আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ মাছ, মাংস ও পোলট্রিশিল্পে নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব খাদ্যপণ্যের বিরূপ প্রভাবে মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এ ছাড়া যততত্র ব্যবহার ও পুরো কোর্স শেষ না করায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাও কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণীর চিকিৎসায় ৩৪ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকরোধী হওয়ার কারণে অস্ত্রোপচারের রোগীদের আগের চেয়ে সুস্থ হতে অনেক বেশি সময় লাগছে। সাধারণ সর্দিজ্বর, কাটাছেঁড়া থেকে বড় ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। এমনকি গুরুতর পর্যায়ে যাচ্ছে রোগী।
চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় রোগীর খরচও অনেক বেড়ে গেছে।
সেমিনারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘মৎস্য, পশু ও পোলট্রিশিল্পে নানা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রাণীর মাংস খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কমাতে আমরা এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।
এর মধ্যে প্রাণীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফসফোমাইসিন, কলিস্টিনসহ ৩৪ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বাতিল করেছি। নিবন্ধিত ভেটেরিনারির ব্যবস্থাপত্র ছাড়া প্রাণী চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। যেকোনো স্থানে ওষুধ বিক্রির জন্য ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। ড্রাগ লাইসেন্স ব্যতীত যদি কেউ প্রাণিখাদ্য বিক্রি করে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে হবে।’
ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
সহজে অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্তের জন্য প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পাকেজিং লাল স্ট্রিপ এবং বড় করে অ্যান্টিবায়োটিক লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানান মেজর জেনারেল ইউসুফ।
সেমিনারের শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি শাখার ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. অনিন্দ্য রহমান। তিনি বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হলো বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে এর মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বলা হয় তখন, যখন আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অণুুজীবগুলো বাড়তে থাকে এবং এর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ কাজ করে না।
অনিন্দ্য রহমান বলেন, ‘আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি, পানি ও পয়োনিষ্কাশন যদি নিরাপদ রাখতে পারতাম, তাহলে বর্তমান রোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে যেত। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে সাব সাহারান আফ্রিকায়। প্রতি লাখে মৃত্যু প্রায় ২৪ জনের (২৩.৭)। দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যু ২১.৫ জনের। সবচেয়ে কম মৃত্যু উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ১১.২ জনের। ২০১৯ সালে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে বিশ্বব্যাপী ১.২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় এক বছরে মৃত্যু তিন লাখ ৮৯ হাজার মানুষের। ৮৪ হাজারের বয়স পাঁচ বছরের কম।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, কার্যক্ষমতা কমেছে—এমন ৩৭টি অ্যান্টিবায়োটিক চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছয়টি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। এদিকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিও হচ্ছে না। সুতরাং ভবিষ্যৎ অনেক খারাপ এটি বলায় যায়।