বর্তমানে সকল কাজে যোগাযোগে দক্ষ লোকের কদর অনেক বেশি। যে কোন সেক্টরে দক্ষাতা বাড়াতে কিছু পরামর্শ অনুসরণ করতে পারেন ।
বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে ধারণা রাখুন
কেউ ভালো লেখেন, কেউ ভালো বলেন, কেউ ভালো শ্রোতা, কেউবা দারুণভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানেন (প্রেজেন্টেশন দেন)। যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশের জন্য সব রকমের যোগাযোগেই নিজেকে সাবলীল ও দক্ষ করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে বলা ও লেখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোনো কিছু বুঝে পড়া এবং মন দিয়ে শোনাও খুব জরুরি। আপনি যা বলছেন, তা আরেকজন বুঝতে পারছে কি না, কিংবা আপনি অন্যের কথা বুঝতে পারছেন কি না—দুটিই যোগাযোগ–দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
পড়তে হবে অনেক
খুব সরলভাবে বলা যায়, যাঁরা অনেক পড়েন, তাঁরা অনেক বিষয় সম্পর্কে খোঁজ রাখেন। কাগুজে বই-সাময়িকী-সংবাদপত্র হোক, কিংবা ইন্টারনেটে ই-পত্রিকা, ই-সাময়িকী বা পেশা-বিজ্ঞান-ব্যবসাবিষয়ক কোনো পোর্টালই হোক না কেন, নিয়মিত চোখ রাখলে সাম্প্রতিক সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য যখনই কোনো লেখা পড়ছেন, মাথায় ‘ফাইভ ডব্লিউ-এইচ’ নামের সূত্রটি গেঁথে নিতে হবে। ফাইভ ডব্লিউ-এইচ হলো হু, হোয়াট, হোয়্যার, হোয়েন, হোয়াই ও হাউ। লেখাটি লেখক কেন লিখেছেন, কার জন্য লিখেছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, কোন কোন বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে, আপনি লিখলে কীভাবে লিখতেন—এসব মাথায় দ্রুত এঁকে ফেলতে হবে। যত বেশি পড়বেন, যত জানবেন, কথা বলার সময় আপনি তত আত্মবিশ্বাস পাবেন। জানার ঘাটতি থাকলে বুঝিয়ে বলা ও শুনে বোঝা—দুটি কাজই কঠিন হয়ে যায়।
অনুসরণ করতে হবে
যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য বক্তৃতা (পাবলিক স্পিকিং) বা নিজের ভাবনা উপস্থাপন করার (প্রেজেন্টেশন) কৌশল জানতে হবে। প্রেজেন্টেশনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানার বেশ আলোচিত একটি বই হচ্ছে লেখক কারমাইন গ্যালোর দ্য প্রেজেন্টেশন সিক্রেটস অব স্টিভ জবস বইটি। বইটিতে অ্যাপল কম্পিউটার ইনকরপোরেটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের বিভিন্ন ব্যবসা–সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে চাইলে যেকোনো বিখ্যাত ব্যক্তির কৌশলগুলো সহজে অনুসরণ করতে পারেন। ইউটিউবে পৃথিবীখ্যাত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা আর প্রভাবশালীদের বক্তব্য দেওয়ার কৌশল নিয়ে অনেক ভিডিও দেখতে পাবেন। এ ছাড়া পড়তে পারেন ক্রিস অ্যান্ডারসনের লেখা টেড টক: দ্য অফিশিয়াল টেড গাইড টু পাবলিক স্পিকিং।
চর্চা করা শিখতে হবে
ক্রিকেট-ফুটবল-ব্যাডমিন্টন, কিংবা অন্য যেকোনো খেলোয়াড়দের দেখুন, তাঁরা সব সময় চর্চার মধ্যে থাকেন। যোগাযোগ–দক্ষতাও প্রতিদিন চর্চার মাধ্যমে বিকশিত হয়। তাই চর্চার দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। সাধারণ একটি ই–মেইল লেখা থেকে শুরু করে বক্তৃতা দেওয়া—প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিজের স্বকীয়তা রাখতে হবে। আপনি হয়তো বন্ধুকে ই–মেইল পাঠাচ্ছেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন, এসব ক্ষেত্রেও দক্ষ যোগাযোগের চর্চা করুন। টোস্টমাস্টার্স কিংবা টেডটকের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ–দক্ষতার অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মিত চর্চার সুযোগ নিতে পারেন।
ভুল থেকে শেখা যায়
যেকোনো কিছুর শুরুর দিকে দুর্বলতা থাকে, ভুল থাকে। ইংরেজিতে কথা বলা কিংবা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় ভুল হওয়া স্বাভাবিক। ভুল থেকেই শিখতে হবে। বিখ্যাত বক্তারা তাঁদের বক্তব্য শেষে দর্শকদের কাছ থেকে ভুলভ্রান্তি কী ছিল, তা জানার চেষ্টা করেন। ভুল দেখে অন্যরা হাসতে পারে, কটু কথা বলতে পারে—এসব নিয়ে মন খারাপ করলে চলবে না। একটি ডায়েরিতে নোট নেওয়ার মাধ্যমে যেসব ভুল হচ্ছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।
শরীরী ভাষা বা ‘ননভার্বাল’ যোগাযোগ
যেকোনো যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনি শুধু বলে গেলে হবে না। লেখার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনি যা বলছেন বা লিখছেন, সেটা যার উদ্দেশে বলা বা লেখা হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারছেন কি না, তা আপনাকে জানতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝতে হবে, অন্যের শরীরী ভাষা পড়তে জানতে হবে। ধরুন, আপনি দুর্দান্ত একটি আইডিয়া বা ধারণা উপস্থাপন করছেন। শ্রোতার শরীরী ভাষা থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন কি না কিংবা বুঝতে পারছেন কি না। মুখের হাসি, চোখে চোখে তাকানো (আই কন্টাক্ট), হাতের অবস্থান কিংবা নড়াচড়া—এসবও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কথা নয়, শরীরী ভাষাও অন্যের সঙ্গে আপনার সফল যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
জানতে হবে নিজেকে
প্রবাদে বলা হয়—নো দাইসেলফ, নিজেকে জানো। আমি কেমন, আমার ব্যক্তিত্ব কেমন, কোথায় আমার শক্তি বা দুর্বলতা, আমার যোগ্যতা কী, কোন কোন বিষয়ে আমি দক্ষ, এগুলো জানতে হবে। যোগাযোগ–দক্ষতা ধীরে ধীরে বাড়বে, যদি আপনি নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে মনোযোগী হন। ইতিবাচক মনোভাব, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল, নিজের শক্তির জায়গাগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
পরামর্শ নিন
যোগাযোগ–দক্ষতার কৌশল আয়ত্তের জন্য আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি যে ক্ষেত্রে পেশা গড়তে চান কিংবা যে বিষয়ে পড়ছেন, তা সম্পর্কে কী কী যোগাযোগ–দক্ষতা প্রয়োজন, তা জানতে পরামর্শ নিন। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য কোচ বা মেন্টর নির্বাচন করে তাঁর কাছ থেকে হাতে–কলমে শেখার চেষ্টা করুন। ‘কথা বলা আবার শেখার কী আছে’—এমনটা ভাববেন না।
সুযোগ কাজে লাগান
কথা বলা, লেখা বা নিজের ভাবনা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আপনি যদি খুব আত্মবিশ্বাসী না-ও হন, তবু এসবের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। বিতর্ক, বিজনেস কেস কম্পিটিশন, রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা—এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন না। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।
নেতৃত্ব বিকাশ করুন
যোগাযোগ–দক্ষতা আপনাকে যেকোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ করে দেবে। কোনো দলের নেতা বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হওয়ার পর কেউ যোগাযোগ–দক্ষতা প্রকাশ করে না। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশে যেকোনো ব্যক্তিই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষানবিশ থেকে কর্মকর্তা হতে পারেন, দলের সাধারণ সদস্য থেকে হয়ে চলে যেতে পারেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নেতৃত্বের জায়গায়।
আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন :
যখন কোন একটি সমস্যাকে আপনার বোঝা হিসেবে মনে হয় তখন সেটিকে এড়িয়ে চলুন। আপনাকে বুঝতে হবে যে জীবনে সমস্যা অনিবার্য। যত তাড়াতাড়ি আপনি এটি মেনে নিতে পারবেন তত সহজে যেকোন সিদ্ধান্তহীনতাকে মোকাবিলা করতে পারবেন।
যেকোন পরিস্থিতিতে প্রথমেই আসা নেতিবাচক মনোভাব থেকে দূরে থাকুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি সকালে আপনার গাড়ী চালু না হয় তবে আপনার প্রথম চিন্তাটিই হবে গাড়িটি মেরামত করতে কত খরচ হবে । সেসময় প্রকৃত সমস্যাটির উপর মনোযোগ দিন: “গাড়িটি চালু হবে না।”
প্রকৃত নেতিবাচক পরিণতিগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন – সবচেয়ে খারাপ কি ঘটতে পারে। সমস্যাটির সত্যিকারের প্রভাব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে আপনার মনে হতে পারে যে সমস্যাটিকে খারাপ বলে মনে হচ্ছে ততটা খারাপ না।