নিয়মিত ব্রাশ করেও কেন মুখে দুর্গন্ধ হয় জানেন?

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ মুখের দুর্গন্ধ অনেক সময়েই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাঁত, দাঁতের গোড়া, মাড়ি, জিভ, মুখের ভিতর কোনও রকম সংক্রমণ হলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। আর মুখের দুর্গন্ধের কারণে যে কেউ অপর ব্যক্তির সামনে বিব্রত হতে পারেন।

নিয়মিত ব্রাশ করার পরও নিঃশ্বাসে কেন দুর্গন্ধ হয় জেনে নিন

মুখে দুর্গন্ধ বা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা হয় খারাপ ওরাল হাইজিন (ব্রাশ না করা, মুখ ঠিকমতো পরিষ্কার না করা)। এ ছাড়া মুখের অন্য সমস্যায়, যেমন মাড়িতে ব্যথা (লক্ষণ- খাবারের কণা আটকে থাকা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, ব্যথা) হতে পারে এবং যত্ন না নিলে তা পিরিওডোনটাইটিসে পরিণত হতে পারে। পাইওরিয়া হলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ছাড়াও দাঁতও দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও, আরও একাধিক কারণ রয়েছে যার ফলে মুখ পরিষ্কার করা সত্ত্বেও দুর্গন্ধ বিরক্তি তৈরি করতে পারে।

নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করেন, এলাচ খান, মৌরি চিবান। সব সময় এই ঘরোয়া উপায় মানলেও এই সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায় না। এক ঝলকে দেখে নিন সেই ৫ কারণ, যার ফলে মুখে বা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।

কম পানি পানের অভ্যাস: পানি কম পান করলেও মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আসলে যখন ডিহাইড্রেশন হয়, সেই সময় মুখ শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে মুখের লালা কমে যায় এবং মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে থাকে যা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।

পেট পরিষ্কার না হওয়া: যাদের পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় যাদের, তাদেরও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বেরোতে পারে। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্লাক্স এবং অন্ত্রের সমস্যা থাকলেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। কারণ পরিপাকতন্ত্র ও অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি হয়। যার ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বেরোয়।

অত্যধিক ক্যাফিন খাওয়া: যারা খুব বেশি ক্যাফেইন খান যেমন কফি, চা ইত্যাদি পান করেন, তাদেরও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে শুরু করে। এই পানীয়গুলোতে মিষ্টি এবং দুধ থাকে বলে তা ক্যাভিটি (দাঁতে ক্ষয়ের ফলে গর্ত গয়) তৈরি করতে পারে। ক্যাফেইন বেশি খেলে মুখের লালা শুকিয়ে যেতে পারে। যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি ঘটায় এবং নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে। দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে দাঁতের স্বাভাবিক রংও ফিকে হয়ে যেতে পারে।

ঠিকমতো না ঘুমানো বা নাক ডাকা: যে ব্যক্তি নাক ডাকেন বা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন তারও এটা হতে পারে। নাক ডাকার সময় মানুষ নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয় এবং লালা শুকিয়ে যেতে থাকে। তাই নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা হতে পারে: যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ইনসুলিন তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া যে কোনও ধরনের ওষুধ সেবনেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।

সকালে ব্রাশ করার পরও যদি মুখের দুর্গন্ধ থেকে থাকে এবং এই কারণগুলো আপনার সঙ্গে ঘটে থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তবে তার আগে ঘরোয়াভাবেও এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক মতে, হ্যালিটোসিস প্রতিরোধ করার জন্য এই ৫টি নিয়ম মেনে চললে দ্রুত দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

দিনে ২ বার ব্রাশ করুন: সকালে ব্রাশ করা ও জিভ স্ক্র্যাপ করলে রাতে মুখের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত টক্সিন নির্মূল করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, রাতে ব্রাশ করলে ও জিভ স্ক্র্যাপ করলে ওরাল স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। পরিস্কার মুখ নিয়ে ঘুমালে অন্ত্রের স্বাস্থ্যেও সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। যা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খাবার পরে মৌরি বীজ খাওয়া: মৌরি প্রাকৃতিকভাবে পাচক ও ফ্ল্যাভোনয়েড দ্বারা গঠিত। এটি লালা প্রবাহকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। তাই মুখের ভিতর শুকিয়ে গেলে এক চা চামচ মৌরি খান। দেখবেন শুষ্ক মুখগহ্বর থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মৌরি বীজের সুগন্ধযুক্ত স্বাদ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলা: আয়ুর্বেদ মত, খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই পানি দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে নিতে হবে। খাওয়ার পর মুখ পরিস্কার না করলে আপনার বিপাককে বিলম্বিত করে তুলতে পারে। তবে মুখ পরিস্কারের জন্য পানি অপরিহার্য, বিশেষ করে খাবারের পরে। তাই কিছু পরিমাণ পানি মুখে নিয়ে ২-৩ মিনিটের জন্য গার্গল করলে দাঁতে লেগে থাকা খাবারের কণা ও মুখের ভিতর আটকে থাকা খাবার ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।

ঘন ঘন খাবার নয়: ঘন ঘন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তাতে খাবার মুখে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যখনই আপনি কিছু খাচ্ছেন, তখন ব্রাশ করা অস্বাভাবিক ও অবাস্তব। তাই মুখের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন অন্ত্রের স্বাস্থ্যের কথাও ভাবা উচিত। দিনে তিনবার সঠিক ও ভারী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতি ২ ঘণ্টায় খাবার খাবেন না। দুটি খাবারের মধ্যে অন্তত তিন ঘণ্টার ব্যবধান রাখা ভালো।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: শরীরের প্রতিটি কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, বিশেষ করে ওরাল হাইজিনের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

কতটা পরিমাণ পানি পান করা উচিত?

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদ নয়, ফ্যাকাশে ইউরিন না হওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা দরকার । যদি আপনার প্রস্রাব স্ফটিক থেকে ফ্যাকাশের রঙের হয়ে যায়- এর মানে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছেন। যদি হলুদ প্রস্রাব হয়, তাহলে আপনার আরও পানি পান করা উচিত।

Leave a Reply

Translate »