সেই নারী উপস্থাপকও চলে গেলেন দেশ ছেড়ে

আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম কোনো তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নারী উপস্থাপক বেহেস্তা আরঘান্দ।

চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের নারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন এই উপস্থাপক। আফগানিস্তানের বার্তা সংস্থা টোলোর হয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। সেই নারীও এখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছেন।

ইতিহাস সৃষ্টি করা ওই সাক্ষাৎকারে বেহেস্তা বেশ কিছু কড়া কথা বলেছিলেন তালেবান নেতাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ওই তালেবান সদস্যকে বলেছিলাম, আমরা আমাদের অধিকার চাই। আমরা কাজ করতে চাই।’

ওই সাক্ষাৎকার নেওয়া সহজ ছিল না বলেও জানান বেহেস্তা, ‘এই সাক্ষাৎকার নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু আমি কাজটি করেছিলাম আফগান নারীদের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে বলেছিলাম, কাউকে না কাউকে এই কাজ শুরু করতে হবে। আমরা যদি ঘরে বসে থাকি, বের না হই, তবে তালেবান বলবে, নারীরা কাজ করতে চায় না।’

এরপর থেকে আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের ভয়াবহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কারণ, ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সদ্যই কাতারি এয়ার ফোর্সের একটি ফ্লাইটে দেশত্যাগ করেন বেহেস্তা। তবে তিনি দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, তালেবান যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, দেশের পরিস্থিতি যদি বদলায়, তবে তিনি দেশে ফিরবেন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বেহেস্তা যখন ওই তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তখন বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলেন। এর দুদিন পর আবারও গণমাধ্যমে সাড়া ফেলেন তিনি। কারণ, তিনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাইয়েরও সাক্ষাৎকার নেন। টোলো নিউজের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, এই প্রথম মালালা আফগানিস্তানে কোনো টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দিলেন।

এসব সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন বেহেস্তাও। কিন্তু তালেবান ক্ষমতা দখল করায় দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পক্ষে তার যুক্তি, অনেক সাধারণ আফগান ও সাংবাদিকদের মতো তিনিও ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বেহেস্তা বলেন, ‘আমি দেশ ছেড়েছি। কারণ, লাখো আফগানের মতো আমিও তালেবানের ভয়ে ছিলাম।’

এ নিয়ে সিএনএনের কথা হয় টোলো বার্তা সংস্থার কর্ণধার সাদ মোহসেনির সঙ্গে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেহেস্তার দেশ ছাড়ার ঘটনা একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘পরিচিত সাংবাদিকেরা মোটামুটি সবাই দেশ ছেড়ে গেছেন। যারা চলে যাচ্ছেন, তাদের জায়গায় নতুনদের নিয়োগ দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেন বেহেস্তা। এরপর বেশ কয়েকটি বার্তা সংস্থা এবং রেডিওতে কাজ করেন তিনি। চলতি বছর তিনি যোগ দেন টোলো বার্তা সংস্থায়। এ প্রসঙ্গে বেহেস্তা বলেন, ‘আমি সেখানে ১ মাস ২০ দিন কাজ করেছি।’

Leave a Reply

Translate »