ক্রোধ নিয়ন্ত্রণকারীই প্রকৃত বীর

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃক্রোধ ভয়ংকর ব্যাধি। এ রোগ যার দেহে বাসা বেঁধেছে সে নিশ্চিত অধঃপতনের দিকে নিমজ্জিত হবে। ক্রোধ স্বভাবটি কারও জন্য ভালো না। এর কুফল অতি মন্দ। ক্রোধ করা গুনাহ, পক্ষান্তরে রাগ বর্জন করা ইবাদত। সব সময় নিজেকে রাগ থেকে বিরত রাখতে হবে। রাগী ব্যক্তি কারও সঙ্গে দীর্ঘকাল মিশে থাকতে পারে না। কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর বন্ধুত্ব ভেঙে পড়ে। তাই ক্রোধ করা ইসলামে হারাম। রাগের স্বভাব বর্জনীয়। সামান্যতম রাগ একটি ফুলের সংসারকে এক মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারে। রাগের মুহূর্তে রাগ নিয়ন্ত্রণ করাকে হাদিসের ভাষায় বীর বলা হয়েছে। এ বীরত্ব সবার অর্জন হয় না। তবে নিজে হিম্মত-চেষ্টা করলে এবং শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতির অনুসরণ করলে অবশ্য রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ, ইচ্ছা করলে উপায় হয়। সুতরাং প্রতিটি মোমিনের ইচ্ছা হতে হবে রাগের বিরুদ্ধে সর্বদা লড়াই করা। রাগের প্রভাব থেকে সদেহকে মুক্ত রাখা।

ক্রোধ করা উচিত নয়

রাগ সকল অনর্থের মূল। রাগের মুহূর্তে মানুষ কথাবার্তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এমনকি গালিগালাজ পর্যন্ত দিতে শুরু করে। তখন ক্ষুদ্র সমস্যা বড় সমস্যায় রূপ নিতে দেখা যায়। বিশেষ করে পারিবারিক সমস্যার সমাধানে রাগান্বিত অবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি সর্বদা সংযমী হতে হবে। একইভাবে বিচারককে বিচারের ক্ষেত্রে, নেতাকে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে, শিক্ষককে শিক্ষার্থীকে শাসনের ক্ষেত্রে স্বীয় রাগ নিয়ন্ত্রণে বীরত্বের পরিচয় দিতে হবে। কারণ, রাগ নিয়ন্ত্রণই বীরত্বের পরিচায়ক। তাই রাগান্বিত অবস্থায় ক্রোধ দমানো উচিত। হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কাছে অনুরোধ করল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, রাগান্বিত হয়ো না। লোকটি একই প্রশ্ন কয়েকবার করল। প্রতিবারই রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন, রাগান্বিত হয়ো না। (বোখারি : ৬১৮৪)

আরও পড়ুনঃ কাজু বাদামের যত পুষ্টিগুন

ক্রোধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রকৃত বীর

রাগান্বিত অবস্থায় কোনো অঘটন ঘটানো বা অযৌক্তিকভাবে কটুভাষায় কথা বলা সাহসিকতা নয়। বরং সাহসিকতা হলো ক্রোধ দমিয়ে জেনেশুনে কাজ করা। এটাই হবে ব্যক্তির জন্য বীরত্ব। কেননা, রাগ দমনকারীকে হাদিসের ভাষায় বীর বলা হয়েছে। যার মধ্যে এ স্বভাব থাকবে সে নিশ্চিত ছোট-বড় ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে। ইনশা আল্লাহ! আর তার মধ্যে ধীর-স্থির কাজ করার অভ্যাস সৃষ্টি হবে। ক্রোধান্বিত অবস্থা তার কাছে নত হবে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, মল্লযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিহতকারী প্রকৃত বীর নয়। প্রকৃত বীর তো সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (বোখারি : ৬১৮২)

ক্রোধ দমনের পাথেয়

মানব জাতি রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থতার জন্য ওষুধ সেবন করে। এর ফলে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়। তেমনিভাবে রাগও একটি ব্যাধি। যে ব্যক্তি রাগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তাকে বাঁচার জন্য ইসলাম কয়েকটি মহৌষধি পদ্ধতির শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু মোমিন ক্রোধ দমানোর জন্য ইসলাম নির্দেশিত আমলগুলো করে না, বরং জাগতিক কুরুচিপূর্ণ পদ্ধতির অনুসরণ করে। যেমন, ধূমপান করা, আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা, নিজের শিশু বাচ্চাদের প্রহার করা ইত্যাদি। সুতরাং মোমিনরা রাগান্বিত অবস্থায় ইসলাম নির্দেশিত পদ্ধতিসমূহের আমল করা অতীব প্রয়োজন। এতে নিজেকে রাগান্বিত অবস্থার ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হবে। এমনকি স্বীয় মন ও দেহ ধীরে ধীরে স্থিতিশীল ও সতেজে রূপ নেবে।
সাধারণত হাদিস শাস্ত্রে রাগ দমানোর তিনটি পদ্ধতি পাওয়া যায়। এক. রাগান্বিত অবস্থায় “আয়ুজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম” পড়া। দুই. রাগ আসা মাত্রই অজু করা। তিন. যে অবস্থায় রাগ এসেছে, সেটা পরিবর্তন করা। যেমন, দাঁড়ানো অবস্থায় রাগ আসলে বসে যাওয়া, বসা অবস্থায় রাগ আসলে শুয়ে পড়া, ঘরে অবস্থানকালে রাগ আসলে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। (সূরা আরাফ : ২০০, আবু দাউদ : ৪৭৮৪ ও ৪৭৮৬)

রাগ দমনের গুরুত্ব

মানুষের প্রতিটি কাজের একটি বিনিময় বা প্রতিদান থাকে। রাগ দমন করাও একটি কাজ। তবে এ কাজ সহজ নয়। এর জন্য থাকতে হয় পাহাড় পরিমাণ সাহস আর ক্ষুধার্তের মতো ধৈর্য। কেননা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মুহূর্তেই যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা হলো বীরত্বের সমপরিমাণ কাজ। যে ব্যক্তি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে পরকালে সফলকাম হবে। তাকে জান্নাতি হুর দ্বারা সম্মানিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাগ বাস্তবায়ন করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও তা দমন করবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে সকল মাখলুকের সামনে ডেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী হুর বেছে নিতে বলবেন। (আবু দাউদ : ৪৭৭৯)

Leave a Reply

Translate »