আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল বেআইনি এবং এমনটা করলে হতে পারে ৫ বছরের কারাদণ্ড। এমন সতর্কবার্তা দিয়ে রোববার (১০ আগস্ট) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই আলোচনা ও বিতর্কের ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে।
এ বিষয়ে এনবিআরের বক্তব্য, ‘জিরো রিটার্ন’ বলে আসলে কিছু নেই; আছে শূন্য আয়কর। তবে, কারও আয়কর শূন্য হবে কি না, তা নির্ধারণ করবে বোর্ড।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, করদাতা যখন আয়কর দেবেন তখন তার পুরো আয় ব্যয়ের বিবরণ দেবেন। করদাতার আয় যদি ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে হয় তাকে কর দিতে হবে না। তবে, আয়কর রিটার্ন বা বিবরণ দেওয়ার সময় করদাতার মোট আয়, মোট ব্যয় ও অন্যান্য খাত যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকে থাকা টাকার মুনাফা বা সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয়ের সঠিক বিবরণ দিতে হবে। সব মিলে যদি তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে আয় হয় তাহলে আয়কর রিটার্ন বা আয়কর বিবরণী দেওয়ার সময় আয়কর দিতে না হলেও তাকে আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত লিখতে হবে।
এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী, রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট ফরমে আয়কর কলামে ‘শূন্য‘ লেখা যাবে না; লিখতে হবে আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ। এরপর অনলাইনে করদাতার করের পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৃশ্যমান হবে। করদাতা নিজে কর নির্ধারণ করবে না।
এনবিআর জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শ্রেণির অসাধু মানুষ শূন্য রিটার্ন দেওয়া হবে এবং করদাতার পক্ষে এ শূন্য রিটার্ন বা প্রতিবেদন দিয়ে দেবে বলে প্রচার করছে। এক্ষেত্রে শূন্য রিটার্ন মানে করদাতার আয়-ব্যয়ের বিবরণ না দিয়ে সব শূন্য লিখে আয়কর রিটার্ন বা প্রতিবেদন দেওয়া হবে-এমন বিভ্রান্তি থেকেই রোববার (১০ আগস্ট) প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করে এনবিআর।
আয়কর আইনে এ সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ করে এনবিআর বলছে, করদাতার প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় না দেখিয়ে এর কোনো একটি শূন্য অথবা সবকটি তথ্য শূন্য হিসেবে দেখানো সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।
করদাতার জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নে তার আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য না দেখিয়ে মিথ্যা বা অসত্য তথ্য প্রদান করলে বর্তমান আয়কর আইনের ৩১২ ও ৩১৩ ধারা অনুসারে করদাতাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
আয়কর আইন অনুসারে, ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো প্রকার রিটার্ন দাখিলের বিধান নেই। আয়কর আইন অনুসারে একজন করদাতাকে তার প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় অবশ্যই সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন দেখাতে হবে।
১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেন। সেখানে সারা বছরের আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে হয়। অর্থাৎ কোনো আয়কর দাতা আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিচে হলে সে কোনো আয়কর দেবে না। তবে সে আয়কর বিকরণিতে শূন্য লিখতে পারবে না, আয় ব্যয়ের বিবরণ লিখবে।
২০২৩ সালের ১২ নম্বর আইন এর ২/৬৯ এর সংগা অনুযায়ী অনিবাসী বাংলাদেশিসহ সব স্বাভাবিক ব্যক্তি অবিভিক্ত পরিবারের ক্ষেত্রে মোট আয়ের ওপর কর নির্ধারিত আছে। ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয়ের পরের তিন লাখে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এর পরের চার লাখে ১৫ শতাংশ হারে; পরের ৫ লাখে ২০ শতাংশ; পরের ২০ লাখে ২৫ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট এক কোটি ২৩ লাখ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ( টিআইএন) রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানসহ আয়কর রিটার্ন দেয় ৪০ লাখের মতো টিআইএন-ধারী। বাকিরা রিটার্ন দেন না। আর যারা আয়কর রিটার্ন দেন, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগই আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হওয়ার কারণে কোন আয়কর দেন না।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজন। যারা টিআইএন নিচ্ছেন, তাদের ২৮.৫৭ শতাংশ আয়কর রিটার্ন দিচ্ছেন। আবার যারা আয়কর রিটার্ন দিচ্ছেন, তাদের মাত্র ৩০ শতাংশ কর দিচ্ছেন।
এ অবস্থায় রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফাঁক-ফোকর বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে যারা আয়কর দেওয়ার উপযুক্ত হলেও শূন্য কর বা কর উপযোগী আয় নেই বলে আয় কমিয়ে দেখায়, তাদের কর ফাঁকি রোধে সংশ্লিষ্ট আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
আইন অনুযায়ী, যাদের তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি, তারাই কেবল আয়কর দেবেন; যাদের আয়কর তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার কম, তারা আয়কর দেবেন না। তবে, সঠিকভাবে আয় ও ব্যয় উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন বা বিবরণ দিতে হবে।