রূপের চর্চার কত মাধ্যমেই রয়েছে । তবে সে যাই হোক সামান্য যত্নে চেহারা হয়ে ওঠে সতেজ, পরিপাটি, আকর্ষণীয়। আর আজকাল অনেকেই রাসায়নিক প্রসাধনী বাদ দিয়ে ঝুঁকছেন প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া পদ্ধতির দিকে।
ভারতীয় উপমহাদেশের সৈনিকরা প্রাচীনকাল থেকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করে আসছে। সৌন্দর্যচর্চায় এর ভূমিকাও ঠিক তেমনটাই পুরনো।কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনো রূপচর্চায় শঙ্খের গুঁড়া কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানেন না বললেই চলে। শঙ্খতে রয়েছে জিংক অক্সাইড, যেটি রোদ থেকে বাঁচায়। কালচে ছোপের হাত থেকে বাঁচাতেও এটি দারুণ কার্যকর। সব ধরনের ত্বকের জন্য হলেও ধরন অনুযায়ী প্যাক তৈরি ও প্রয়োগে ভিন্নতা থাকবে। জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ইরফান উল্লাহ জানিয়েছেন, রূপচর্চার সামগ্রী হলেও যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, শঙ্খগুঁড়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধান থাকা ভালো। পাউডার–জাতীয় হলেও যেহেতু এই গুঁড়া শক্ত শামুকের খোল থেকে তৈরি, ত্বকে ব্যবহারের সময় জোরে ঘষাঘষি না করাই ভালো। সামান্য অসাবধানতায় ত্বক কেটে যেতে পারে। চিকন ছিদ্রের চালুনি দিয়ে চেলে নিলে কিছুটা নিরাপদ হতে পারে। নাজুক ত্বকের ক্ষেত্রে কখনো কখনো জ্বালাপোড়া, র্যাশ, ফুসকুড়ি হতে পারে। কারও কারও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ও প্রদাহ দেখা দিতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে ত্বক ফুলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। এমন হলে শঙ্খচূর্ণ ব্যবহার বন্ধ করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী শঙ্খচূর্ণ দিয়ে কীভাবে রূপচর্চা করা যায় জানালেন তারই সাতসতেরো। পাউডারের মতো তুলির সাহায্যে শঙ্খচূণ ব্যবহার করা যায়। আবার কখনো অন্য উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করে প্যাক বানিয়ে লাগিয়ে রাখলেও ত্বকের জন্য উপকারী। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে শঙ্খগুঁড়া ব্যবহার করা যায়। বাতাস ঢুকবে না, এমন কৌটায় সংরক্ষণ করে ফ্রিজে রেখে দুই থেকে তিন দিন অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। ত্বকের ধরন বুঝে নানাভাবে শঙ্খচূর্ণ ব্যবহার করা যায়, তারই কিছু পদ্ধতি রইল পাঠকদের জন্য।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য
যাঁদের ব্রণ ও ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা ২ টেবিল চামচ তুলসী পাতার রস, ১ টেবিল চামচ শঙ্খের গুঁড়া মিশিয়ে নিন ভালোভাবে। এবার সামান্য বাদামি চিনি দিয়ে গুলে সারা মুখে লাগাতে হবে। ৫ মিনিট পর একটু ঘষে তুলে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকে সপ্তাহে ১ দিন ও ছোট দানা বা ব্রণযুক্ত ত্বকে সপ্তাহে প্রতিদিন প্যাকটি লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য
শুষ্ক ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে যায়। যাঁদের ত্বকে কালচে ছোপ হয়েই গেছে, এই প্যাক তাঁদের জন্য। মাত্র ২ সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহারে কালচে ছোপ হালকা করে ফেলতে প্যাকটির জুড়ি মেলা ভার। ১ টেবিল চামচ শঙ্খচূর্ণ, ২ চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ৪-৫ ফোঁটা কাঠবাদামের তেল, ভিটামিন সি ট্যাবলেট বা ১টি সিভিট গুঁড়া ও সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
সব ধরনের ত্বকের জন্য
১ টেবিল চামচ শঙ্খগুঁড়া, লেবুর খোসাবাটা আধা চা-চামচ, ৩-৪ ফোঁটা গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগান। ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রতিদিন ১ বার করে প্যাকটি লাগালে রোদের প্রভাবে কালচে ভাব দূর হয়ে যায়।
সারা শরীরে লাগানোর জন্য
১ কাপ শঙ্খগুঁড়ার সঙ্গে ১ কাপ মসুরের ডালের বেসন, ১টি ডিম ও লেবুর রস মিশিয়ে সারা শরীরে লাগিয়ে রাখতে হবে মিনিট দশেক। তারপর ছোট রুমাল বা টাওয়েল ভিজিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন প্যাকটি লাগালেই যথেষ্ট। এই প্যাক লাগালে সাবান দেওয়ার দরকার হবে না। গলা, ঘাড়সহ শরীরের যেসব স্থানে কালচে ভাব হয়েছে সেটি তুলে ফেলবে নিয়মিত ব্যবহারে।
রোদ থেকে বাঁচতে
সমান পরিমাণ শঙ্খের গুঁড়া, কেওলিন পাউডার ও মুলতানি মাটির গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। বাইরে যাওয়ার সময় নিয়মিত ব্যবহারে রোদে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়।
কোথায় পাওয়া যায়
নকলের ভিড়ে আসল শঙ্খচূর্ণ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ, বড় ও বিশ্বস্ত জায়গা শাঁখারীবাজার। এখানে ১০০ টাকা কেজি দরে গুঁড়া বিক্রি করছে মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয়। ২০ ও ৫০ টাকা দরে প্যাকেট আকারে বিক্রির ব্যবস্থাও রেখেছে তারা। এ ছাড়া জয় গুরু শঙ্খ ভান্ডার, বিধান শঙ্খ ভান্ডারসহ শাঁখা তৈরি করে, এমন সব দোকানেই মিলবে এটি। এ ছাড়া স্বামীবাগ লোকনাথ মন্দিরের পাশে জয় বাবা স্টোরেও মিলবে শঙ্খগুঁড়া। সত্যিকারের শঙ্খগুঁড়া চেনার দারুণ উপায় হলো খাঁটি শঙ্খগুঁড়া ত্বকে লাগালে সামান্য গরম অনুভূত হয়, কিন্তু নকল গুঁড়াতে একেবারেই সেটা অনুভব করা যায় না।একই জায়গার লোকনাথ সামগ্রীতে সেটি পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সুপারশপেও খুঁজলে মিলবে শাঁখের গুঁড়া।
তানজিনা আকতারী