আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ প্রতি বছর বিশ্ব বসতি দিবসে আমরা সমাজের গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের জন্য আলোকপাত করি। এই দিবসে আমরা তাদের বাসনা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হয়ে উঠি, এবং তাদের জন্য নতুন ঘরের স্থান সৃষ্টি করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মূল উদ্দেশ্যে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামক একটি অসাধারণ প্রকল্প শুরু করেছেন, যা রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এ চিত্র পালটে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এবং তার উপার্জনানের প্রেক্ষিপ্ত
এ প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের জন্য একটি নতুন আশ্রয়ের সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিশেষ এ উপহার নিঃস্বদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২১টি জেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য একটি উপায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
আশ্রয়ণের যাত্রা: দেশের বিভিন্ন এলাকায়
কমলাপুর থেকে রেলপথ ধরে মাওয়া যেতেই বেশ কয়েকটি স্থানে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর লাল রঙের বসতি ঘর চোখে পড়ে। রাজধানীর শ্যামপুর থেকে উড়াল রেলপথ ধরে খানিকটা সামনে গেলেই চোখে পড়ে সারি সারি বিশেষ ঘর। চারপাশে সবুজ-মধ্যস্থলে লাল বসতিগুলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া আজমপুর সীমান্ত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শত শত বসতি ঘরও আলো ছড়াচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে গড়ে ওঠা লাল বসতিগুলো স্পষ্ট চোখে পড়ে। এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি ঘর।
আরও পড়ুন ঃমৃত্যুদণ্ড হতে পারে ইমরান খানের
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের কোনাইহাট সংলগ্ন খেকিডাঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়েছেন অন্ধ নূরুজ্জামান। সম্প্রতি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নূরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে জানান, অন্ধ স্ত্রী ওরাইসা বেগমকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তিনি ভিক্ষা করতেন। কন্যা নূরী আক্তার নদী (১২) এবং ছেলে আব্দুর রবকে (৭) নিয়ে খেয়ে না-খেয়ে জীবন চলত। একটি বস্তির ঝুপড়ি ঘরের ভাড়া দিতে হতো ৪ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে উঠতে তিনি এবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে লাল ঘরে যাচ্ছেন। কন্যা নদী জানাল, এটা আমাদের মোবাইল নম্বর (০১৯৮৯২৭৬৫২৪)। তার বাবা-মা জন্মান্ধ। সে এবং তার ভাই চোখে দেখে। প্রধানমন্ত্রী যেন তাদের ফোন করেন। ফোন করলে বাবা-মা শুনতে পারবেন। চোখে না দেখলেও প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ শুনলে মা-বাবা, আমরা দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হব।
গৃহহীন এবং ভূমিহীন: দেশের সংখ্যা
সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে নিজের জমি নেই এমন মানুষের সংখ্যা ৯১ লাখ। ২০১০ সালে ভূমিহীনদের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এক যুগের ব্যবধানে ভূমিহীনদের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফলে অনেক ভূমিহীন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জনশুমারির হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে উচ্চ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জন।
বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জনের মধ্যে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশের কোনো জমি নেই। জরিপ বলছে, দেশের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র বা নিম্ন দারিদ্র্যসীমার মধ্যে রয়েছে। দেশের জনসংখ্যার বিচারে এ সংখ্যা ৯৫ লাখ ১০ হাজার ৪১৯। দেশে ভূমিহীনের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৯১ লাখ মানুষের নিজের জমি নেই।
আশ্রয়ণ প্রকল্প: গৃহহীনদের নিরাপদ আবাসন
ভূমিহীনদের আশ্রয়ণের লক্ষ্যে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সর্বশেষ ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সারা দেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহনির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান বলেন, সমাজের মানুষের খাদ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন হবে, এটাই নিয়ম। সরকার গৃহহীনদের গৃহ করে দিচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই খুব প্রশংসনীয়। এছাড়াও শত শত মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। নিশ্চয় এদেরও একটি করে ঘর হবে। মানুষকে গৃহহীন রেখে উন্নয়নের যথাযথ সুফল পাওয়া যায় না।
আবাসনে নতুন অধ্যায়: সরকারের কঠোর কার্যক্রম
বাংলাদেশ সরকারের এই আশ্রয়ণ প্রকল্প একটি নতুন আবাসনের শুরু এবং সফল সমাজ নির্মাণের জন্য একটি মূল উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, সরকার গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের জন্য নতুন ঘরের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, যা তাদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে, সরকার নতুন ঘরের নির্মাণের জন্য নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে পারে, এবং গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের সামাজিক ও আর্থিক স্থানান্তর সাধনে সাহায্য করতে পারে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে, সরকার নতুন ঘরের নির্মাণের জন্য নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে পারে, এবং গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের সামাজিক ও আর্থিক স্থানান্তর সাধনে সাহায্য করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের জন্য নতুন ঘরের সৃষ্টি করা হবে, যা তাদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করতে সাহায্য করবে। সে চান, বাংলাদেশে সমৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়ের মাধ্যমে সমগ্র সমাজের সাথে একইভাবে উন্নতি হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা করেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষরা নতুন একটি আশ্রয়ের সৃষ্টি করতে সাফল্য প্রাপ্ত করবেন এবং তাদের জীবনে একটি নতুন দিন তৈরি করতে সাহায্য করবেন। তার লক্ষ্য হলো, গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষদের স্থানান্তর করে সামাজিক ও আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে সাহায্য করা।