আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ আমাদের দেশের নতুন প্রজন্ম বর্তমানে আত্মনির্ভরশীল হতে চায়। কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণী অনেকেই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু তাদেরকে যে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে আর্থিক সমস্যা। আর্থিক দুর্বলতা থেকে এটি ব্যবসা গড়া খুবই কঠিন কাজ। যেখানে প্রতিটা ব্যবসা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেখানে ১০০০০ টাকায় ব্যবসা শুরুর কথা চিন্তা করতে পারায় সাহসের বিষয়।
তাহলে ১০০০০ টাকায় কি কোন ব্যবসা (business) শুরু করা সম্ভব নয়? অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি আসতে পারে, ১০ হাজার টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়। এর উত্তর হল ১০ হাজার টাকায় ২০ টি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে এই লেখাটির মধ্যে পাবেন। এর মধ্যে এমন কিছু লাভজনক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে করলে আপনার জীবনের গতিপথও বদলে দিতে পারে ।
চলুন জেনে নেই ১০ হাজার টাকায় ২০ টি ব্যবসার আইডিয়া –
১। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি
অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করেও আপনার পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে ফেসবুক, অনলাইন ভিত্তিক শপ ইত্যাদিকে কাজে লাগাতে পারেন। অল্প কালেকশন, প্রি অর্ডার গ্রহণ ও ব্যাসিক মেইন্টেনেন্সসহ ১০ হাজারের মধ্যে এই ব্যবসা করা সম্ভব।
২।অনলাইন শিক্ষকতা
আমরা দেখেছি করোনার প্রকোপের পর কিভাবে শিক্ষার্থীরা অনলাইন লার্নিংয়ের উপর ঝুকেছে। অনলাইনে শিক্ষা দান বর্তমান সময়ের স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া (যদিও শিক্ষকতাকে ব্যবসা বলা যায়না, অনলাইন সেবা বলা যায়)।
আপনি যদি কোনো বিষয়ে খুব দক্ষতা অর্জন করে থাকেন তাহলে সে বিষয়ে শিখতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিছক কম নয়। ঘরে বসে দেশের যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থীকে অনলাইনে শিক্ষা দান করা সম্ভব।
এই কাজের জন্য ভিডিও কনফারেন্সের ব্যাসিক সামগ্রি ছাড়া আহামরি কোনো খরচ নেই। তাই ১০ হাজার টাকায় ভালো ভাবেই অনলাইনে শিক্ষাকতা করতে পারেন।
৩।ইউটিউব চ্যানেল
অনলাইনে মানুষ প্রথম সার্চ গুগলে, ২য় সার্চ করে ইউটিউবে। দিন দিন নতুন সব তথ্যের সাথে ভারী হচ্ছে ইউটিউবের পাল্লা। এমন খুব কম বিষয় রয়েছে যা ইউটিউবে বর্তমানে নেই। মনিটাইজেশনের মাধ্যমে ইউটিউব ভিডিওতে গুগলের এডস দেখানোর মাধ্যমে চ্যানেলের ক্রিয়েটরের আয়ের ব্যবস্থা থাকে।
আপনি যেকোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে খুব সহজেই আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আনুসাঙ্গিক ম্যাটারিয়ালসে ১০ হাজারের অনেক কম খরচে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হয়ে যাবে।
৪।অনলাইনে হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি
হাতের তৈরি ঘর সাজানোর সামগ্রীর ব্যবসা আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে এমন অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরা আছে যারা হস্ত শিল্পের সামগ্রী সমূহ অনলাইনে এমনকি অফলাইনেও বিক্রি করে থাকে। স্বল্প পুঁজির গ্রামের ব্যবসার আইডিয়ার মধ্যে এটা বেশ জনপ্রিয়। এবং ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে খুব সহজেই।
৫। অনলাইন বেকারি
এটা বিশেষ করে সেসব মেয়েদের জন্য যারা “ঘরে বসে ব্যবসা আইডিয়া” সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। আপনি যদি বিভিন্ন কেক, কুকিস, ডেজার্ট তৈরি করতে পারেন ও করতে ভালোবাসেন তবে এই কাজ গুলো করার মাধ্যমেই অনলাইন থেকে ভালো পরিমাণের আয় করা সম্ভব।
বর্তমানে অনেক বেকারি থেকে থাকলেও মানুষ হোম মেড কেক, কুকিস কিনতে ইচ্ছা পোষণ করে। কারণ এগুলো বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। ফেসবুক গ্রুপ, পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব।
৬।ওয়েডিং প্ল্যানার
আজকাল সবাই চায় তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান এমন ভাবে হোক যা আজীবন সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকে যার জন্য বিয়ের অনুষ্ঠানকে আকর্ষনীয় করে তুলতে এখন সবাই ওয়েডিং প্লানিং অরগানাইজেশনের স্বারপ্রান্তে আসে।
কেবল বিয়ে নয়, জম্মদিন থেকে শুরু করে অফিসিয়াল যেকোনো প্রোগ্রামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বও গ্রহন করে থাকে এরা। আপনিও উক্ত ব্যবসা পরিচালনার মধ্য দিয়ে বেশ লাভজনক সেক্টর গড়ে তুলতে পারেন।
৭।নাচ, গান বা আঁকার স্কুল
আপনি যদি সাংস্কৃতিক উপাদানের কোনো একটির ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন তবে সেটি অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। মানুষ নাচ, গান বা আর্ট শিখতে ইচ্ছুক। এক্ষেত্রে তা শেখানোর জন্য উপযুক্ত স্থান ও ব্যাসিক ম্যাটারিয়াল গুলোর ব্যবস্থা করাতে ১০ হাজারের মধ্যেই হয়ে যাবে।
৮।মেকআপ আর্টিস্ট
এটা স্পেশালি মেয়েদের জন্য। যারা মেকআপ রিলেটেড কাজ ভালো করতে পারেন ও এই বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা উপযুক্ত স্থান বাছাই করে মেকআপ টার্চ দেয়ার মাধ্যমে আয় করতে পারেন। তাছাড়া বিভিন্ন বিয়ের ইভেন্ট বা অন্যান্য অনুষ্ঠান, যেখানে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেও আয় করতে পারেন।
যদিও কসমেটিক্স এর দাম অনেক, তবুও ব্যাসিক ম্যাটারিয়াল নিয়ে শুরু করলে ১০ হাজারে ভালো ভাবে মানিয়ে যাবে।
৯।ট্যুর গাইড
ট্যুর গাইডের ব্যবসাটি তখনই করতে পারবেন যখন আপনার এরিয়াটি হবে কোনো পর্যটন কেন্দ্র। যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে আপনার এরিয়াতে ভ্রমণের জন্য আসা পর্যটকদের থাকা-খাওয়া ও ঘুরার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে দেয়া মূলক কাজের মাধ্যমে ভালো পরিমাণের আয় করতে পারেন। এতে খুব কম পরিমাণের খরচ হয়ে থাকে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পর্যটকরা আপনার পেমেন্ট পূর্বেই দিয়ে রাখবে।
১০।ট্রাভেল এজেন্সি
বাস, ট্রেন বা প্লেন যেকোনো যানে সুন্দর ভাবে ভ্রমণের ব্যবস্থা করার জন্য যে এজেন্সি গড়ে তোলা হয় সেটাই ট্রাভেল এজেন্সি নামে পরিচিত। উক্ত এজেন্সি গড়ে তোলাতে খুব বেশি খরচ হয় না বিধায় এটা বেশ জনপ্রিয় একটি ব্যবসার মডেল।
১১।খাবারের হোম ডেলিভারি
যেসকল স্টুডেন্ট ব্যাচেলর থাকে, বা যেসকল চাকরিজীবি নিজের ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমেও ব্যবসা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দুইটা সুযোগ খোলা রয়েছে।
প্রথমত, আপনি চাইলে খাবার তৈরি করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটা চার্জ ধার্য করতে পারেন। অথবা তৈরিকৃত খাবার গুলো ডেলিভারি দেয়ার মাধ্যমেও আয় করতে পারেন।
১২।কার্ড ছাপানোর দোকান
এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনার অবশ্যই কম্পিউটার ও প্রিন্টে মেশিন থাকতে হবে। যদি না থাকে তবে কার্ড ছাপানোর ব্যবসাটি ১০ হাজারের মধ্যে করা সম্ভব নয়, তবে যদি থেকে থাকে তবে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহজেই কার্ড বানানোর দোকান নিয়ে বসতে পারেন। ভিজিটিং কার্ড থেকে শুরু করে বিয়ের কার্ড তৈরি অব্দি অনেক অনেক কাজের অর্ডার পাওয়া যায় এই ব্যবসায়ে।
১৩।পেপার ব্যাগ বা ঠোঙ্গা তৈরি
ফল কেনার সময় আমাদের যে ঠোঙ্গা দেয়া হয় এই ঠোঙ্গা বানিয়ে বিক্রি করার মাধ্যমেও আয় করা যায়। উক্ত ব্যবসায়ে ইনভেস্টমেন্টের জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হবে না এবং কাচামাল হিসেবে কাগজ, আঠা ও লোকবল থাকলেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়।
১৪। ফাস্ট ফুডের দোকান
ফাস্ট ফুড – কার না ভালো লাগে? বর্তমান প্রজম্মের খুব প্রিয় খাবার গুলো পাওয়া যায় এমন এক স্থানের নাম ফাস্টফুডের দোকান। আর এই চাহিদাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে এতো এতো ফাস্ট ফুডের দোকান। যথাযথ এড়িয়া ও খাবারের মানের উপর লক্ষ রাখলে উক্ত ব্যবসায়ে লাভ করা খুব সহজ হবে। ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে এই ব্যবসা পার্ফেক্ট।
১৫।কাস্টমাইজ জুয়েলারি
১০ হাজার টাকায় কাস্টমাইজ জুয়েলারি হতে পারে একটি অন্যতম লাভবান ব্যবসা। আপনি যদি নিজে জুয়েলারি বানাতে পারেন তাহলে ঘরে বসেই আপনি ইউনিক ডিজাইন বানিয়ে অনলাইনে নিজের জুয়েলারি বিক্রি করে ভালো অংকের মাসিক আয় অর্জন করতে পারবেন।
এই ব্যবসাটি ব্যক্তিগত দক্ষতা নির্ভর। একইসাথে বেশী কাজ পাওয়ার জন্য আপনার যোগাযোগ দক্ষতা ও থাকা লাগবে।
১৬।ফ্রিল্যান্স ভিডিওগ্রাফার
আপনি যদি ভিডিওগ্রাফারদের কাজ শিখে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই একটি ক্যামেরা থাকার কথা। এ ক্যামেরা ব্যবহার করে নিজের একটি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন যেখানে আপনি অফলাইন ফ্রিল্যান্সার ভিডিওগ্রাফার হিসেবে নিজের এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। একজন ভালো মানের ভিডিওগ্রাফার ক্ষেত্রবিশেষে ১০০০০০ টাকার অধিক ও মাসিক আয় করতে পারেন যদি তার কাজ ভালোমানের হয়।এই ব্যবসাটি ও ব্যক্তিগত দক্ষতা নির্ভর। ১০ হাজার টাকা এর মধ্যে এটি অন্যতম ইউনিক ব্যবসা।
১৭।পোষা প্রাণীর খাবারের ব্যবসা
মানুষ খুব শখ করে পোষা প্রাণী লালন পালন করে। এইসব পোষা প্রাণীদের যত্নে তারা কোন প্রকার কমতি রাখতে চায় না। তাদের সর্বদা প্রিমিয়াম কোয়ালিটি খাবার প্রদান করার প্রচেষ্টায় থাকে। আপনি যদি পোষা প্রাণীর কোয়ালিটি সম্পন্ন খাবার সরবরাহ করতে সক্ষম হন, তাহলে অনলাইন এবং অফলাইনে উভয় ক্ষেত্রেই আপনি ১০০০০ টাকার মধ্যে একটি ভাল ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন। তবে এই ব্যবসায় আপনাকে প্রাণীদের খাবার সম্পর্কে ভালো আইডিয়া থাকতে হবে।
১৮।অনলাইনে বই বিক্রি
দশ হাজার টাকার মধ্যে অনলাইনে আপনি ছোট করে একটি বইয়ের দোকান দিতে পারেন। এখানে আপনি পাইকারি বাজার থেকে কম টাকায় বই কিনে মার্কেটের দাম অনুযায়ী অনলাইনে বই বিক্রি করবেন। আপনার ভিন্ন ভিন্ন বইয়ের কালেকশনে মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে পারবেন। অনলাইনে বই বিক্রির মাধ্যমে আপনি মাসিকভাবে একটি ভালো অংকের টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার বই এর কালেকশন অবশ্যই ভালো হতে হবে।
১৯।ভাষা শিক্ষা
বিদেশ গমনে ইচ্ছুক লোকজন, কিংবা দোভাষী হিসেবে কাজ করার জন্য অনেকেরই বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন হয়। আপনার যদি এক বা একাধিক বিদেশি ভাষায় দক্ষতা থাকে তাহলে এটিকে বানিজ্যিক রুপ দিয়ে একটা ভাষা শিক্ষা একাডেমি বা স্কুল গঠন করতে পারেন। বর্তমানে মানুষ শখের জন্য, দেশের ভ্রমণ এবং কাজের জন্য ভিনদেশী ভাষা শিখে থাকে। আপনি এই সুযোগটি ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
২০।ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার
আজকাল ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফারদের দ্বারা বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফির জন্য ডাকা হয়। বিভিন্ন ভ্রমন আকর্ষণ স্থানগুলোতে আপনি ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজের সেবা দিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এখানে আপনি ছবি তুলে দেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিবেন।
এই ব্যবসাটি ও ব্যক্তিগত দক্ষতা নির্ভর, একইসাথে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা ও একটা ফ্যাক্টর। আপনি ভালো ফটোগ্রাফার কিন্তু কেউ যদি সেটা না জানে তাহলে আপনাকে কাজ কে দিবে?