কবর বা কবরস্থান সবার কাছেই কমবেশি ভয়ের জায়গা। এর আশেপাশ দিয়ে গেলেও কেমন জানি গা ছমছমে অবস্থা হয়। সেখানে কবরস্থানে থাকার কথা কেউ ভাবতেই পারবেন না। অনেক বেশি সাহসী হলেও একদিনের বেশি হয়তো কবরে একাকি সময় কাটানো অসম্ভব! তবে দীর্ঘ ১৫ বছর ভাঙা এক কবরের মধ্যে বসবাস করছেন এক ব্যক্তি।
ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে নিশ্চয়? হ্যাঁ, কোনো গল্প উপন্যাসের চরিত্র নয়, বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন এক ব্যক্তি। চারপাশে কবরের সারি। মৃত মানুষদের সঙ্গে এই কবরস্থানেই বসবাস করেন গৃহহীন এক মানুষ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি একটি কবরে বসবাস করছেন। মৃতদের মতো তিনিও একটি কবরের ভেতরই বসবাস করেন। তিনি যে কবরে বসবাস করেন, সেটি অন্তত ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো।
৪৩ বছর বয়সী ব্রাতিস্লাভ স্টোজানোভিচ। সার্বিয়ার নিস শহরের ১০০ বছরের একটি পুরনো কবরে বসবাস করছেন তিনি। গৃহহীন এই মানুষটি এক সময় রাস্তা রাস্তায় রাত কাটাতেন। অবশেষে তিনি এই কবরখানায় আশ্রয় নেন। তার মতে, ‘রাস্তার চেয়ে কয়েকগুণ ভালো কবরের এই স্থানটি। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে রাস্তায় ঘুমানো যায় না। তবে কবরের ভেতরটা বেশ গরম আর নিরাপদ। মৃতদের এই স্থানে ঘুমানোর চেয়ে আমি মৃত্যুকে বেশি ভয় পাই।’
এই কবরটিতে বসবাস শুরুর আগে তিনি মৃতদেহের একেবারেই নষ্ট হয়ে যাওয়া কয়েকটি হাড় তুলে ফেলেন। তারপর ভালো করে কবরটিকে থাকার উপযুক্ত করে গড়ে তুলেন। তার থাকার এই জায়গাটি মাত্র দুই বর্গ গজ এবং সিলিং মাত্র এক গজ উঁচু। রাতে স্টোজানোভিক কবরের ভেতর আলোকিত করতে মোমবাতি ব্যবহার করেন। কিছু কাপড়, কম্বলসহ ব্যক্তিগত কিছু জিনিস দিয়ে পরিপূর্ণ তার এই বসবাসের স্থানটি। তিনি বলেন, ‘এটি প্রাসাদ নয় কিন্তু এটি রাস্তার চেয়ে বেশি আরামদায়ক।’ কবরের উপর থেকে পাথরের স্লাব সরিয়ে তিনি ভেতরে ঢুকেন, তারপর আবার তা ভেতর ঢুকে লাগিয়ে দেন
বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই মৃতদের এই স্থানে জীবিত কেউ দিব্যি বছরের পর বছর বসবাস করছেন। কবরের উপর থেকে পাথরের স্লাব সরিয়ে তিনি ভেতরে ঢুকেন। তারপর আবার তা ভেতর ঢুকে লাগিয়ে দেন।
মৃতদের সঙ্গে এমন ভুতুড়ে স্থানে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্টোজানোভিচ বলেন, ‘মৃতদের সঙ্গে বসবাস করা তেমন ভীতিকর নয়। আমি শুরুতে ভয় পেয়েছিলাম। তবে এখন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। এখন আমি মৃতদের চেয়ে জীবিতদের বেশি ভয় পাই।’
তিনি আরও জানান, ‘যখনই আমি কবর থেকে বাইরে বের হই; তখন আগে দেখি আশেপাশে কেউ আছে কি-না। কারণ এভাবে আমাকে হঠাৎ কেউ দেখলে ভয় পেতে পারে। তবে অনেকেই জানে আমি এখানে বাস করি। এজন্য অনেকেই আমার জন্য এখানে খাবার বা কাপড় নিয়ে আসেন।’
কবরস্থানের কর্মকর্তাদের মতে, তিনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক একজন মানুষ। তিনি এই কবরস্থানে কোনো ধরনের ক্ষতি করছেন না। এ কারণেই এখানে তাকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি যে কবরে থাকছেন, সেটি শত বছরের পুরনো। কবরটির কোনো ওয়ারিশও বর্তমানে নেই।
স্টোজানোভিক বলেন, ‘একদিন তো মরতেই হবে। তখন তো এই কবরই হবে বাসস্থান। তাই কবরে ঘুমাতে আমি এখন ভয় পাই না। হঠাৎ কবরে শুয়েই যদি কোনো রাতে মৃত্যু হয় আমার; তাহলে আমার জন্য আর কাউকে কষ্ট করে কবর খুড়তে হবে না।’
পৃথিবীতে কত ধরনেরই না মানুষ আছেন। একেকজনের ভাবনা একেক রকম। তাও আবার বদলে যায় কঠিন সব পরিস্থিতিতে। স্টোজানোভিকের বেলায়ও তেমনটাই ঘটেছে। স্টোজানোভিক ভয় জয় করেছেন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।