রাখতে হবে ছায়ায়, ঘন ঘন পানিও দিতে হবে।
চাইনিজ এভারগ্রিনঃ চাইনিজ এভারগ্রিন খুব সুন্দর একটি গাছ। এটি বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে বাতাস পরিশুদ্ধ করার জন্য সুপরিচিত। এই গাছ অনেকগুলো একসাথে রাখলে নিজস্ব বায়ুমণ্ডলীয় বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে পারে। এর অনেকগুলো জাত রয়েছে। তবে ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য ‘লাস ফলিয়েজ’ জাতের গাছগুলোর তুলনা হয় না।
এরিকা পামঃ এরিকা পাম একটু বড় আকারের একটি ইনডোর প্ল্যান্ট। বাড়িতে জায়গার অভাব না থাকলে বসার ঘরে রাখতে পারেন এরিকা পাম। এটি তাল গাছের মতোই দেখতে। এরিকা পাম এক দিকে ঘর ঠান্ডা রাখে, আবার দেখতেও ভাল লাগে। শুধু বাড়ি নয়, এই গাছটি হোটেল, অফিস এবং অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানে সাজাতেও ব্যবহৃত হয়।
স্পাইডার প্লান্টঃ ঘরের গাছপ্রেমীদের খুব পছন্দের একটি গাছ হচ্ছে এই স্পাইডার প্লান্ট। খুব অল্প পরিশ্রমে আর সহজেই ঘরের ভেতরে এই গাছ বাঁচে। মাকড়সা যেমন ছায়ার প্রাণী, তেমনই এই গাছকেও ছায়ায় রাখতে হয়। মানে ঘরের ভিতরে রাখতে হবে। আর তাতেই এটি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাতাস পরিশুদ্ধ করবে, কমিয়ে দেবে ঘরের উষ্ণতা। পাশাপাশি বাতাসে উপস্থিত ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ শোষণ করে নেয়।
মানি প্লান্টঃ বাতাস বিশুদ্ধ করতে হিউমিডিফায়ার হিসেবে গোল্ডেন পোথোস বা মানি প্ল্যান্ট খুবই কার্যকর। মানি প্ল্যান্ট বাতাস থেকে একাধিক বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে পারে। শুধু কি তাই, ঘরে ভেতরে থাকা নানা রকম দূষিত পদার্থ, যেমন-ফরমালডিহাইড, বেনজিন, জাইলিন এবং কার্বন মনোক্সাইড দূর করে ঘরকে সতেজ রাখে।এই গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণও তুলনামূলক সহজ। শুধু গাছটির পাতা বা কান্ড হলুদ হয়ে গেলে দ্রুত তা কেটে ফেলতে হবে।
স্নেক প্লান্টঃ সৌন্দর্য বর্ধন ও নানা উপকারের কারণে বাড়িতে এখন অনেকেই স্নেক প্ল্যান্ট লাগান। বিশেষ করে এই গাছ লিভিংরূম ও বেডরুমের জন্য উপযুক্ত। কারণ এই গাছটি অক্সিজেন শোষণ করে না। বরং অক্সিজেন ছেড়ে ঘরকে শীতল ও সতেজ রাখে। এটি অনেক রসালো এবং রাতে অক্সিজেন নিঃসরণ করে ফলে ঘরের বাতাস শীতল থাকে। এই কারণে গাছটির আরেকটি নাম রয়েছে, ‘মাদার ইন লস টাঙ’। এছাড়াও গাছটি বাতাস থেকে টক্সিন অপসারণের জন্যও পরিচিত। এই গাছগুলোও বাতাসে উপস্থিত ফরমালডিহাইড এবং বেনজিন শোষণ করে নেয়।
পিসি লিলিঃ পিস লিলির আছে অনবদ্য ফুলের শোভা। আর এই গাছের পাতাগুলোও বেশ বড় বড়। এ গাছটি যেমন চোখে শান্তি আনে, তেমনই গরমে বাতাস শীতল রেখে আরামও দেয়। পরিবেশ থেকে বিভিন্ন রকম বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে আনে। গাছটি কেনার সময়ে মনে রাখবেন যে গাছে যত পাতা, সেই গাছ পরিবেশকে তত বেশি শীতল রাখে। তাই একটু বড় পাতা দেখে কেনা ভালো।
এলোভেরাঃ এলোভেরা যে কেবল রূপচর্চায় উপকারী তা কিন্তু নয়। এর পাতার ভিতরে থাকে জলীয় ওষধি উপাদান, যা ত্বকে লাগালে নিমেষে ক্ষত বা পোড়া জুড়িয়ে যায়। একই সঙ্গে ঘরের তাপমাত্রা কমাতেও কাজে আসে গাছটি। বাড়িতে এলোভেরা থাকলে ঘর কেবল শীতলই থাকবে তা নয়। এটি বাতাসের তাপমাত্রা হ্রাস করে এবং ঘরের পরিবেশ গরম হওয়া ঠেকিয়ে দেয়। এলোভেরার গাছ উজ্জ্বল আলোতে ভালো হয়।