তৃতীয় দফায় যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে এ বছর বন্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে কৃষকদের স্বপ্নের ফসল এখন পানির নিচে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হতাশায় দিন গুনছেন চাষিরা। তাদের রোপনকৃত বিভিন্ন শাকসবজির গাছ পচে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের মাথায় হাত। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে আবাদকৃত ফসলি জমি এখন পানির নিচে।
উপজেলার বন্যাকবলিত ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিবন্দি এ মানুষগুলো এখন নানা দুর্ভোগের শিকার। বিশেষ করে গাবসারা ও অর্জুনা এই দুটি ইউনিয়নের মানুষ এখন পানিবন্দি।
এছাড়া গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইনিয়নের নতুন নতুন এলাকা থৈ থৈ করছে বন্যার পানি।
উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কৃষক দুই ভাই গোপাল রায় ও অখিল রায় বলেন, আমরা ৩ বিঘা জমিতে অনেক আশা নিয়ে বারি পটল আবাদ করেছিলাম। প্রায় ১০ দিন হলো বন্যার পানি প্রবেশ করায় আমার পটল বাগান এখন বুক পানির নিচে। ৩ বিঘা জমিতে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পটল বিক্রি করেছি। বন্যার পানি না ঢুকলে আরো দুই মাস ফলন আসতো। এতে আরো দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। শুরুতে প্রতিমণ দুই হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। এখন দাম আরো বেড়ে গেছে। অখিল রায় ৩ বছর ধরে পটল আবাদ করছেন। এতে লাভও বেশ ভালো। স্বপ্নের ফসল পানিতে ডুবলেও সরকার থেকে এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতি পায়নি। আমরা অগ্রহায়ন মাসে চারা রোপন করেছিলাম। প্রায় এক বছর ফলন দেয়। প্রতি পিস চারা ৬ টাকা করে কিনে আনি। নাটোর থেকে এ চারা সংগ্রহ করি।
এ মৌসুমে দুইশ চারা লাগিয়ে ছিলাম, ফলনও ভালো হয়েছিল। সবজি হিসেবে পটল খেতে খুব সুস্বাদু। পাকা পটল বেশ মিষ্টি লাগে। পটলের পাশাপাশি আমরা সারা বছরই অন্যান্য শাকসবজি আবাদ করি। গোপল বলেন, গেল মাসে আমি ৭’শ কেজি পটল বিক্রি করেছি। কিন্তু বন্যায় পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হলাম।
একই গ্রামের পটল চাষি সুলতান, মুসলিম, সোহরাব, রফিকুল, তারা প্রায় ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে পটল আবাদ করেছিলেন। সাথে আবাদ করেছিলেন ধুন্দল। সব ফসলই এখন পানির নিচে। শুধু পটল ও ধুন্দলই নয়। বন্যায় চলতি মৌসুমে রোপা আমনও তলিয়ে গেছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যমুনায় পানি বৃদ্ধি হ্রাস পাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মামুন রাসেল জানান, চলতি বন্যায় উপজেলায় প্রায় ১’শ হেক্টর জমির রোপা আমানসহ বিভিন্ন শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী রবি মৌসুমে আমাদের কৃষি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা দেয়া হবে।