নয় বছর আগে ২০১২ সালে তালেবানের গুলিতে মাথায় খুলির একটা অংশ হারিয়েছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই। তালেবানের ভয়াবহতার চিহ্নস্বরূপ সেই খুলির অংশটি আজও নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী মালালা।
সেই সময় মাত্র ১৫ বছর বয়স ছিল মালালার। অবশ্য মালালার সেই দিনের কোনো স্মৃতিই নেই। এ ব্যাপারে মালালা এক ব্লগ পোস্টে বলেছিলেন, আমার শরীরে একটি গুলির ক্ষত আর অনেক অস্ত্রোপচারের দাগ রয়েছে। কিন্তু সেদিনের কোনো স্মৃতিই আমার নেই। নয়বছর পরও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু দুঃস্বপ্ন।
মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে প্রচারণা চালানোর অপরাধে ২০১২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবান সদস্যরা মালালার স্কুল বাসে উঠে তার মাথায় গুলি ছোড়ে।
মালালা বলেন, চোখ খোলার পর বুঝেছিলাম আমি বেঁচে আছি। কিন্তু কোথায় আছি সেটা বুঝতে পারছিলাম না। আমার চারদিকে ছিল কয়েকজন অপরিচিত মানুষ। তারা ইংরেজিতে কথা বলছিল।
হাসপাতালের এক নার্সের কাছ থেকে আয়না চেয়ে নিজের মুখ দেখার পর চমকে উঠেন মালালা নিজের মুখের একটা অংশ শুধু চিনতে পারছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, তার মাথার অর্ধেক অংশের চুল ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মালালা ভেবেছিলেন এটা তালেবানের কাজ। কিন্তু নার্স তাকে বলেছিল চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের জন্য অর্ধেক চুল ফেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের চিকিৎসকরা তার খুলির একটি অংশ অপসারণ করেছিলেন। সেই অংশটি আজও নিজের বইয়ের তাকে রেখে দিয়েছে মালালা। মাথায় সেই আঘাতের কারণে এখনো চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই থাকতে হয় মালালাকে।
মালালা জানান, তালেবান যখন আফগানিস্তানে লড়াই চালাচ্ছিল তখন তাদের দেওয়া ক্ষত সারানোর জন্য ষষ্ঠবারের মতো অস্ত্রোপচার চলছিল তার।
মালালা জানান, ৯ আগস্ট যখন বোস্টনে অস্ত্রোপচারের পর জেগে উঠে আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহর কুন্দুজ পতনের খবর পান মালালা।
পরবর্তী কয়েকদিনে মালালা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের চিঠি লিখেছেন, ফোন করেছেন, ফোনে কথা বলেছেন আফগানিস্তানে থাকা নারী আন্দোলনকর্মীদের সাথে। বেশ কয়েকজন নারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন মালালা।
তবে সবাইকে সাহায্য না করতে পারার সীমাবন্ধতার কথাও তুলে ধরেছেন মালালা। যারা এই সংকটে কোনো ধরনের সাহায্য পাচ্ছেন না তাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মালালা।
তিনি বলেন, আমরা হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে তাদের কথা ভেবে যাদের নাম আমরা ভুলে গেছি কিংবা জানিই না যে তারা সাহায্যের জন্য কাঁদছেন। অথচ কোনো সাহায্যই তারা পাচ্ছেন না।
মালালা তার গুলির লাগার পর গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, যখন তালেবান আমাকে গুলি করেছিল, তখন পাকিস্তানসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা আমার নাম জানতেন। বিশ্বজুড়ে মানুষের সাহায্য ছাড়া তিনি আজকের এই অবস্থানে আসতেন না বলে জানিয়েছেন মালালা। মালালার গুলি লাগার পর বিশ্বজুড়ে হাজারও মানুষ ‘আমিই মালালা’ ক্যাম্পেইন শুরু করে।
তিনি বলেন, হাজারও মানুষের আমিই মালালা প্রচারণা, হাজার হাজার চিঠি, সহযোগিতার হাত, প্রার্থনা আর মিডিয়ার প্রতিবেদন ছাড়া আমি হয়তো চিকিৎসা সেবাই পেতাম না।
আফগানিস্তানের পরিস্থিরিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মালালা বলেন, আমি নয় বছর পরও একটা গুলির ক্ষত থেকে সুস্থ হতে পারিনি। অথচ তালেবান গত চার দশকে আফগানিস্তানে লাখ লাখ গুলি চালিয়েছে।