রোমাঞ্চকর জয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা ভারতের

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ৩০ বলে ৩০ রান, ২৪ বলে প্রয়োজন ২৬ রান। এমন সমীকরণও মেলাতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে গড়ান রোমাঞ্চকর ফাইনাল ৭ রানে জিতে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা পুনরুদ্ধার করল ভারত।রোহিত শর্মা অঝরে কাঁদছেন, হার্দিক পান্ডিয়ার চোখে পানি, বিরাট কোহলির কান্না চেপে রাখতে গিয়ে কথা কণ্ঠ রুদ্ধ হলো কয়েকবার।

রাহুল দ্রাবিড়ের মতো শান্তশিষ্ট একজনও কিনা বুনো উল্লাসে মাতলেন। শনিবার বার্বাডোস রূপ নিল নীল উৎসবে, ক্রিকেটের উৎসবের রঙ হলো নিল। ১৩ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের খেতাব জিতল ভারত। সর্বশেষ ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল দলটি।

আর টি-টোয়েন্টি? ২০০৭ সালের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা ১৭ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে।

অথচ ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছিল প্রোটিয়ারা প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শিরোপাটাও জিততে চলেছে। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় ১৭৭ রান তাড়ায় নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১৭তম ওভারে। হেনরিক ক্লাসেন আউট হতে উৎসবের ঢেউ বয়ে গেল ভারতীয় শিবিরে।

বার্বাডসের নীল গ্যালারিতে তখন সমর্থকদের বাঁধ ভাঙা উল্লাস। প্রাণে নতুন আশার সঞ্চার। 
হবেই বা না কেন, আউট হওয়ার আগে যে তাণ্ডব চালান দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটার। আক্ষর প্যাটালের করা ইনিংসের ১৫তম ওভারে ২টি করে চার ও ছয়ের সাহায্যে তোলেন ২৪ রান! এই ওভারের পর ১৭৭ রান তাড়া করা প্রোটিয়াদের সমীকরণ নেমে আসে ৩০ বলে ৩০ রানে। ইনিংসের ১৭তম ওভারে ক্লাসেন যখন আউট হন ২৩ বলে প্রয়োজন ২৬ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে তখনো ৫ উইকেট। অথচ এই ম্যাচও কিনা ঘুরিয়ে দিলেন ভারতের বোলাররা। শেষ ওভারে ১৬ রান আটকাতে নেমে মাত্র ৮ রান দেন হার্দিক পান্ডিয়া। এতেই উৎসবে মাতোয়ারা বার্বাডস, দিল্লি, মুম্বাই কলকাতা।

কেনসিংটন ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল ভারত। মার্কো ইয়ানসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের হাফভলিতে চার মেরে শুরু করেন বিরাট কোহলি। ওই ওভারে ১৫ রান তোলে ভারত। পেসের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটারদের আগ্রাসন দেখে দ্বিতীয় ওভারে স্পিনার নিয়ে আসেন এইডেন মারক্রাম। অধিনায়ককে হতাশ করেননি কেশব মহারাজ। এই ওভারের চতুর্থ বলে পা বাড়িয়ে সুইপ করেছিলেন রোহিত শর্মা, কিন্তু সরাসরি ক্যাচ যায় স্কয়ার লেগে থাকা ক্লাসেনের হাতে। এক বল পর শূন্য রানে ফেরেন ঋষভ পান্ত।

দুই উইকেট হারিয়ে রানের গতি কমে আসে ভারতের। উল্টো চাপ বাড়াতে গিয়ে রাবাদার বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দেন সূর্যকুমার যাদব। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। সেখান থেকে এক প্রান্ত ধরে খেলে বিশ্বকাপের বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় ধীরগতির ফিফট করেন কোহলি, ৪৮ বলে। পরে হাত খুলে খেলতে গিয়ে ৭৬ রানে ফেরেন ফাইনালসেরা ক্রিকেটার। ৫৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চার ও ২ ছয়ে। ম্যাচের পর কোহলি জানিয়ে দিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি তাঁর শেষ ম্যাচ। কোহলির এই ইনিংসের সঙ্গে অক্ষরের ৩১ বলে ৪৭ ও শিবম দুবের ১৬ বলে ২৭ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রেকর্ড। আগেরটি ছিল ১৭৩ রানের।

রেকর্ড টপকাতে নেমে ভারতের মতো শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ১২ রানে হারায় ২ উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে ‘ড্রিম’ ডেলিভারিতে রিজা হেনন্ড্রিকসকে ফেরান জসপ্রীত বুমরাহ। টুর্নামেন্টের সেরার পুরস্কার জেতা এই পেসার ১৮ তম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে নেন মার্কো ইয়েনসেনের উইকেট। তাতেই কাজ সহজ হয়ে যায় ভারতের। যদিও শুরু আর শেষের ধাক্কার মাঝে পুরো সময়টা ভারতীয় বোলারদেরে শাসন করেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা।

ওপেনার কুইন্টন ডি ককের ৩৯ ও ট্রিস্টিয়ান স্টাবসের ৩১ রানের সঙ্গে ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫২ রানেও ঝড়ও বাঁচাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণ এলাতে গিয়ে সূর্যকুমারের দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন ডেভিড মিলার (২১)। প্রোটিয়াদের শেষ আশাও শেষ ওখানে। শিরোপা ছোঁয়ার খুব কাছে গিয়েও ‘চোকার্স’ তকমা ঘোচাতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ভারত। তাতেই উৎসবের রঙ, ক্রিকেটের রঙ হলো নীল!

Leave a Reply

Translate »