বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান তারকা হিসেবে তাঁকে মনে করা হতো। বক্স অফিসে তাঁর শেষ ছবি ছিল ‘ছিঁছোড়ে’। অবশ্য নেটফ্লিক্সের ছবি ‘ড্রাইভ’–এ শেষবার দেখা গিয়েছে তাঁকে। স্বাস্থ্যসচেতন ছিলেন সুদর্শন সুশান্ত সিং রাজপুত। জনপ্রিয়তাও কম না। বিশেষ করে তাঁর মেয়ে ভক্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশিই ছিল। সাফল্য, অর্থ, শিক্ষা—সব ছিল, সব ছেড়ে কেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সে পাড়ি দিলেন অনন্তযাত্রায়?
সুশান্ত সিং রাজপুতের ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে অবসাদ কাটানোর ওষুধ। তবে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি, আত্মহত্যার খবর নিশ্চিত করে জানাল পুলিশ। মানসিক অবসাদের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই সুশান্তের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভাবা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর ফরেন্সিক টেস্টের জন্যও পাঠানো হবে বলে মুম্বই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই সুশান্তের বাড়ির পরিচারিকা ও বন্ধুদের বয়ান নিয়েছে পুলিশ। অভিনেতার কল রেকর্ডও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে সুশান্তের মৃত্য়ুর খবর, মিলতেই তাঁর বান্দ্রার ফ্ল্য়াটের নিজে ভিড় করেন তাঁর অগণিত ভক্ত। শোকের ছায়া নেমে আসে বলিউড আঙ্গনসহ সকল মহলে।
টুইটে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘সুশান্ত সিং রাজপুত… একজন প্রতিভাবান তরুণ অভিনেতা, খুব দ্রুত চলে গেলেন। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। তাঁর আগমনে বিশ্ব-বিনোদন অঙ্গনের অনেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এবং দারুণ সব পারফরম্যান্স ও স্মৃতি রেখে গেলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর পরিবার ও ভক্তদের প্রতি রইল সমবেদনা। ওম শান্তি।
মুম্বাই পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যাই করেছেন। ছয় মাস ধরে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। চলছিল চিকিৎসাও। তাঁর ঘর থেকে তেমন বেশ কিছু কাগজপত্র ও ওষুধ মিলেছে, তা থেকে স্পষ্ট যে তিনি অবসাদের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। এ ছাড়া বিগত তিন মাস লকডাউনের সময় একাই ছিলেন সুশান্ত। এসব নানা হিসাব করে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, আত্মহত্যাই করেছেন সুশান্ত। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে এসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে দিয়েছেন মুম্বাইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার দত্তরেয়া বাগগুড়ে।
রোববার সকালে বাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর গৃহকর্মী পুলিশকে ফোন করে ঘটনার খবর দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সুশান্তের বাড়ির পরিচারক তাঁর আত্মহত্যার খবর থানায় জানান। সে অনুযায়ী বাড়ি গিয়ে পৌঁছায় স্থানীয় থানার পুলিশ। দুর্ঘটনার সময় তাঁর কিছু বন্ধুও বাড়িতে ছিলেন বলে জানা গেছে। সকালে উঠে বন্ধুরা সুশান্তকে ডেকেও কোনো সাড়া পাননি। তাঁরা ঘরে ঢুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁকে। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই আত্মহত্যা করেন তাঁর সাবেক ম্যানেজার দিশা সালিয়াঁ। দিশা সালিয়াঁ মুম্বাইয়ের মালাডে মালবনী এলাকায় একটি বাড়ির ১৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
সুশান্তের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতই। ভিড় উপচে পড়ে বান্দ্রায় সুশান্তের বাড়ির সামনে। কেন আত্মহত্যা করলেন অভিনেতা? সবার মনে যেন একটাই প্রশ্ন, এত হাসিখুশি ছেলেটা কেন এমন কাজ করতে গেল?তাঁর টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়, তিনি ভালোবাসতেন নিজের জীবনকে সামাজিকভাবে শেয়ার করতে। কখনো শেয়ার করেছেন কম্পিউটার গেমস নিয়ে, জানিয়েছেন তাঁর এই গেমের প্রতি ভালোবাসা, গেমিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার ইচ্ছার কথা, আবার কখনো শেয়ার করেছেন দৈনন্দিন রুটিন। কোন ডায়েটে আছেন, কতক্ষণ ঘুমানো উচিত—এ রকম নানা কিছু। সেই সুশান্তের শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে রয়েছে তাঁর মায়ের সঙ্গে নিজের একটি সাদাকালো ছবি।
ছোট্ট জীবন। ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাটনায় জন্ম সুশান্তের। একসময় দিল্লিতে চলে আসে তাঁর পরিবার। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় থেকেই থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। তার জন্য পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।
শেষ করতে না পারা অনেক বিষয়ই আছে সুশান্তের। আজ সকালে যেমন সব কিছু রেখে চলে গেলেন। জানা গেছে, মৃত্যুর মূল কারণ উদ্ঘাটন করতে ময়নাতদন্তের জন্য মুম্বাইয়ের ভাবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুশান্তকে। হয়তো মৃত্যুর চূড়ান্ত রহস্যটা জানা যাবে সেখানে। আত্মহত্যা হলে হয়তো তাঁর কারণও জানা যাবে। শুধু ফিরে আসবে না হাসিখুশি মেধাবী সেই তরুণ।