ওসি প্রদীপের নির্দেশে সিনহাকে গুলি করে লিয়াকত

টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে সিনহা মো. রাশেদ খান খুন হন বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী ও নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আলোচিত হত্যা মামলাটির বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

আদালতে তিনি হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে অভিযুক্ত ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ মামলার ১৫ জন আসামি। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

আইনজীবী হিসেবে ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি মোজাফফর আহমদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ।

আদালত সূত্র জানায়, প্রথম দফায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে সাক্ষ্য গ্রহণ। এক ঘণ্টা বিরতির পর বেলা সাড়ে তিনটায় আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি ঘোষণা হয়।

এ সময় ১২ আসামির পক্ষের নিযুক্ত ৯ জন আইনজীবী মামলার বাদীকে ঘটনার নানা ইস্যুতে জেরা করেন। সময়ের অভাবে মামলার অপর তিন আসামি ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এএসআই লিটন মিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা মামলার বাদীকে জেরা করতে পারেননি।

ওসি প্রদীপের পক্ষে লড়তে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সময়ের অভাবে মামলার বাদীকে জেরা করতে পারেননি তিনি, মঙ্গলবার সকালে জেরার সময় নির্ধারিত হয়েছে।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পিপি ফরিদুল আলম বলেন, সোমবার (২৩ আগস্ট) মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসসহ পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সাক্ষ্য দিয়েছেন কেবল মামলার বাদী। ২৪ ও ২৫ আগস্ট আরও দুই দিন সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে। এ সময় আরও ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে।

পিপি ফরিদুল আলম বলেন, হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরে মামলার বাদী আদালতকে বলেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে এবং বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ন্যায়বিচার আশা করেন। আদালতের কাছে তিনি সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ১৫ জন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

সোমবার (২৩ আগস্ট) সকাল সোয়া ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়।

তারা হলেন পুলিশের ৯ সদস্য ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

সোমবার (২৩ আগস্ট) সকাল সোয়া ১০টার দিকে আদালতের কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলমের সঙ্গে এজলাসে প্রবেশ করেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। পুলিশের মামলায় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও আটক করে পুলিশ। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।

ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

গ্রেফতার আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এ মামলার মোট সাক্ষী ৮৩ জন।

Leave a Reply

Translate »