সিনেমায় অভিনয় ও নায়িকা হওয়ার কথা বলে কেবল পেটিকোট পরা দৃশ্য নিয়েছেন । এরপর আর খবর নেই। এমন প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন বলে থানায় জিডি করেছেন অভিনেত্রী নুপুর হুসাইন রানী।
চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম ‘নারী’ এবং কবি কামাল চৌধুরীর ‘যুদ্ধশিশু’ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘মায়া – দ্য লস্ট মাদার’। মাসুদ পথিক পরিচালিত এই সিনেমাটির একটি বিশেষ অংশে বীরাঙ্গনা চরিত্রের জন্য অভিনয় করেন নুপুর হুসাইন রানী। ছবিটির টিজার প্রকাশের পর এই অভিনেত্রী নির্মাতার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করেছেন (জিডি নম্বর ৩৩৫)।
নুপুর থানার জিডিতে ও নিজের ফেসবুকে লিখে জানিয়েছেন, পোস্টারে তার ছবি ব্যবহার করা হলেও তার নাম ব্যবহার করা হয়নি। শরীরের অন্যান্য অংশ দেখানো হলেও তার মুখ দেখানো হয়নি। গল্পের প্রয়োজনে একটি দৃশ্যে ব্লাউজ খুলে শুধু পেটিকোট পরে শট দিয়েছেন। কিন্তু অভিনয় করাবেন বলে নির্মাতা তাকে অভিনয়ের সুযোগ দেননি। অর্থাৎ তার সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে মাসুদ পথিকের নামে থানায় জিডি করেছেন নুপুর হুসাইন রানী।
নুপুর আরও জানান, ‘‘২০১৮ সালে সহকারী পরিচালক আরিফ সিদ্দিকী আমাকে একটি শুটিংয়ে দেখেন। তিনি আমাকে হেঁটে দেখাতে বলেন। আমি হেঁটে দেখাই। দৃশ্যটি ভিডিও করে নিয়ে যান। এর দু’একদিন পরে তিনি আমাকে বলেন- ‘মায়া’ নামে একটি সিনেমা বানাচ্ছি। খুব ভালো একটা চরিত্র আছে, তোমার সঙ্গে যায়। তুমি চরিত্রটা করতে পার। আমি জানতে চাইলাম- কী রকম? তিনি বলেন- তোমার কিছু শরীরের অংশ দেখাতে হবে। সেখানে তোমার অভিনয়ের জায়গায়ও আছে। আমি তখন তাকে ‘ভেবে পরে জানাবো’ বলে চলে আসি।’’
তিনি জানান, ‘এরপর তিনি বিটিভির একটি কাজে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কিছু দৃশ্য ছিল। নুপুর বলেন- সেই দৃশ্য দেখে পরিচালক মাসুদ পথিক আমাকে ফোন করে বলেন, তোমার ক্যামেরা ফেস ভালো! তুমি চরিত্রটা করো। আমি বললাম, আপনি যে চরিত্রের কথা বলছেন তা করতে পারব না। কারণ আমি অভিনয় করতে এসেছি, বডি শো করতে পারব না। তখন তিনি বললেন- আমার গল্পে এটি আছে। দৃশ্যটি টেক করতেই হবে। এরপর যেদিন শুটিং ডেট, সেদিন আবার আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, তুমি কাজটি করো। এত করে বলার পর পারিশ্রমিক কত হবে- এসব কিছু না ভেবেই আমি সেদিন শুটিং স্পটে চলে গিয়েছিলাম। সেদিন শাড়ি পরেছিলাম। আমাকে বলা হলো- ব্লাউজ খুলে শট দিতে হবে। আমি কাজপাগল, তাই কোন কিছু চিন্তা করিনি। কারণ সে আমাকে বলেছে- নায়িকা বানাবে। পরিচালকের অতীত ভালো শুনে কাজগুলো করতে রাজি হয়েছি। সেদিন শুধু পেটিকোট পরে শট দিয়েছি। ওইদিন ক্যামেরার সামনে আমাকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়নি। এরপর পরিচালক বলল, দু’দিন পরে আবার কল দিব। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই দু’দিনের অপেক্ষা আমার শেষ হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে মাসুদ পথিক গণমাধ্যমকে বলেন, পাকিস্তানি একটা ক্যাম্পে ১৫ জন নির্যাতিতা নারীর দৃশ্য ধারণ করেছি। এদের একেকজনকে একেকভাবে শুট করেছি। আর এগুলো তো জুনিয়র শিল্পী (নুপুর)। এদের সঙ্গে আমি কথা বলিনি। আমার প্রধান সহকারী কথা বলেছেন। নুপুর কার দ্বারা প্ররোচিত হয়েছে আমি জানি না। এখানে তিন চারটা মেয়েকে একই মুডে শুট করেছি। পরে কোলাজ করেছি। এখানে একজনের ফেইস ইউজ করেছি, একজনের হাত ইউজ করেছি। আমি তো কাউকে কথা দেইনি তোমার ফেইস ইউজ করব।
‘মায়া – দ্য লস্ট মাদার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন মুমতাজ সরকার (ভারত), প্রাণ রায়, জ্যোতিকা জ্যোতি, দেবাশিষ কায়সার, সৈয়দ হাসান ইমাম, ঝুনা চৌধুরী, নারগিস আক্তার, লীনা ফেরদৌসী, ড. শাহাদাত হোসেন নিপু, আসলাম সানী ও মজিদসহ অনেকে। ব্রাত্য ক্রিয়েশন প্রযোজিত এই সিনেমাটিতে গান করেছেন ইমন চৌধুরী, বেলাল খান, কোনাল, ঐশী, পুজা ও মমতাজ।