প্রায় ১৭ বছর আগে কালালার সঙ্গে আলাপ রুকুন্দর। রুকুন্দ এবং কালালা দুজনেই ছিলেন শরণার্থী। পূর্ব আফ্রিকার বুরুন্ডি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন রুকুন্দ। কালালা মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো থেকে।
শরণার্থী শিবিরেই দু’জনের পরিচয়। কালালা ইংরেজি জানতেন। রুকুন্দ ইংরেজির ‘ই’-ও জানতেন না। রুকুন্দর হয়ে দোভাষীর কাজ করে দিতেন কালালা। ক্রমে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। দু’জনের প্রেম হয় এবং শেষে বিয়েও করেন। বিয়ের পর তারা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে সংসার পেতেছিলেন।
সব কিছু ঠিকই চলছিল। দাম্পত্যে টুকটাক অশান্তি ছাড়া মোটের উপর সুখী পরিবারের মতোই জীবন কাটাচ্ছিলেন তারা। রুকুন্দর আগের পক্ষের চার সন্তানকেও মেনে নিয়েছিলেন কালালা। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে কালালার মনের ভেতরে সন্দেহের বিষ জমতে শুরু করেছে। কালালা শুধু আশঙ্কা করতেন, রুকুন্দ অন্য পুরুষের প্রেমে পড়েছেন। রুকুন্দ তাকে ছেড়ে চলে যাবেন, এই ভয়, আশঙ্কায় ক্রমে নিজেকেই জর্জরিত করে তুলতেন। এই আশঙ্কা থেকে রুকুন্দর প্রতি তার আচরণও বদলে যেতে শুরু করেছিল।
মাঝে মধ্যেই রুকুন্দকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতেন কালালা। তবে তার এমন বদলে যাওয়া আচরণের কারণ কখনও স্ত্রীর কাছে খোলসা করতেন না তিনি। ‘মৃত্যু’র পর সেই কারণ জানতে পেরেছিলেন রুকুন্দ। তখন ২০১৫ সাল। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বুরুন্ডি চলে যান রুকুন্দ। স্বামীকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। বুরুন্ডির একটি হোটেলে উঠেছিলেন দু’জনে। মানসিক ভাবে ক্লান্ত রুকুন্দকে তার স্বামী কিছুক্ষণ বাইরের খোলা বাতাসে হেঁটে আসতে বলেছিলেন।
রুকুন্দ জানতেন না বাইরে তার জন্য স্বামীর ভাড়া করা গুন্ডা বন্দুক নিয়ে অপেক্ষা করছে। হোটেল থেকে কিছু দূর যেতেই বন্দুক দেখিয়ে তাকে অপহরণ করে সেই গুন্ডারা। তার পর চোখে কাপড় বেঁধে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেঁধে রাখেন তারা। এটুকুই রুকুন্দর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তখনও তার বিস্ময়ের বেশির ভাগটাই বাকি ছিল। ওই লোকগুলো তার ভাইয়ের পরিচিত ছিলেন। তারাই তাকে জানিয়েছিলেন কালালাই রুকুন্দকে খুনের জন্য তাদের ভাড়া করেছিলেন। নেহাত ভাইয়ের পরিচিত হওয়ায় রুকুন্দকে তারা প্রাণে মারেননি।
কয়েক দিন পর রুকুন্দকে দূরে একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে ছেড়ে দেন তারা। ওই দিন থেকেই বিশ্বের কাছে রুকুন্দ মৃত হয়ে গিয়েছিলেন। অনেক চেষ্টায় তিনি বুরুন্ডি থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এসে পৌঁছান। ভাগ্যের পরিহাস এমনই, তিনি যে দিন নিজের বাড়ির সামনে পৌঁছেছিলেন সেই দিনই ধুমধাম করে তার পরলৌকিক ক্রিয়া করছিলেন কালালা।
বাড়িতে প্রচুর লোকজনের সমাগম দূরে একটি গাড়ির ভিতর থেকে দেখছিলেন রুকুন্দ। কাজ শেষ হতে এক এক করে যখন নিমন্ত্রিতরা বেরিয়ে যান তার পরই স্বামীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান তিনি। রুকুন্দকে চোখের সামনে দেখে ভূতের মতোই মনে হয়েছিল কালালার। সে ভুল ভাঙতে অবশ্য বেশি দেরি হয়নি। তার পর কেঁদে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে আর কোনো সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না রুকুন্দ।
প্রমাণ-সহ পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানান তিনি। স্বামী কালালাও তাকে খুনের চেষ্টার কথা স্বীকার করে নেন। পুলিশের জেরাতেই রুকুন্দ জানতে পেরেছিলেন, স্বামী কেন তাকে খুন করতে চেয়েছিলেন। সন্তানদের নিয়ে এখন একাই থাকেন রুকুন্দ। ভয় পান, কষ্টও হয়। কালালা ঘনিষ্ঠরা একাধিক বার বাড়িতে হামলাও চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও ভেঙে পড়তে নারাজ রুকুন্দ। একা হাতেই সব সামলাচ্ছেন তিনি।
সারা বিশ্বের কাছে ভয়ঙ্কর গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি ‘মৃত’। বাস্তবে মরেও মরেননি রুকুন্দ। সিনেমার মতো নিজের পারলৌকিক ক্রিয়ার দিনই আচমকা হাজির হয়ে গিয়েছিলেন স্বামীর সামনে। স্বামীকে জেলের ঘানিও টানিয়েছেন।