ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী। করোনার কারনে বাসায় একেবারে লকড হয়ে আছেন চার সপ্তাহ ধরে। এর মাঝে কেবল একদিন ইন্টারভিউয়ের একটি কাজে এফডিসি গিয়েছিলেন। বাকি ২৭ দিন বাসাতেই। করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতে নিজের এবং আশপাশের মানুষের নিরাপত্তর কথা ভেবেই বাসায় থাকা হচ্ছে। গৃহবন্দি দিন কিভাবে কাটাচ্ছেন বাপ্পি? সে প্রশ্ন নিয়েই কথা হয় এ নায়কের সঙ্গে…
প্রায় একমাস হয় গৃহবন্দি আছেন। কেমন লাগছে?
এতো লংটাইম বাসায় থাকা কখনও হয়নি। মিডিয়ায় ক্যারিয়ার শুরুর পর তো আরও না। দেখা যায় শুটিং না থাকলেও দিনে দুইবেলা বাসার বাইরে বের হতাম। হয় সিনেমা নিয়ে কোন মিটিং থাকতো না হয় অন্য কোন কাজ। মোট কথা বাসা থেকে বের হতেই হতো। সেই আমিই টানা একমাস হচ্ছে বাসা থেকে বের হচ্ছি না। প্রথম ক’দিন খারাপ লাগছে। ক’দিন যেতে না যেতেই দেখি দিব্যি ঘরকুনো হয়ে গেছি । এখন বাসাতেই দিনটা উপভোগ্য করে তুলছি। যেহেতু বাসায় থাকতেই হবে। বের হতে পারছিনা তাই বিষয়টাপ্যার হিসেবে না নিয়ে উপভোগের মতো করেই নিয়েছি।
সেটা কিভাবে?
বাসায় থাকলেও এটা রুটিনের মতো করে নিয়েছি। রাতে সময়মতো ঘুমুতে যাচ্ছি। ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠে জিম করছি, নিজের কাজগুলো নিজেই করছি, আমাদের যৌথ পরিবার। সবাই বাসায় বলে একটা উৎসবের মতোই লাগছে। বাসায় ছোট্ট মা মনি আছে। ওর নাম পিদিম।। ওকে সঙ্গ দিচ্ছি। পরিবারের সবার সঙ্গে অফুরন্ত সময় আড্ডা দিচ্ছি। এসবই আমাকে বাসায় থাকতে সহযোগিতা করছে। গৃহবন্দি সময়টা উপভোগ্য করে তুলছে। এছাড়াও প্রতিদিনই কোন না কোন সিনেমা দেখছি, বই পড়ছি, হাতে থাকা বেশ কিছু সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়ছি। সবার সঙ্গেই প্রচুর ফোনে কথা বলছি। পরিচালকদের সঙ্গে ফোনে ফোনে গল্প নিয়ে আলাপ করছি
নিজে নিরাপদে থেকে সমটাকে উপভোগ করছেন। পাশে না খেয়ে থাকা অসচ্ছল মানুষদের খবর নিচ্ছেন কি?
মানুষ একা কখনও ভালো থাকতে পারেনা। পারবেও না। সবাইকে নিয়েই তাকে ভালো থাকতে হবে। ঘরে থেকে বা ঘরের বাইরে বের হয়ে যদি দেখি আমার পাশের জন না খেয়ে আছে তাহলে আমি বাসা থেকে পেটভরে খেয়েও ভালো থাকতে পারবো না। মানসিক অস্থিরতায় থাকবো। এই করোনাকালে তাই পাশের জনের খবর নিচ্ছি সাধ্য মতোই। বাসায় থাকলেও ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে নগদ অর্থ পাঠিয়েছি। এ ছাড়া শ্যামবাজারের একটি গার্মেন্টস কারখানার ৬০ জন কর্মচারীর এক মাসের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছে আমার পরিবার। একইভাবে যাত্রাবাড়ীর ৩০ জন নিম্ন আয়ের মানুষকে এক মাস খাওয়াচ্ছি। এর বাইরেও সিনেমার অনেক কলাকুশলী যারা আর্থিক অসচ্ছলতায় পড়েছেন ওদেরও সাধ্যমতো সহায়তা করেছি।
করোনা ভাইরাসের জন্য মানুষের মাঝে এক প্রকার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষের মাঝে এ সম্পর্ক কী আর স্বাভাবিক হবে?
দেখুন, স্রষ্টাতে অগাধ বিশ্বাস আমার। সৃষ্টিকর্তা যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। এই করোনাতেও হয়তো মানুষের উত্তম কিছু আছে। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষে মানুষে শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও মানসিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পেয়েছে। শারিরীক দূরত্ব বাড়ায় প্রিয় মানুষকে অনুভব করছেন। দেখা না হওয়ায় শূণ্যতা উপলব্ধি করতে পারছে। অন্যদিকে যারা পরিবারে সময় দিতে পারতো না তারাও পরিবারকে সময় দিতে পারছে। তাই আমি মনে করি এখন যে সামাজিক দূরত্ব এখন রক্ষা করা হচ্ছে এটা কোন দূরত্বই না। করোনাকাল গেলে এটা কোন প্রভাব ফেলবেনা।
এই করোনাতে তো আপনার অনেক কিছুই পিছিয়ে দিয়ে গেলো…
হুম অনেক কিছুই। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ এর মুক্তি,‘ডেঞ্জার জোন’ ছবির ডাবিং ‘সিক্রেট এজেন্ট’ এর গানের শুটিং- সবগুলোই পিছিয়ে গেছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে কথা চলছিল। করোনায় দেশের অবস্থা খারাপ হওয়ার পর আর সেসব নিয়ে এগোনো হয়নি। অচলাবস্থা কাটলে আবার সবার সঙ্গে বসবো।
ভাইরাস কি আপনার বিয়েটাও পিছিয়ে দিলো?
বিয়ে তো ঠিকই হয়নি। পিছিয়ে দেয়ার প্রশ্ন আসবে কই থেকে। তবে ভাগ্যে যখন লেখা আছে বিয়ে সে সময়েই হবে। কোন ভাইরাস বা অপশক্তিই সেটা রুখতে পারবেনা।(হাসি)
ধারণা করা হচ্ছে করোনাকালের পর সিনেমা শিল্পের উপর ধস নামবে। যেসব সিনেমা হল বন্ধ আছে তার অনেকগুলোই না খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
সিনেমা ইন্ডাষ্ট্রি কিন্তু করোনা ভাইরাস আসার আগেও ভালো অবস্থায় ছিলো না। মাত্র ৫০- ৬০ টি হল নিয়ে চলছিলো এ শিল্প। সেগুলোও যায় যায় অবস্থায় ছিলো। আমি মনে করি করোনা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হলে সিনেমা শিল্পে একটা ধস নামলেও সে ধস থেকে নতুন কিছু শুরু হবে। আমরাও নতুন এক উদ্যোম নিয়ে সামনে হাটবো।সুত্রঃসমকাল