লেখাপড়ার কারনে দূর দৃষ্টি হাড়াবে নতুন প্রজন্ম

আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ একটানা মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবলয়েট স্কিনের ইপর তাকিয়ে থাকলে কমে যায় চোখে দৃষ্টি শক্তি। এমনটাই মনে করেন চিকিৎসক এবং গবেষকরা। সম্প্রতি করোনার কারনে ঘর বন্দি মানুষের বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখার একমাত্র মাধ্যম ইন্টারনেট। যার জন্য প্রয়োজন মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবলয়েটের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস। শুধু তাই নয় দৈনন্দিন জীবনে মানুষ এসব স্কিনের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এর ফলে চোখের দৃষ্টি একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। যাকে বলা যেতে পারে কাছের দৃষ্টি। কিন্তু চোখ ভালো রাখার জন্য কাছের এবং দূরের দুই দৃষ্টিরই জরুরি।

বর্তমানে ছোটদের চোখে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের সমস্যা। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনাকালীন সময়ে মায়োপিয়ার  মতো সমস্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ছোটদের চোখে এই সমস্যা প্রকট আকারে দেখা গেছে। চিকিৎসকরা এর নাম দিয়েছেন ‘কোয়ারান্টিন মায়োপিয়া’।

চীনে প্রায় এক লক্ষ শিশুর মাঝে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ছয় থেকে আট বছরের শিশুদের মধ্যে মায়েপিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। এছাড়া ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে শিশূদের চোখে মায়োপিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন গুণ।

চিকিৎসকরা বলেছেন, দীর্ঘক্ষণ স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং দূরের কিছু না দেখার কারনে চোখের দৃষ্টিশক্তি তৈরি হতে বাধা পাচ্ছে। আট বছর পর্যন্ত শিশুদের চোখের গঠনগত পরিবর্তন হতে থাকে। এই সময় যদি তারা একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থির থাকে তাহলে তারা দূরের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে। এমনকি বড় হওয়ার পরেও তাদের মধ্যে এই সমস্যা থেকে যাবে।

ব্রিয়ান হোলডেন ভিশন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, একুশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছে, বিশ্বের পাঁচ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ কেবলমাত্র কাছের জিনিস দেখতে পাওয়ার সমস্যায় ভুগবে। গত এক দশকে উন্নত দেশে এই সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো, সমীক্ষা উঠে এসেছে, মোবাইল স্কিনে পড়াশোনার সঙ্গে মায়োপিয়ার সরাসরি যোগ আছে। যারা বেশি পড়াশোনা করেছেন, তাদের মায়োপিয়ার প্রবণতাও বেশি৷ 

মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপথালমোলজির ডিরেক্টর নিকোল এটার জানিয়েছেন, এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো খুব ছোট বয়স থেকে কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা৷ মানুষের বাইরে যাওয়া এমনিই কমে গিয়েছে৷ রাস্তায় গিয়ে, মাঠে গিয়ে সুদূরের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস মানুষের কমে গিয়েছে৷

মায়োপিয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায়:

মায়োপিয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায় হলো, যে কোনো কাজ করার সময় মাঝে মাঝেই একটু দূরের দিকে তাকানো। এটা অভ্যাস করে ফেলতে হবে। খুব মন দিয়ে মোবাইল বা ট্যাবলেটে কাজ করার সময়ও মাঝে মাঝেই দূরের দিকে তাকাতে হবে।

সূর্যের আলোও খুব জরুরি। দিনের কিছুটা বাইরে কাটাতেই হবে। সূর্যের আলো আইবলের গ্রোথ ভালো করে। স্ক্যানডেনেভিয়ার একটি সমীক্ষা বলছে, অন্ধকার মরসুমে মায়োপিয়া বাড়ে। আলো থাকলে মায়োপিয়ার সমস্যা অনেক কমে যায়।

চিকিৎসকদের বক্তব্য হলো, তিন বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো স্ক্রিন শিশুদের চোখের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। চার থেকে ছয় বছরের শিশুদের দিনে তিরিশ মিনিটের বেশি স্ক্রিনের দিকে তাকানো ঠিক নয়। কিন্তু বিশেষ করে করোনাকালে সেই হিসেব সম্পূর্ণ বদলে গেছে। অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। এর থেকে নিস্তার পাওয়ার একটাই সুযোগ।

তা হলো, সুযোগ পেলেই বাইরে যাওয়া। খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকানো।

Leave a Reply

Translate »